প্রধান শিক্ষক নেই রংপুরের ৩০৮ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে

দৈনিক শিক্ষাডটকম, রংপুর |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, রংপুর : রংপুর জেলার ৩০৮ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক। শিক্ষকরা প্রতিনিয়তই অবসরে যাচ্ছেন। অবসরের গতির তুলনায় নিয়োগের গতি কম। চারজন শিক্ষকের একজনকে চলতি দায়িত্ব বা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে। নারী শিক্ষকরা মাতৃত্বকালীন ছুটিতে যাচ্ছেন। অনেকে প্রশিক্ষণে থাকেন। এমন পরিস্থিতিতে শ্রেণিকক্ষে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। সেইসঙ্গে দাপ্তরিক নানা কাজে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের।

রংপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, রংপুরে প্রধান শিক্ষক পদে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শূন্য পদের সংখ্যা সর্বমোট ৩০৮টি। যার মধ্যে মিঠাপুকুরে ১০২টি, পীরগাছায় ৪৪টি, কাউনিয়ায় ৪৪টি, বদরগঞ্জে ৩৯টি, গঙ্গাচড়ায় ৩৫টি, রংপুর সদরে ২৪টি, পীরগঞ্জে ১৫টি এবং তারাগঞ্জে ৫টি।

উল্লেখ্য, প্রধান শিক্ষক পদে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শূন্য আসনের ৩৫ শতাংশ সরাসরি নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। বাকি ৬৫ শতাংশ শূন্য পদে সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এটাই বিধি। কিন্তু নিয়োগে, পদোন্নতিতে ধীরগতি। এ কারণে দুরবস্থায় পড়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। কিছু সহকারী শিক্ষককে চলতি দায়িত্ব দিয়ে সে দুরবস্থা কাটানোর চেষ্টা করা হলেও কাঙ্ক্ষিত ফল মিলছে না ।

সূত্র জানায়, রংপুরে প্রায় তিন শতাধিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য। আরও জানা গেছে, গ্রেডেশন তালিকা অনুযায়ী সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দেওয়ার কাজ চলছে। এখন প্রধান শিক্ষকের পদটি দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত। তাই সরাসরি নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) হাতে। তারা পদোন্নতির সুপারিশে খুব ধীর। ৩৪তম বিসিএসের সারা দেশে নন-ক্যাডার থেকে সুপারিশ করা হয়েছিল ৮৯৮ জন। ৩৬তম থেকে ৩২৭, ৪১তম থেকে ২৭৬ ও ৪৩তম থেকে ২৭৬ জনকে সুপারিশ করেছিল পিএসসি। সুপারিশপ্রাপ্ত নন-ক্যাডার প্রার্থীদের অনেকে কিছুদিন চাকরি করে অন্য চাকরিতে চলে যান। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে পর প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগের কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকের কেউ না কেউ প্রতিনিয়তই অবসরে যাচ্ছেন। অবসরের গতির তুলনায় পদোন্নতি ও সরকারি নিয়োগের গতি কম। এভাবে চললে কখনই শূন্য পদ পূরণ হবে না। সাধারণত, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদটি যদি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য থাকে তাতে লেখাপড়া ব্যাহত হয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। চারজন শিক্ষকের একজনকে চলতি দায়িত্ব বা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে কাজ চালানো হয়। তাকে প্রায় প্রতিদিন উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন সভা, সেমিনারে অংশগ্রহণ এবং নানা প্রশাসনিক কাজ করতে হয়। আবার দায়িত্বপ্রাপ্তদের অধিকাংশ নারী হওয়ায় তাদের মাতৃত্বকালীন ছুটি বা অন্য ছুটি কাটাতে হয়। অনেকে প্রশিক্ষণে থাকেন। ফলে চারজনের দুজনকে বিদ্যালয় চালাতে হয়। সহকারী শিক্ষকরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলে তাদের নির্দেশ মানেন না অনেক শিক্ষক ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক জানান, একজন প্রধান শিক্ষককে অনেক দায়িত্ব পালন করতে হয়। সেখানে ভারপ্রাপ্ত হিসেবে আমাকে ক্লাস নেয়ার পাশাপাশি প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এটা আমার জন্য খুব কষ্টের । ক্লাসের পাশাপাশি স্কুলের সার্বিক বিষয়ে সময় দেওয়া খুব কঠিন হয়ে পড়ছে। পাশাপাশি বিদ্যালয়ের পাঠদানে ব্যাহত হচ্ছে।

ওই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিপড়ুয়া শিক্ষার্থী শফিক ইসলাম বলেন, আমাদের স্কুলে অনেক শিক্ষার্থী, সে তুলনায় শিক্ষক সংকট। আগে প্রধান শিক্ষক ছিলেন; কিন্তু এখন না থাকায় অনেক সমস্যা হচ্ছে।

কিশামত বিষ্ণু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক সানোয়ার হোসেন বলেন, একটি স্কুলে একজন প্রধান শিক্ষক হলেন প্রধান অভিভাবক। তার অনুপস্থিতি থাকলে শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হয়। এতে করে পড়ালেখার প্রতি শিক্ষার্থীদের চাহিদা কমে যায়।

প্রধান শিক্ষকের বিভিন্ন পদ শূন্য থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু, বদলি, অবসরজনিত কারণসহ নানা কারণে প্রধান শিক্ষকের এতগুলো পদ খালি হয়েছে। আমরা জেলার সম্ভাব্য প্রধান শিক্ষকদের তালিকা তৈরি করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠিয়েছি। এখনও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি, দ্রুত শূন্য পদে নিয়োগের ব্যবস্থা হবে। এ বিষয়ে মহাপরিচালক, সচিব ও মন্ত্রী অবগত আছেন। যে কোনো সময় উদ্যোগ নিয়ে এসব পদে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিয়োগের ব্যবস্থা করবেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পদত্যাগের জন্য বল প্রয়োগ করা যাবে না: শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পদত্যাগের জন্য বল প্রয়োগ করা যাবে না: শিক্ষা উপদেষ্টা গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের - dainik shiksha গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের শিক্ষায় আমূল সংস্কারের উদ্যোগ নেবো: ড. ইউনূস - dainik shiksha শিক্ষায় আমূল সংস্কারের উদ্যোগ নেবো: ড. ইউনূস মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বে রেজাউল করীম - dainik shiksha মাউশি অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের অতিরিক্ত দায়িত্বে রেজাউল করীম শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর একদিনের বেতন ত্রাণ তহবিলে - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর একদিনের বেতন ত্রাণ তহবিলে অধ্যাপকদের অনলাইনে বদলির আবেদন শুরু ১ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha অধ্যাপকদের অনলাইনে বদলির আবেদন শুরু ১ সেপ্টেম্বর সব মাদরাসায় ওয়েবসাইট হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসায় ওয়েবসাইট হালনাগাদের নির্দেশ ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা স্থগিত শিক্ষাঙ্গনের ভদ্রতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষাঙ্গনের ভদ্রতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030100345611572