জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার সভারচর দারুচ্ছুন্নাত দাখিল মাদরাসায় দীর্ঘ দিন ধরে প্রক্সি শিক্ষক দিয়ে চলছে ক্লাস। ওই মাদরাসার সহকারী শিক্ষক মো.মশিউর রহমানের স্থলে প্রক্সি শিক্ষক হিসেবে বাকী বিল্লাহ নামে একজনকে দিয়ে ক্লাস নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। মাদরাসার সহকারী শিক্ষক মশিউর রহমান মাদরাসায় যান না। তার স্থলে নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছেন বাকী বিল্লাহ নামের ওই ব্যক্তি।
গত বৃহস্পতিবার (৭সেপ্টেম্বর) সকালে মাদরাসায় গিয়ে মশিউর রহমানকে পাওয়া যায়নি। এদিকে সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে সটকে পড়েন প্রক্সি শিক্ষক বাকী বিল্লাহ।
অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক মো.মশিউর রহমান গোয়ালেরচর ইউনিয়নের আকন্দপাড়া এলাকার মৃত মুছা আকন্দের ছেলে এবং গোয়ালেরচর আকন্দপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি। এদিকে প্রক্সি শিক্ষক বাকী বিল্লাহও একই এলাকার বাসিন্দা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সভারচর দারুচ্ছুন্নাত দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক মো.মশিউর রহমান একজন মামলাবাজ মানুষ। তিনি বিভিন্ন মামলা নিয়ে সব সময় ব্যস্ত থাকেন। যার ফলে তিনি মাদরাসায় যান না। তার স্থলে প্রক্সি হিসেবে কাজ করেন বাকী বিল্লাহ নামে একজন। তিনি সময় করে একদিন এসে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে যান। ওই শিক্ষক বসে বসে শুধু বেতন নেন এবং প্রক্সি শিক্ষক বাকী বিল্লাহকে মাস শেষে কিছু টাকা দেন। অনেক সময় মাদরাসায় অপরিচিত কেউ আসলে ওই প্রক্সি শিক্ষক নিজেকে মশিউর রহমান হিসেবেই পরিচয় দেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সভারচর দারুচ্ছুন্নাত দাখিল মাদরাসায় একটি ভবন ও দুটি টিনসেড ঘর। ঘরগুলোতে মাদরাসার প্রশাসনিক কার্যক্রম, শিক্ষক মিলানায়তন ও শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেয়া হয়। এদিন কয়েকজন শিক্ষক মাদরাসায় ক্লাস নিচ্ছিলেন। তবে অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক মশিউর রহমান মাদরাসায় নেই। সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে সটকে পড়েন প্রক্সি শিক্ষক বাকী বিল্লাহ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই গ্রামের একজন বাসিন্দা বলেন, ‘মশিউর রহমান একজন মামলাবাজ প্রকৃতির লোক। দীর্ঘদিন যাবৎ তিনি কখনো মাদরাসায় ক্লাস নেন না। তিনি শুধু বসে বসে বেতন নেন এবং বাকী বিল্লাহকে মাসে কিছু টাকা দেন। আর সময় করে একদিন মাদরাসায় গিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে আসেন। মাদরাসায় যদি বাহিরের কেউ আসেন তাহলে বাকী বিল্লাহ নিজেকে মশিউর রহমান বলে পরিচয় দেন।’
প্রক্সি শিক্ষক বাকী বিল্লাহ মোবাইল ফোনে জানান, বিগত ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে তিনি বদলি শিক্ষক হিসেবে মাদরাসায় ক্লাস নিচ্ছেন। প্রতি মাসে তাকে কিছু টাকা সম্মানী হিসেবে দেওয়া হয়। তার বাড়ি মাদরাসার কাছে হওয়ায় এবং তার কোনো কাজ না থাকায় সহকারী শিক্ষক মশিউর রহমানের পরিবর্তে মাদরাসায় ক্লাস নেন তিনি।
তবে এ কাজটি নিয়মের মধ্যে পড়ে কিনা এমন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে মোবাইল ফোন কেটে দেন প্রক্সি শিক্ষক বাকী বিল্লাহ।
অভিযুক্ত শিক্ষক মো.মশিউর রহমান জানান, ‘আমার গ্রামে কয়েকজন শত্রু আছে। যারা আমার নামে বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দিয়ে থাকে। আমি যে মাদরাসায় ক্লাস নেই না বিষয়টি এমন না। যেদিন আমার কাজ থাকে সেই দিন বাকী বিল্লাহ ক্লাস নেয়। এই কাজটি অনেক দিন থেকে হয়ে আসছে।’
এ বিষয়ে জানতে মাদরাসাটির সুপারিনটেনডেন্ট মো.মোশাররফ হোসাইনের সঙ্গে দেখা করতে ৭ সেপ্টেম্বর মাদরাসায় গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। মোবাইলে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তার সাড়া পাওয়া যায় নি।
এ প্রসঙ্গে মাদরাসার সহকারী সুপারিনটেনডেন্ট মো.মমতাজ উদ্দিন বলেন, ‘মো.মশিউর রহমান এই মাদরাসার মেধাবী ছাত্র ছিল। পরে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তবে তিনি ক্লাসে খুব কম আসেন। তার বদলি শিক্ষক বাকী বিল্লাহ মূলত ক্লাস নেন। আমরা এতটুকু জানি।’
বদলি শিক্ষক দিয়ে ক্লাস নেয়া নিয়মের মধ্যে পড়ে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মো.মমতাজ উদ্দিন বলেন, ‘এ বিষয়টি সুপারিনটেনডেন্ট সাহেব বলতে পারবেন। আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারব না।’
এসব বিষয়ে ইসলামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘এই বিষয়টি আমি জানি না । কেউ কোনো অভিযোগ করেন নি। যদি কেউ অভিযোগ করে তাহলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’