প্রধান শিক্ষকের কাণ্ড: ২০ পরিবারের পথ বন্ধ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি |

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রতিবেশী ২০ পরিবারের যাতায়াতের পথ বন্ধ করে বেড়া দিয়েছেন।

অরুয়াইল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক বাপন চক্রবর্তী বলেন, ওই রাস্তার বিষয়ে স্থানীয় একজন আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন, বিবাদীপক্ষও তা জানে। তাই রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া তাদের ‘ঠিক হয়নি’।

যিনি বেড়া দিয়েছেন, সেই রাম চন্দ্র দাস সরাইল উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের বড়ইচারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

তিনি ‘শত বছরের পুরনো’ ১২০ ফুট দীর্ঘ পথটি বন্ধ করতে প্রায় ৩০ ফুট জায়গা জুড়ে পাকা দালান এবং বাকি জায়গায় টিনের বেড়া দিয়ে ঘিরে দিয়েছেন। এতে তার বাড়ির পুব ও উত্তর দিকের প্রায় ২০টি পরিবারের মানুষের চলার পথ বন্ধ হেয়ে গেছে। বিকল্প পথ হিসেবে অন্য প্রতিবেশীর বাড়ির ওপর দিয়ে তাদের চলাচল করতে হচ্ছে।

ওই শিক্ষকের বাড়ি লাগোয়া পুব পাশের বাড়ির বাসিন্দা স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক বাদল দাস জানান, প্রায় ২৫ বছর আগে তারা নয়নতারা দাসী নামের একজনের কাছ থেকে ২১৯৭ দাগের আট শতক জায়গা কিনে বসতঘর নির্মাণ করেন।

১৯৬৬ সালে নয়নতারা দাসীর পূর্বসূরী উমাকান্ত দাস বাড়ি থেকে বের হওয়ার রাস্তার জন্য পশ্চিম পাশের বাড়ির তৎকালীন মালিক প্রধান শিক্ষক রাম চন্দ্রের কাকা রামধন দাস ওরফে রায়ধন দাসের সঙ্গে আদালতে একটি সোলেহনামা করেন।

ওই সুলেহনামার শর্ত অনুযায়ী, রামধন দাসের পাঁচ ফুট প্রস্থ ও ১২০ ফুট দৈর্ঘ্যের জায়গা রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করার বিনিময়ে তাদেরকে এক শতক জায়গা দিয়ে দেন। এরপর থেকে এটি পুরো মহল্লার মানুষের হাঁটার রাস্তা হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে।

“কিন্তু সম্প্রতি রাম চন্দ্র দাস ইটের দেয়াল এবং টিনের বেড়া দিয়ে রাস্তাটি বন্ধ করে দেন।”

বাদল দাস জানান, রাস্তার বিষয়টি সমাধানের জন্য গত ১৪ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৪৪ ধারার মামলা করেন তারা।

বিষয়টি জমি সংক্রান্ত হওয়ায় আদালত এটিকে ১৪৫ ধারায় রূপান্তর করে বিবাদী পক্ষকে কারণ দর্শাতে বলেন।
এছাড়া এ জায়গা সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিতে সরাইল থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।

আগামী ২৩ ডিসেম্বর এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানি হবে বলে ওই আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে।

১৪৪ ধারার মামলার আদেশ পাওয়ার পর শিক্ষক রাম চন্দ্র এবং তার গোষ্ঠীর লোকেরা বাদল দাস ও তার স্বজনদেরকে মারধরের হুমকি দেন অভিযোগ এনে বাদল দাস বাদী হয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি কার‌্যবিধির ১০৭ ধারায় রাম চন্দ্রসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। 

এর পরদিন সরাইল থানার ওসির নির্দেশে স্থানীয় অরুয়াইল তদন্ত কেন্দ্রের এক দল পুলিশ সরেজমিন গিয়ে দেয়াল নির্মাণ কাজ স্থগিত রাখতে বলেন। পুলিশের বাধায় দেয়াল নির্মাণ বন্ধ রাখলেও রাতের অন্ধকারে তারা পুরো রাস্তাটি টিনের বেড়া দিয়ে অবরুদ্ধ করে দেয় বলেন বাদী।

তিনি বলেন, এরপর গত ২০ অক্টোবর বাদল দাসের তিন ভাই, তার দুই মামা ও মামাত ভাইদের বিরুদ্ধে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি কার‌্যবিধির ১০৭ ধারায় পাল্টা মামলা ঠুকে দেন শিক্ষক রাম চন্দ্র।  

বাদল দাস জানান, বছর খানেক আগে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও অরুয়াইল গ্রামবাসী বেশ কয়েকবার এ বিষয়ের সুরাহা করার চেষ্টা করলেও শিক্ষক রাম চন্দ্র সাড়া দেননি। প্রায় ১০ মাস আগে বাদল দাস এ বিষয়ে সরাইল উপজেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কাছে লিখিত আবেদন করেছিলেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে বিষয়টির সুরাহা করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দুই পক্ষকে নিয়ে তার কার‌্যালয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। ওই বৈঠকে ইউএনও’র দেওয়া সিদ্ধান্ত অবজ্ঞা করেন শিক্ষক রাম চন্দ্র।

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক রাম চন্দ্র দাস বলেন, “আমার বাড়ি ২১৯৮ ও ২১৯৯ দাগে মোট ১৩ শতক। আমার বাড়ির চারদিকে বড়ই, নারকেলসহ বিভিন্ন গাছ আছে।”

এখানে রাস্তার কোনো অস্তিত্ব নেই বলে দাবি করে তিনি বলেন, ”যদি আমার প্রতিপক্ষ প্রমাণ করতে পারে এখানে রাস্তা আছে, তাহলে আমি জুতা নিয়ে অরুয়াইল বাজারে ঘুরব।”

মারধরের হুমকির কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, ”বাদল দাস ও তার লোকজন আমাকে গত বছরের জুনে মারধর করেছে। আমার কাছে হাসপাতালের ডকুমেন্ট আছে।”

আদালতের ১৪৪ ধারা জারির পর বেড়া নির্মাণ করা আইনসিদ্ধ কি-না তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “পুলিশ আমাকে ১৪৪ ধারার মামলার আদেশের কাগজ দেখাতে পারেনি। তারা বলেছে পরে কাগজ দেখাবে। এজন্য আমি বেড়া দিয়েছি।”

তবে অরুয়াইল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক বাপন চক্রবর্তী বলেন, পুলিশ ১৪৪ ধারার মামলার আদেশের কাগজ দেখাতে পারেনি বলে যে দাবি করেছেন শিক্ষক রাম চন্দ্র দাস তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

“ওই শিক্ষকের স্বাক্ষরিত আদেশের রিসিভ কপি আমাদের কাছে সংরক্ষিত আছে।”


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029070377349854