দৈনিকশিক্ষাডটকম, নরসিংদী : নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানে অসৌজন্যমূলক আচরণসহ বিভিন্ন অনিয়মের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে এ বিক্ষোভের সময় শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষক শিউলী আক্তারের পদত্যাগ দাবি করেন।
বিক্ষোভ শেষে শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষককে পদত্যাগে বাধ্য করতে স্কুলের ফটক অবরুদ্ধ করে অবস্থান নেন তারা। খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৮টায় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসমা সুলতানা নাসরিন স্কুলে উপস্থিত হয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস পেয়ে বিক্ষোভ স্থগিত করে বাড়ি ফেরে শিক্ষার্থীরা।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে রাত সাড়ে ৮টা পযর্ন্ত নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ শেষে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। এসময় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনসহ স্কুলে প্রধান শিক্ষক শিউলি আক্তারের বিভিন্ন অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেন তারা।
শিক্ষার্থীরা জানায়, নরসিংদী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালরে প্রধান শিক্ষক শিউলি আক্তার বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে।
বৃহস্পতিবার স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পূর্ব নিধারিত বিদায় অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু স্কুলের প্রধান শিক্ষক শিউলি আক্তার বিদায় অনুষ্ঠান উপলক্ষে আগত শিক্ষার্থীদের স্কুলে বা অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকতে দিচ্ছিলেন না। পরে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের মুখে অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকতে দিলেও ৫ মিনিটের মধ্যেই বিদায় অনুষ্ঠান শেষ করে দেন। এতে ফুঁসে উঠে শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীদের ওপর চড়াও হন প্রধান শিক্ষক।
এছাড়া বিদায় অনুষ্ঠান বাবদ টাকা নিয়ে নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ছাত্রীরা। তারা অভিযোগ করেন, টিফিনেও নিম্নমানের খাবার দেয়ার প্রতিবাদ করলে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হতো। শীতের সকালে দৈনিক সমাবেশের নামে শিক্ষার্থীদের শরীর থেকে শীতের কাপড় খুলে একটি কক্ষে তালাবদ্ধ করে রাখেন দীর্ঘদিন ধরে। ফলে অনেক শিক্ষার্থী শীতে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
সবশেষ এসএসসি ব্যাচের শেষ ক্লাসের দিনে র্যাগ ডের আয়োজনে ৩৫০ জন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রায় ২ লাখ টাকা আদায় করা হয়। কিন্তু অনুষ্ঠান না করেই প্রধান শিক্ষক ওই অর্থ আত্মসাৎ করেন। ওই সময় অনুষ্ঠান করতে না দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে তালা মেরে রাখেন। শুধু তাই নয়, স্কুলের ৪৬ জন শিক্ষক থাকলেও বিদায় অনুষ্ঠানে মাত্র ৪ জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। এই ধারাবাহিকতায় স্কুলের বিদায়ী শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে এই বিক্ষোভ করেন।খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৮টায় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসমা সুলতানা নাসরিন স্কুলে আসেন। এসময় তিনি লিখিত অভিযোগ পেলে তা যাচাই করে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দেন। পরে শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষক শিউলি আক্তারের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকতার কাছে অভিযোগ দিয়ে বিক্ষোভ স্থগিত করে বাড়ি ফিরে যান।
স্কুলের একটি সূত্র জানায়, স্কুলের প্রধান শিক্ষক শিউলি আক্তার কম্পিউটার ল্যাব প্রতিষ্ঠা ও অর্ধশতাধিক কম্পিউটার ক্রয়সহ স্কুলের উপকরণ ক্রয়ের নামে লাখ টাকা লোপাট করেছেন। স্কুলের টিফিনসহ সব উপকরণ প্রধান শিক্ষকের স্বামী সরবরাহ করারও অভিযোগ রয়েছে। এদিকে প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রধান শিক্ষকের রোষানলে পড়তে হয়েছে। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কারণে এক সঙ্গে বিদ্যালয়ের চারজন স্বনামধন্য শিক্ষককে অন্যত্র বদলি করা হয়। ফলে তার অনিয়মের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না বলে জানায় শিক্ষার্থীরা।
তবে এসব অনিয়মের কথা অস্বীকার করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শিউলি আক্তার ও তাঁর সহযোগী শিক্ষক লুৎফর কবির। তারা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, স্কুলে কোনো রকম অনিময় হয়নি।