দৈনিক শিক্ষাডটকম, ঢাবি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নিরাপত্তার আর্জি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ‘ছাত্রলীগমনা’ ছয় শিক্ষার্থী।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) বিকেল ৩টায় বুয়েট শহীদ মিনারের সামনে সংবাদকর্মীদের সামনে তারা এ আবেদন জানান। লিখিত ওই আর্জিতে তারা বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরে তাদের মানসিক নির্যাতন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।
তাদের ভাষ্য, ‘বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতিকে এক প্রকার নিষিদ্ধ কাজ হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং আমরা প্রগতিশীল রাজনৈতিক চিন্তাধারণায় বিশ্বাসী এবং স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় আমরাও অংশ নিতে চাই দেখে আমাদের ক্যাম্পাসে দীর্ঘ একটি সময় ধরে মানসিক নিপীড়ন চলে আসছে, যা বর্তমানে আমাদের জীবনের হুমকিতে রূপ নিয়েছে।’
নিজেদের স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্য তারা বলেন, ‘আপনাকে আমরা বলতে চাই, শুধুমাত্র স্বাধীন মত প্রকাশের জন্য যে পরিমাণ বুলিং করা হয়েছে আমাদের ওপর তা অকথ্য। এই নিপীড়ন এর কারণ শুনতে হলে আমাদের ২০১৯ পরবর্তী বেশ কিছু ঘটনা জানতে হবে। বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ (ইইই ১৭) ভাই এর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর বুয়েটে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ হয় কিন্তু এরপরে র্যাগিং বা এর সাথে জড়িত কোনো বিশ্ববিদ্যালয় আইন ভঙ্গের অভিযোগ না থাকলেও সংখ্যালঘু ছাত্রদের ওপর শুরু হয় পাবলিক হিউমিলিয়েশন এবং ডিফেমেশন, যা হয় শুধুমাত্র স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হওয়ার কারণে। পরবর্তীতে আমরা বুয়েটে ভর্তি হলে আমরাও আমাদের জাতির জনকের আদর্শকে পালন করতে চাইলেই আমাদের সাথে বুলিং ও নানাভাবে আমাদের হ্যারাস করা হয়।’
ওই শিক্ষার্থীরা এক পর্যায়ে হলের রুমে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি রাখতে চাইলে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হন বলে অভিযোগ করেন। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ চেতনা’ বিষয়ক ক্লাব প্রতিষ্ঠা করতে চাইলে সমালোচনার শিকার হন বলে জানান তারা।
তারা আরও বলেন, ‘আমরা মত প্রকাশের স্বাধীনতা চাই। আমরা চাই না আমাদের ক্যাম্পাস জঙ্গী তৈরির কারখানা হোক। আমরা চাই না দেশে দ্বীপ ভাই, সনি আপু ও আবরার ফাহাদ ভাই এর মতো নির্মম ঘটনা ঘটুক, আমরা দ্বিতীয় কোনো হলি আর্টিজান ঘটনাও চাই না। আমরা চাই না তন্ময় ভাইয়ের মতো কেউ শিবিরের নৃশংস হামলার ক্ষত চিহ্ন নিয়ে জীবনযাপন করুক। আমরা সবাই-ই জানি বিশ্ববিদ্যালয় উন্নত মুক্তবুদ্ধি চর্চার মুক্ত মাঠের মতো, আমাদেরও সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে আপনার কাছে এই আকুল আবেদন।’
হিজবুত তাহারীর বা শিবিরের প্রসঙ্গে তুলে তারা অভিযোগ করেন, ‘সম্প্রতি ক্যাম্পাসে ইসিই ভবনের লিফটে হিজবুত তাহরীর পোস্টারে কিউ আর কোডের মাধ্যমে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে এসে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করার আহ্বান করা হয়, যা শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত এডুকেশনাল মেইলেও পাঠানো হয়। হিজবুত তাহারীর বা শিবিরের সন্ত্রাসী আক্রমণ থেকে কতটা নিরাপদ বুয়েটের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি? রাষ্ট্রযন্ত্র মেধাবীদের এই ক্যাম্পাসকে কতটা নজরদারিতে রেখেছে বা এর প্রতিরক্ষা নিশ্চিত করছে আমরা জানি না। যেকোনো বড় ধরণের নাশকতার ঘটনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলে হলি আর্টিজান এর মত কোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলে আশংকা করছি আমরা ক্যাম্পাসের প্রগতিশীল ছাত্র সমাজ।’
তারা প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমাদের নিরাপদ ও স্বাধীন মতামত প্রকাশের ক্যাম্পাস উপহার দিন। দেশ ও দশের প্রতি ভালোবাসা রেখে সকলের কল্যাণকে মাথায় রেখে আমরা ক্যাম্পাসে স্বাভাবিক পরিস্থিতি চাই এবং জীবনের নিরাপত্তা চাই। আমরা বুয়েট ক্যাম্পাসে নিরাপদে এবং সৎসাহসের সাথে প্রগতিশীল রাজনীতির চর্চা করতে চাই।’
এর আগে গতকাল এই শিক্ষার্থীরা প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছেন বলে অভিযোগ করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক. ড. সত্য প্রসাদ মজুমদারকে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন বলে জানান।