‘প্রথমেই দরকার শিক্ষার মানের উন্নতি’

দৈনিক শিক্ষা ডেস্ক |

দেশের উন্নয়নের গতি বাড়াতে হলে আগে প্রয়োজন শিক্ষার মান নিয়ন্ত্রণ করা। নকলমুক্ত শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলন করা গেলে যে সরকারের আমলই হোক, দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখা যাবে। শিক্ষা ছাড়া জাতি এগোতে পারে না। তাই রেজাল্ট নয়, প্রথমেই দরকার শিক্ষার মানের উন্নতি। এ মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহ। তিনি বলেন, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। অতি পুরনো কিন্তু খাঁটি কথা। সৃষ্টির উষালগ্ন থেকেই শিক্ষার গুরুত্ব অনুভূত হয়েছে অনুক্ষণ। একবিংশ শতাব্দীর এ বিজ্ঞান-বিভাসিত যুগে শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষা মনের অন্ধকার দূর করে, জাতিকে পৌঁছে দেয় উন্নতির স্বর্ণশিখরে। একটি দেশের শিল্প, সাহিত্য, পেশা, সভ্যতা—সব কিছু দাঁড়িয়ে থাকে শিক্ষা নামের সোপানের ওপর।

সংগত কারণেই বলা হয়, পৃথিবীতে যে জাতি যত শিক্ষিত সে জাতি তত উন্নত। তাই শিক্ষাকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দিতে হবে।

গত শনিবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন আরটিভির সমসাময়িক বিষয়ের পর্যালোচনামূলক অনুষ্ঠান ‘সহমত দ্বিমত মতামত’-এ আলোচনা করতে গিয়ে ড. রহমত উল্লাহ এসব কথা বলেন।

শাইখ ইমতিয়াজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন আ জ ম শফিউল আলম ভুইয়া ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সঞ্চালক বলেন, শিক্ষার মাধ্যমেই সমাজ উন্নতি সাধন ও প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পারে। কোনো জাতিই শিক্ষা ছাড়া তাদের ভাগ্যোন্নয়ন করতে পারেনি; ভবিষ্যতেও পারবে না। দুঃখজনক হলেও সত্য যে বাংলাদেশে শিক্ষাব্যবস্থা সম্প্রসারণশীল হলেও গুণগত মান সন্তোষজনক নয়। শিক্ষার ব্যবস্থাপনা ও মান, দুটিই এখন সংকটের মুখে। শিক্ষার মান অবনতির দিকে ধাবিত হওয়ায় শিক্ষা সম্পর্কে জনসাধারণের আগ্রহ কমে যাচ্ছে এবং জাতীয় জীবনে ব্যাপক অবক্ষয় নেমে আসছে। কিভাবে বিশ্লেষণ করবেন?

অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহ বলেন, ‘১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র। কিন্তু আজ পর্যন্ত এখানে আদর্শভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা চালু হয়নি। বাংলাদেশের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় নাগরিকদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর ব্যবস্থা নেই। এ অবস্থা চলে আসছে আরো আগে থেকে। মুসলিম শাসনামলে ভারত উপমহাদেশে চালু ছিল ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা। সে শিক্ষাব্যবস্থায় তৈরি হতো আদর্শ নাগরিক, আদর্শ মুসলিম এবং দেশ পরিচালনার যোগ্যতাসম্পন্ন দক্ষ নেতৃত্ব ও জনশক্তি। তিনি আরো বলেন, অভিজ্ঞ ও মেধাসম্পন্ন শিক্ষকের অভাব, শিক্ষকদের আদর্শচ্যুতি, শিক্ষাঙ্গনে অপরাজনীতি, সন্ত্রাস, ত্রুটিপূর্ণ পরীক্ষাপদ্ধতি, প্রতিষ্ঠানভিত্তিক পাসের বাধ্যবাধকতা, শিক্ষক নিয়োগ পদ্ধতির বেহাল প্রভৃতি কারণে শিক্ষাব্যবস্থায় ধস নেমেছে। এটির উন্নতি দেখতে চাই। ’

আলোচনার এ পর্যায়ে আ জ ম শফিউল আলম ভুইয়া বলেন, ‘১৭৫৭ সাল থেকে যখন ইংরেজরা ভারতবর্ষ দখল করে নিতে থাকে তখন থেকে তারা এ দেশে এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থা চালু করার ব্যবস্থা করে, যে শিক্ষাব্যবস্থা থেকে শিক্ষা লাভকারীরা তাদের মানসিক গোলাম হিসেবে তৈরি হয়। তারা তাদের খাদেম ও সেবক হয়ে কাজ করবে এবং মুসলমানের ঘরে জন্ম নিলেও সত্যিকার মুসলিম হয়ে গড়ে উঠবে না। শেষ পর্যন্ত সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাহীন ইসলামী শিক্ষাব্যবস্থা তার শৌর্যবীর্য হারিয়ে স্তিমিত হয়ে পড়ে এবং কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। অন্যদিকে ব্রিটিশদের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাব্যবস্থা জমে ওঠে। চাকরিবাকরিসহ বস্তুগত জীবনধারণ ও জীবনযাপনের জন্য তখন এই শিক্ষা গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়ে। এখন তো সেই পরিস্থিতি নেই। তবে কেন আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতি হবে না? হতেই হবে। মূল সমস্যা হলো আমরা কোনো কাজ আন্তরিকতার সঙ্গে করতে চাই না। লাখ লাখ ছাত্র-ছাত্রী প্রতিবছর পাস করছে। তারা কি দেশের কোনো কাজে আসতে পারে না? অবশ্যই পারে। শুধু সরকারকে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ নিতে হবে। ’

মাহফুজ উল্লাহ বলেন, স্ব্বাধীন বাংলাদেশের ৪০ বছর হলো। আদর্শভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা এখানে চালু হয়নি। জনগণের প্রাণের দাবি শিক্ষাব্যবস্থা সেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর কয়েকবারই জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়নের চেষ্টা করা হয়েছে। ড. কুদরাত-এ-খুদা, মজিদ খান ও প্রফেসর মফিজউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে শিক্ষা কমিশন গঠিত হয়েছে। বর্তমান সরকার কুদরাত-এ-খুদা শিক্ষা কমিশনের রিপোর্টকে গণমুখী ও যুগোপযোগী করে একটি বাস্তবভিত্তিক শিক্ষানীতি প্রণয়নের ব্যবস্থা নিচ্ছে। কিন্তু তাতেই কি হবে? এর জন্য দল-মতের ঊর্ধে উঠে সরকারকে কাজ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, ‘আজকের শিশুই জাতির ভবিষ্যৎ। কিন্তু এই ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার জন্য শিশুরা কোনো ভূমিকা পালন করতে পারবে না, কারণ তারা অবুঝ। প্রয়োজন মা-বাবার যথাযথ ভূমিকা। দেশের প্রত্যেক মা-বাবা সন্তানদের মঙ্গল চান। কিন্তু আমাদের দেশের অনেক শিক্ষিত মাও জানেন না, তাঁর সন্তানদের কিভাবে পরিচর্যা করতে হবে। ’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা - dainik shiksha চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? - dainik shiksha স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার - dainik shiksha কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030229091644287