কুড়িগ্রামের রৌমারীতে বারবান্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ দেয়ায় বিদ্যালয়ের সভাপতি মনিরুল ইসলামকে (৩৭) মারধরের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার বারবান্ধা বাজারে এ ঘটনা ঘটে। ওই রাতেই ভুক্তভোগী মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমসহ দুজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
জানা গেছে, গত রোববার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে ওই প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ দেন স্কুলের সভাপতি মনিরুল ইসলাম।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থ বছরে উপজেলার উত্তর বারবান্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে বরাদ্দকৃত মোট ২ লাখ ৭৫ হাজার ৫০২ টাকা যৌথ হিসাব নম্বরে জমা হয়। তৎকালীন সভাপতি আইয়ুব আলীর মেয়াদ শেষ হলে গত বছর মনিরুল ইসলাম ওই বিদ্যালয়ের সভাপতি নির্বাচিত হন। পরে প্রধান শিক্ষকসহ ব্যাংকে যৌথ হিসাব খুলতে যান মনিরুল ইসলাম। এ সময় তিনি দেখেন ব্যাংকে জমানো কোনো টাকা নেই। সন্দেহ হলে খোঁজ নিয়ে জানতে পান তৎকালীন সভাপতি আইয়ূব আলীর স্বাক্ষর জাল করে অবৈধভাবে সমস্ত টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম।
মনিরুল ইসলাম অভিযোগে জানান, রোববার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে আবুল কাশেমের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়। এতে ক্ষিপ্ত হন প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম। পরদিন সোমবার সন্ধ্যায় ওই স্কুলের সভাপতি মনিরুল ইসলাম বারবান্ধা বাজার এলাকায় গেলে আবুল কাশেমসহ ভাতিজা রঞ্জু মিয়া তাকে মারধর করেন। এ সময় স্থানীয়রা মনিরুল ইসলামকে উদ্ধার করে রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। পরে রাতেই মারধরের শিকার মনিরুল ইসলাম বাদী হয়ে প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমসহ দুজনের নাম উল্লেখ করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
তৎকালীন সভাপতি আইয়ূব আলী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমি এক বছর ধরে অসুস্থ। সরকারি বরাদ্দের টাকা উত্তোলনের বিষয়ে কিছুই জানি না এবং আমাকে জানানোও হয়নি। আমার স্বাক্ষর জাল করে সমস্ত টাকা আত্মসাৎ করেন প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম।
রৌমারী সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সহসভাপতি ফিরোজ মিয়া দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, তৎকালীন সভাপতি আইয়ূব আলীর স্বাক্ষর জাল করে সরকারি বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ করেন ওই প্রধান শিক্ষক। এ নিয়ে সভাপতি মনিরুল বাদী হয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেয়ায় ক্ষিপ্ত হন তিনি। এর জের ধরে প্রধান শিক্ষক ও তার ভাতিজা রঞ্জু মিয়া মনিরুলকে মারধর করেন।
সরকারি বরাদ্দের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি অস্বীকার করে উত্তর বারবান্ধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, তৎকালীন সভাপতি আইয়ূব আলী অসুস্থতার কারণে সবকিছু ভুলে গেছেন। তার স্বাক্ষরেই টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
সভাপতি মনিরুল ইসলামকে পেটানোর বিষয়ে তিনি বলেন, ঘটনাটি আমার ভাতিজা রঞ্জু মিয়ার সঙ্গে ঘটেছে। আমি জড়িত না।
রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক জাহাঙ্গীর আলম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, মারধরের ঘটনায় মনিরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি ভর্তি হয়েছেন। তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফোলা ও জখমের চিহ্ন রয়েছে। তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা( ইউএনও) (ভারপ্রাপ্ত) এ বি এম সরোয়ার রাব্বী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি উপজেলা শিক্ষাকর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দেও হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রৌমারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পেলে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে সুপারিশ করা হবে।
রৌমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুপ কুমার সরকার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।