সুপারিশ করা লোককে চাকরি না দেয়ার কারণে রাজশাহী মহানগরীর গোলজারবাগ উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেনকে স্কুল থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। স্থানীয় যুবলীগ নেতা নাহিদ আক্তার নাহানের নেতৃত্বে একদল লোক গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে এ ঘটনা ঘটান। এ সময় প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতও করা হয়।
প্রধান শিক্ষককে স্কুল থেকে বের করে দেয়ার সময় মহানগর যুবলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নাহিদ আক্তার নাহান বলেছেন, রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা এখন ঢাকায় আছেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি তিনি রাজশাহী আসার পর স্কুলে আসবেন। সেদিনই স্কুলে আসতে পারবেন প্রধান শিক্ষক। তার আগে তিনি স্কুলে আসতে পারবেন না।
জানতে চাইলে নাহিদ আক্তার বলেন, ‘মারধরের মতো কোনো ঘটনা না। আমি প্রধান শিক্ষককে বলেছি, এলাকাবাসী এখন উত্তেজিত। এখন কয়েক দিন আপনার স্কুলে আসার দরকার নেই। রজব ভাই (নাহিদ আক্তারের বড় ভাই ও সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর) এমপি সাহেবের (ফজলে হোসেন বাদশা) সাথে কথা বলেছেন। তিনি ১৩ তারিখে ঢাকা থেকে রাজশাহী আসবেন। তারপর যেন প্রধান শিক্ষক স্কুলে আসেন। তা না হলে কেউ যদি মেরে দেয়, তাহলে দায় নিতে পারব না।’
প্রধান শিক্ষককে স্কুলে আসতে বারণ করার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক এবং রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘আমি কি গভর্নিং বডির সভাপতি? আমি এ নির্দেশ দিতে পারি? আমার কথা কেন বলেছে তা বলতে পারব না। তবে আমি মনে করি, এটা জটিল কোনো বিষয় না। এটা সমাধান হয়ে যাবে।’
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে চাকরিপ্রার্থী মোশাররফ হোসেন বাবুসহ তাঁর কিছু লোকজন স্কুলে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে উচ্চবাচ্য শুরু করেন। উত্তেজিত হয়ে তাঁরা মারমুখী আচরণ শুরু করেন। এ সময় সেখানে হাজির হন যুবলীগ নেতা নাহিদ আক্তার। তিনি প্রধান শিক্ষককে জানান, এই সমস্যা নিয়ে তাঁদের এমপি ফজলে হোসেন বাদশার সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি ঢাকা থেকে এসেই স্কুলে আসতে চেয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে প্রধান শিক্ষকের স্কুলে আসার দরকার নেই। আর এমপির সম্মানে যেন লোকজন এই সময়ের মধ্যে কিছু না করেন। তখন লোকজন বলেন, ১৩ তারিখ পার হলে কিন্তু তাঁরা আবার স্কুলে আসবেন। এ সময় প্রধান শিক্ষককে চলে যেতে বলা হলে তিনি স্কুল থেকে চলে যান।
তবে অভিযুক্ত নাহিদ আক্তার বলেন, প্রধান শিক্ষক স্কুলটিতে নিজের শ্যালিকা, ভায়রা, ভাতিজা ও পুত্রবধূকে নিয়োগ দিয়েছেন। এসব দেখে এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ। সম্প্রতি চারটি পদের বিপরীতে আবার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। এবার তাঁরা প্রধান শিক্ষককে বলেছিলেন, আত্মীয়স্বজনকে তো অনেক চাকরি দেওয়া হলো। এবার যেন এলাকার একটা ছেলেকে চাকরি দেওয়া হয়। কিন্তু প্রধান শিক্ষক এই সুপারিশ শোনেননি। এ জন্য এলাকার লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে স্কুলে গিয়ে তাঁকে বের করে দিয়েছে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেনকে ফোন করা হয়। তিনি বলেন, তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে তিনি কথা বলতে চান না। এরপরই তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে বিকেলে আবার ফোন করা হলে তাঁর মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
স্কুলের পরিচালনা কমিটির সভাপতি বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী মহানগর সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আবদুল মতিন। ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি এখন মিটিংয়ে আছি। এখন এসব বিষয়ে কথা বলতে পারব না।’
প্রধান শিক্ষক আমজাদ হোসেনকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হলেও তিনি কোথাও কোনো অভিযোগ করেননি। নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বলেন, ‘এ রকম ঘটনার কথা আমি শুনিনি।’
আর রাজশাহী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহা. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এ রকম ঘটনা ঘটলে তো আমাকে জানানোর কথা। কিন্তু আমাকে কিছু জানানো হয়নি। আমি খোঁজ নিয়ে দেখব।’