প্রফেশনাল পরীক্ষা না দিয়ে পরবর্তী বর্ষের ক্লাস করতে চান মেডিকেল শিক্ষার্থীরা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

অটো প্রমোশন চান মেডিকেল শিক্ষার্থীরাও। প্রফেশনাল পরীক্ষা না দিয়ে পরবর্তী বর্ষের ক্লাস করতে চান তারা। চিকিৎসক হতে ইচ্ছুক এই ছাত্র-ছাত্রীরা বলছেন, করোনা চলাকালে স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে তাদের পরীক্ষায় অংশ নেওয়া সম্ভব নয়। তবে পরীক্ষা বিলম্বিত হয়ে সেশনজটে পড়–ক এটিও চান না শিক্ষার্থীরা। এদিকে চিকিৎসক হয়ে যারা মানুষের সেবা করবেন, তাদের পরীক্ষা ছাড়াই প্রমোশনের দাবিকে অযৌক্তিক বলছেন সংশ্লিষ্ট অনেকেই। মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।  প্রতিবেদনটি লিখেছেন  আকতারুজ্জামান।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায় কেউ কেউ বলছেন, না শিখে, পরীক্ষা ছাড়াই অটো প্রমোশন পেলে এই মেডিকেল শিক্ষার্থীরা দক্ষ চিকিৎসক হতে পারবেন না। জানা গেছে, মেডিকেলের স্থগিত হওয়া প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পেশাগত (প্রফেশনাল) পরীক্ষাগুলো চলতি বছর ডিসেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ।কিন্তু এ পরীক্ষায় অংশ নিতে চান না চিকিৎসক হতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষা চলাকালে করোনাভাইরাস সংক্রমণের সেকেন্ড ওয়েভ চলতে পারে, এ শঙ্কা থেকে পরীক্ষা ছাড়াই কোর্স শেষ করার ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তাদের। এ ছাড়া তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে- সেশনজট নিরসন করে যথাসময়ে কোর্স সম্পন্ন করা, প্রাইভেট মেডিকেল কলেজগুলোয় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকাকালে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি না নেওয়া, স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে কেউ করোনা আক্রান্ত হলে কর্তৃপক্ষকে এর দায়ভার নেওয়া।

তথ্যমতে, মেডিকেল কলেজগুলোর পরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয় বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে। পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীদের জানানো হয়েছে, বাধ্যতামূলকভাবে কলেজ হোস্টেলে থাকতে হবে এবং হোস্টেলের খাবার খেতে হবে। বাইরের কোনো খাবার আনা যাবে না। ১৪ দিন বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে শিক্ষার্থীদের। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবে এ মর্মে অঙ্গীকারনামা (বন্ডসই) দিতে হবে তাদের। অঙ্গীকারনামায় আরও উল্লেখ থাকবে, পরীক্ষার আগে বা পরীক্ষা চলাকালে কেউ করোনা আক্রান্ত হলে ওই পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন না। এসব সিদ্ধান্ত আসার পরই বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন শিক্ষার্থীরা। যদিও প্রায় আট মাস ধরে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মেডিকেল শিক্ষায় সেশনজট দেখা দিয়েছে। এই শিক্ষার্থীরা এখন পরীক্ষা বাদ দিয়ে পরের প্রফেশনাল কোর্সের জন্য ক্লাসের অনুমতি চাইছেন।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়ে পরীক্ষায় বসতে না পারলে কমপক্ষে ছয় মাস পিছিয়ে যাবেন শিক্ষাজীবন থেকে। তাই করোনার মধ্যে পরীক্ষায় বসবেন না তারা। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, ‘পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষার আয়োজন করেছে। পরীক্ষা ছাড়া একজন দক্ষ চিকিৎসক হবে কীভাবে! এটা তো এইচএসসি পরীক্ষা নয় যে অটো প্রমোশন দিয়ে দেওয়া হবে! পরীক্ষার আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে আমি মনে করি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরীক্ষার আয়োজন করার বিষয়টি আমি সমর্থন করি।’ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রতিবেদক যোগাযোগ করেন দাবি আদায়ে নেতৃত্ব দেওয়া কয়েকজনের সঙ্গে। মেডিকেলে পড়া ছাত্র-ছাত্রীরা তাদের দাবির বিষয়ে জানালেও তারা নিজেদের নাম-পরিচয় জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিনের ডিন ডা. শাহরিয়ার নবী বলেন, ‘মেডিকেলের মতো জায়গায় পরীক্ষা না দিয়ে কীভাবে চিকিৎসক হতে চায় তা আমাদের ভাবনায় আসে না। কোনো প্রফেশনাল বডির কারও পরীক্ষা ছাড়া প্রমোশনের সুযোগ নেই। যারা ডাক্তার হতে চান তাদের অটো প্রমোশনের দাবিতে জনমনে নেতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হচ্ছে।’

বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এক ছাত্রী নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘করোনার সেকেন্ড ওয়েভের সময় পরীক্ষা নিলে শিক্ষার্থীরা আক্রান্ত হতে পারেন। তাই আমরা এ পরীক্ষা না নেওয়ার দাবি জানাই।’ তিনি বলেন, ‘ইতিমধ্যে আট মাসের সেশনজটে পড়েছি আমরা। এটি যেন দীর্ঘায়িত না হয় তাই আমাদের অটো প্রমোশন দিতে হবে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে রাজধানীর আরেক বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ছাত্র বলেন, বিভিন্ন উন্নত দেশে মেডিকেল শিক্ষার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রফেশনাল পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষা ছাড়াই পরের বর্ষে প্রমোশন দেওয়া হয়েছে। তাই তারাও পরীক্ষা ছাড়া প্রমোশন চান। চিকিৎসক হতে ইচ্ছুক এ শিক্ষার্থী বলেন, লিখিত পরীক্ষার পাশাপাশি ব্যবহারিক, ব্যবচ্ছেদসহ বেশ কিছু পরীক্ষা রয়েছে, যেখানে করোনা আক্রান্তের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগই বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ছাত্র-ছাত্রী বলে জানা গেছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha খাড়িয়া ভাষা সংরক্ষণে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান প্রধান বিচারপতির উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষক হতে চান না শিক্ষক দম্পতিদের কৃতী সন্তানরা - dainik shiksha শিক্ষক হতে চান না শিক্ষক দম্পতিদের কৃতী সন্তানরা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0022990703582764