অধ্যাপক এম শরীফুল ইসলাম ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে ৩০ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার তিতাস নদীর পাড়ে চিত্রি গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্সসহ মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানে। এই শিক্ষাব্রতী ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দের ২ ডিসেম্বর ইন্তেকাল করেন। ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে নারায়ণগঞ্জ তোলারাম কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে শিক্ষকতা শুরু করেন।
১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বরে কলেজ শিক্ষক সমিতির প্রতিনিধি সম্মেলনে বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতি ‘বাকশিস’-এর উৎপত্তি ঘটে। আ ফ ম খলিলুর রহমানকে সভাপতি, এম শরীফুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠিত হয়। স্বাধীন দেশের প্রথম বিপর্যয় দেখা দেয় শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষেত্রে। চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে চেইন অব কমান্ড ভেঙে দেশের শিক্ষাঙ্গনে চলতে থাকে নৈরাজ্য। পরীক্ষার হলে চলতে থাকে গণহারে নকল। এমনি পরিস্থিতিতে শিক্ষক নেতারা নকল প্রতিহত করাসহ ৬ দফা দাবি সরকারের কাছে পেশ করেন এবং উত্তরপত্র মূল্যায়নসহ পরীক্ষাসংক্রান্ত সব কাজ বর্জনের ঘোষণা দেন।
১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে ৬ জানুয়ারি সরকারের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষকেরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেন; কিন্তু শিক্ষকদের দাবি পূরণে সরকারি নির্লিপ্ততায় চূড়ান্ত স্মারকলিপি পেশ করা হয়। এতে সাড়া না দিলে ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের ১১ মে থেকে ৫ দফার ভিত্তিতে এম শরীফুল ইসলামের নেতৃত্বে সারা দেশের স্কুল-কলেজের শিক্ষক সম্প্রদায় লাগাতার ১২০ দিন কর্মবিরতিসহ ঐতিহাসিক আন্দোলন গড়ে তোলেন। ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে ১ জানুয়ারি থেকে বেসরকারি শিক্ষকদের প্রথমবারের মতো জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করে প্রারম্ভিক বেতনের ৫০ শতাংশ সরকারি কোষাগার থেকে দেয়ার যুগান্তকারী সিদ্ধান্তসহ অর্জিত হয় অভিন্ন চাকরিবিধি, যা শরীফুল ইসলামের আপসহীন নেতৃত্বের কৃতিত্ব।
১৯৮২ খ্রিষ্টাব্দে সামরিক শাসন জারি হলে শরীফুল ইসলাম, অধ্যক্ষ মাহমুদ মোকাররম হোসেন, অধ্যাপক আবদুল হাই, অধ্যাপক আবুল কাশেম প্রমুখ নেতাকে গ্রেফতার করে সামরিক জান্তা। ইলেকট্রিক শকসহ নানা নির্যাতনের পর শরীফুল ইসলাম কারাগার থেকে বের হয়ে সব নেতাকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বৈরাচারবিরোধী আপসহীন আন্দোলন গড়ে তোলেন। পরে বেগম জিয়া সরকার ’৯৫ সালে বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা ও উৎসবভাতা ঘোষণা করেন।
শরীফুল ইসলামের মস্তিষ্কপ্রসূত বিধায় তাকে ‘অবসর সুবিধার রূপকার বলা হয়;’ কিন্তু ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে সরকার পরিবর্তন হলে শিক্ষকসমাজের এই দুর্লভ অর্জনকে নতুন সরকার বাতিল করে দেয়। শিক্ষকসমাজ শরীফুল ইসলামের নেতৃত্বে অবসর সুবিধাসহ ৬ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েন। ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে বেগম জিয়া সরকার গঠন করলে বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা পুনঃপ্রবর্তন করেন। শতভাগ বেতনের দাবিতে ১ ডিসেম্বর ২০০২ থেকে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলেন শিক্ষকরা। এর নেপথ্যে ছিল ‘শিক্ষকবন্ধু’ এম শরীফুল ইসলামের সংগ্রামী নেতৃত্ব।