আর কে চৌধুরীপ্রতি তিন শিক্ষার্থীর জন্য এক এমপিও শিক্ষক

এনামুল হক প্রিন্স |

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর আর কে চৌধুরী কলেজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। প্রতিষ্ঠানটি পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী পাচ্ছে না। বর্তমানে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানটিতে এ স্তরের শিক্ষার্থী আছেন সর্বসাকুল্যে ১৩০ জন। কিন্তু এদের পড়াতে প্রতিষ্ঠানে এমপিওভুক্ত শিক্ষক আছেন ৪৪ জন। অর্থাৎ প্রতি তিনজন শিক্ষার্থীর বিপরীতে এমপিও (বেতন-ভাতার সরকারি অংশ) ভোগ করছেন একজন শিক্ষক। 

মোট শিক্ষার্থীর ৯৫ জন চলতি বছর প্রতিষ্ঠানটিতে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছেন। বাকিরা দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছেন। আর ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১০ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষা দিলেও পাস করেছেন মাত্র ২ জন। কলেজে পাঁচটি বিষয়ে অনার্স কোর্স চালু থাকলেও সর্বসাকুল্যে শিক্ষার্থী আছেন ১৬ জন। 

প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-কর্মচারীরা বলছেন, এক সময় প্রতিষ্ঠানটিতে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী থাকলেও অবৈধ নিয়োগ পাওয়া অধ্যক্ষ মো. ইসতারুল হক মোল্লার অনিয়ম ও উপাধ্যক্ষ রায়হানুল ইসলামের দুর্নীতি প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ করায় তিনজন শিক্ষককে অবৈধভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। 

শিক্ষকরা ইতোমধ্যে এসবের প্রতিকার চেয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে আবেদন জানিয়েছেন। সে পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তদন্ত করেছে পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর (ডিআইএ)। সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে সংস্থাটি। 

প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিষ্ঠানের উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ে মোট শিক্ষার্থী ১৩০ জন। এবার দ্বাদশ শ্রেণিতে ক্লাস করছেন ৩০ জন শিক্ষার্থী। কাগজে কলমে ২৫০ জন শিক্ষার্থী দেখানো হলেও ২৫-২৬ জন নিয়মিত ক্লাসে আসছেন। আর একাদশ শ্রেণিতে নতুন ভর্তি হয়েছেন ৯৫ জন শিক্ষার্থী। তাদের কয়জন শেষ পর্যন্ত এ প্রতিষ্ঠান থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেবেন সে বিষয়ে নিশ্চিত নন শিক্ষকরাও। 

তারা আরও জানান, উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানটিতে মোট শিক্ষক আছেন ৫১ জন। তাদের মধ্যে ৪৪ জন এমপিওভুক্ত। প্রতিষ্ঠানটিতে পাঁচটি বিষয়ে অনার্স কোর্স খোলা আছে, এসব বিষয়ে শিক্ষার্থী আছেন মোট ১৬ জন।

শিক্ষকরা জানান, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে এইচএসসি পরীক্ষায় প্রতিষ্ঠানের ১৩৩ জন শিক্ষার্থী অংশ নিলেও পাস করেছেন মাত্র ৯১ জন। এদের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১০ জন শিক্ষার্থী এইচএসসিতে অংশ নিলেও কৃতকার্য হয়েছেন মাত্র ২ জন। বিজ্ঞান বিভাগের দশ জন শিক্ষক এমপিওভুক্ত হলেও তারা ঠিকমতে দায়িত্ব পালন করছেন না। তারা বেশিরভাগ সময় দলাদলি ও প্রভাব বিস্তারে ব্যস্ত থাকেন। 

এসব অভিযোগ ও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সংখ্যার পতন নিয়ে মন্তব্য জানতে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ মো. ইসতারুল হকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি। ক্যান্সার আক্রান্ত অধ্যক্ষ চিকিৎসার জন্য ভারতে অবস্থান করছেন। তাই তার বক্তব্য জানা যায়নি।
শিক্ষার্থী সংখ্যার পতন নিয়ে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির উপাধ্যক্ষ মো. রায়হানুল ইসলামও কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে, শিক্ষার্থী সংখ্যা যে কমছে তা স্বীকার করেন তিনিও। তিনি বলেন, দ্বাদশ শ্রেণিতে ২৫০ জন ভর্তি হলেও তা কমেছে। শেষ পর্যন্ত কতজনকে টেস্ট পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করানো যাবে তা সুস্পষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে, একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষায় ১৯০ জন অংশ নিয়েছিলেন।

তবে, অনিয়ম ও প্রতি তিনজন শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষকের এমপিওভোগ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি উপাধ্যক্ষ। তিনি বলেন, আমাদের অধ্যক্ষ মহোদয় আগামী সপ্তাহে দেশে ফিরবেন বলে আশা করছি। তিনি ফিরে এলে এ বিষয়ে মন্তব্য করতে পারবেন। 

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ফল পরিবর্তনের আশ্বাসে আর্থিক প্রতারণা, সতর্ক করলো কারিগরি বোর্ড - dainik shiksha ফল পরিবর্তনের আশ্বাসে আর্থিক প্রতারণা, সতর্ক করলো কারিগরি বোর্ড সচিবদের একগুচ্ছ নির্দেশনা প্রধান উপদেষ্টার - dainik shiksha সচিবদের একগুচ্ছ নির্দেশনা প্রধান উপদেষ্টার অধ্যাপক পদকে তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করার দাবি মর্যাদা রক্ষা কমিটির - dainik shiksha অধ্যাপক পদকে তৃতীয় গ্রেডে উন্নীত করার দাবি মর্যাদা রক্ষা কমিটির নবীন সরকারি কর্মকর্তাদের সৎ থাকার আহ্বান জানালেন শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha নবীন সরকারি কর্মকর্তাদের সৎ থাকার আহ্বান জানালেন শিক্ষা উপদেষ্টা প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি - dainik shiksha প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা পাচ্ছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব - dainik shiksha জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা পাচ্ছেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব সংযুক্ত ইবতেদায়ি শিক্ষকদের কপাল খুলছে - dainik shiksha সংযুক্ত ইবতেদায়ি শিক্ষকদের কপাল খুলছে মধ্যরাতে ববি-বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘ*র্ষ, আহত ২৫ - dainik shiksha মধ্যরাতে ববি-বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের সংঘ*র্ষ, আহত ২৫ এইচএসসি ফল তৈরি: পরীক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়েছে বোর্ড - dainik shiksha এইচএসসি ফল তৈরি: পরীক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় তথ্য চেয়েছে বোর্ড শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য ও হেনস্তা নয়: শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষকদের পদত্যাগে বাধ্য ও হেনস্তা নয়: শিক্ষা উপদেষ্টা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026359558105469