কবিতা মানুষের মরে যাওয়া চেতনা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে বলেই সবাই কবিতা লেখে, কবিতা পড়ে। কবিতা কখনো হয় আবেগকেন্দ্রিক, কখনো অনুভূতিপ্রবণ মনের বহিঃপ্রকাশ, কখনো সমকালের মুখপাত্র, কখনো শাব্দিক ঝংকার, কখনো বেদনাবিধুর হৃদয়ের কান্না, কখনো শোকাহত হৃদয়ের আর্তনাদ, কখনো সংগ্রামী সশস্ত্র সৈনিক, কখনো বা অধিকারবঞ্চিত শ্রমজীবী মানুষের মুখপাত্র।
তারই ধারাবাহিকতায় নিত্য দিনের তথাকথিত প্রথা ভেঙে বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা সংগ্রাম, প্রেম বিরহ, আনন্দ, বেদনা সবই স্থান পেয়েছে এক মলাটে। ঢাকার রহমতুল্লাহ মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ আবুল বাশার হাওলাদারের কবিতার বই ‘একই আকাশের তারা’ (গ্রন্থবিতান থেকে প্রকাশিত)। বাস্তবিক ভাবনার রঙে চমৎকার শব্দ চয়নে এক কথায় সাধারণ ভাষায় অসাধারণ বহিঃপ্রকাশ। লেখকের অনেক কবিতার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য কবিতা :
রেসকোর্স থেকে ইউনেস্কো
শত শত বছরের গ্লানি,
বাঙালির পরাধীনতার ইতিহাস মুছে দিতে,
শৃঙ্খলমুক্ত করতে এক মহাবীরের উত্থান।
অত্যাচারে-শোষণে জর্জরিত একটি জাতি,
ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে ধুলোয় মিশে যাচ্ছিল ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, স্বকীয়তা ও জাতীয়তা;
কেড়ে নেয়া হল বাঙালির কথা বলার অধিকার,
সামরিক শাসকের ঔদ্ধত্য আর রক্তচক্ষুকে স্তব্ধ করতে মহানায়কের আবির্ভাব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
জীবনযুদ্ধে অবতীর্ণ,
বাঙালির মাথা তুলে দাঁড়াবার প্রত্যয়ে,
বিশ্বের মানচিত্রে অন্তর্ভুক্তির সংগ্রামে,
নিজেকে উৎসর্গ করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
মঞ্চ প্রস্তুত।
মহানায়কের ভাষণ শুনতে লক্ষ লক্ষ মানুষের অপেক্ষা,
অবশেষে এলেন,
মুহুর্মুহু করতালিতে মুখরিত রেসকোর্স ময়দান,
তারপর শুরু হলো ভাষণ ৭ মার্চের ভাষণ,
এক মহাকাব্যিক ঐতিহাসিক ভাষণ স্বাধীনতার দলিল,
"এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম,
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম"।
অগ্নিঝরা ভাষণে উদ্বুদ্ধ হয়ে
কৃষক-শ্রমিক, ছাত্র-শিক্ষক, নারী-পুরুষ
নির্বিশেষে আপামর জনতা উত্তাল সমুদ্রের মত নেমে পড়েছে রাস্তায় মহাযুদ্ধে-- মুক্তিযুদ্ধে;
বাঙালির পায়ের শিকল ভাঙতে।
বজ্রকণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছিল ভাষণের অগ্নিরূপ,
বাঙালির মুক্তির অঙ্গীকার শুধু ভাষণই প্রেরণা,
লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল শুধু যুদ্ধ যুদ্ধ আর স্বাধীনতা,
ভাষণের তীব্রতায় শত্রুদের হৃৎকম্প শুরু হয়ে গেল।
বিশ্ব জয় করেছে শুধু একটি ভাষণ,
এনে দিয়েছে একটি পরাধীন জাতির মুক্তি,
স্বাধীনতার ইপ্সিত বাসনা বাস্তবে রূপ দিয়েছে।
এটি শুধু ভাষণ নয়
বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ইতিহাস,
রাজনীতির মহাকাব্য,
বাংলার অস্তিত্ব রক্ষায়
বাঙালির মুক্তির হাতিয়ার।
৭১ থেকে ১৭,
রেসকোর্স থেকে ইউনেস্কো,
এক মহান স্বীকৃতি,
চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে ভাষণের রূপকার,
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
মোঃ আবুল বাশার হাওলাদার বলেন, ছোটবেলা থেকে কবিতা আবৃত্তি করে খুব আনন্দ পেতাম। মাঝে মধ্যে কবিতা লিখেছি। কিন্তু আত্নবিশ্বাসের অভাবে ফেলে দিয়েছি ময়লার ঝুলিতে। তবে যে কোনো লেখাই লিখতাম মনোযোগ দিয়ে। জীবনসংগ্রামে শত ব্যস্ততায় লেখালেখি হয়নি একেবারে। তিনি বলেন, লেখনীর মাধ্যমে চেষ্টা করেছি বঞ্চিত মানুষের দুঃখের কথা তুলে ধরতে। কবি হওয়ার জন্য এ প্রয়াস নয়। শুধু নিজের গভীর থেকে কিছু উপলব্ধির কথা তুলে ধরেছি কবিতার মাধ্যমে।
লেখক মনে করেন, সমাজে নানাভাবে বৈষম্যের শিকার মানুষগুলোর পক্ষে কথা বলার এখনই প্রকৃষ্ট সময়। একই আকাশের তারা কবিতার বইটিতে কিছুটা বলতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করেন তিনি।
মোঃ আবুল বাশার হাওলাদার বিশ্বের একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন সংলগ্ন প্রখ্যাত সুফী সাধক খানজাহান আলীর পূণ্যভূমি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলায় ১৯৫৯ খ্রীস্টাব্দের ২৭ সেপ্টেম্বর এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাল্যকালেই পরম শ্রদ্ধেয় মা ইহলোক ত্যাগ করেন। বাবা একজন গ্রা্ম্য ডাক্তার ছিলেন। তাঁরই আদরে স্নেহে বড় হন এবং লেখাপড়া করেন। মোঃ আবুল বাশার হাওলাদারের ডাক নাম খোকন। তিনি ইংরেজি সাহিত্যে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.এড ডিগ্রি সম্পন্ন করেন এবং পরবর্তীতে এল.এল.বি ও এলএলএম কোর্স সম্পন্ন করেন। পেশাগত জীবনে বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।
বর্তমানে তিনি রাজধানীর লালবাগস্থ রহমতুল্লাহ মডেল হাই স্কুলে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন। শিক্ষকতা জীবনে তিনি একজন সফল ব্যক্তিত্ব। তৃণমূল পর্যায়ে সাধারণ মানুষের পাশে থেকে তাদের দুঃখকষ্টের মধ্যেও কীভাবে শিক্ষাগ্রহণ করে তারা মানুষ হতে পারে, জীবনকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে এ ব্যাপারে যথাসাধ্য অবদান রাখেন। “একই আকাশের তারা” কাব্যগ্রন্থটি তার প্রথম সাহিত্যকর্ম। তিনি তার দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনের অভিজ্ঞতা ও সমাজের বঞ্চিত মানুষের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরার জন্য এ গ্রন্থটি রচনা করেছেন।