‘বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দ্রুত তুলে নিন’

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: ব্যাংক একীভূত করা নিয়ে অস্থিরতা, ব্যাংক খাতের বর্তমান তারল্য সঙ্কটের মতো সমস্যার সমাধান না করে বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে জনমনে আতঙ্ক তৈরির মতো পদক্ষেপের মাধ্যমে তথ্য প্রবাহ আটকানোর চেষ্টা দেশের জন্য বড় কোনো বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে জানিয়েছেন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মীরধা। 

আগের মতোই অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত হোক এমন দাবি জানিয়ে রেফায়েত উল্লাহ বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দ্রুত তুলে নিন। নইলে পেশাগত দায়িত্ব পালনের স্বার্থে সামনে কঠোর অবস্থানে যেতে বাধ্য হব।’

আজ সোমবার (২০ মে) রাজধানীর পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামে (ইআরএফ) অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম।

বর্তমান সরকার অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করার কথা বলে আসছে মন্তব্যে করে রেফায়েত উল্লাহ মীরধা বলেন, ‘৫৩ বছরের প্রথা ভেঙ্গে হঠাৎ করে বাংলাদেশ ব্যাংক সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, যা সরকারের অবস্থানের বিপরীত।  গত ২১ মার্চ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক অলিখিতভাবে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ বিষয়ে সমাধান চেয়ে ইআরএফেরপক্ষ থেকে ইতিমধ্যে গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা হয়েছে এবং দু’দফা চিঠিসহ বিভিন্নভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রায় দুই মাস হলেও সমস্যার সমাধান না করে এখন বিভিন্ন ভুল তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। এরকম বাস্তবতায় আজকের এইসংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে। এখানে আমি একটি বিষয় পরিস্কার করতে চাই। সাংবাদিকরা এর আগে নিজের কার্ড প্রদর্শনকরে বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রবেশ করতে পারতেন। এখন তা বন্ধ করা হয়েছে। হঠাৎ করে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় নানা গুজব ডালপালা মেলার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বড় কোনো দূর্ঘটনা ঘটেছে কিনা সে প্রশ্ন উঠছে।’

রেফায়েত উল্লাহ বলেন, সাংবাদিকদের লেখনির মাধ্যমে পাঠক, গবেষক, সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে প্রকৃত তথ্য জানার সুযোগ তৈরি হয়। সাংবাদিকরা অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক পর্যালোচনার মাধ্যমে সরকারের নীতি নির্ধারণে সহায়ক ভূমিকা রাখেন। বিশেষ করে কৃষি উৎপাদন, খাদ্য মজুদ ও আমদানি পরিস্থিতি, বাজার ব্যবস্থাপনা, মূল্যস্ফীতি, রিজার্ভের প্রকৃত অবস্থা, সুদহার, রাজস্ব পরিস্থিতি, সরকারি–বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানসহ বিভিন্ন তথ্যভিত্তিক বিশ্লেষণ তুলে ধরেন। আবার খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি, ব্যাংক খাতের অনিয়ম–দুর্নীতি, অর্থপাচারসহ বিভিন্ন সমস্যার তথ্য তুলে ধরলে সরকার তাতে উপকৃত হয়। নিতে পারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। এসব ক্ষেত্রে বেশিরভাগ তথ্যের উৎস কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এখন হঠাৎ করে তথ্য প্রবাহ বন্ধ করার ফলে ভুল তথ্য, অর্ধ সত্য তথ্য ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আবার একটি তথ্য পাওয়ার পর ডেস্ক অফিসারের মাধ্যমে বুঝে প্রকৃত তুলে ধরার সুযোগ সীমিত হয়ে আসছে।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশ করতে পারে কিনা তা নিয়ে কেউ–কেউ প্রশ্ন তুলেছেন জানিয়ে রেফায়েত উল্লাহ বলেন, ‘এর আগে জানতে হবে অন্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কিনা। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ, ব্যাংক অব ইংল্যান্ড, রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়াসহ বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইট অনেক সমৃদ্ধ। সেখানে অর্থনীতির সব সূচকের নিয়মিত আপডেট ছাড়াও বোর্ড মিটিংয়ের কার্যবিবরণী, বিভিন্ন ব্যাংকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাসহ সব ধরনের তথ্য প্রকাশ করা হয়। কোনো সাংবাদিক প্রশ্ন করলে দ্রুত রেসপন্স করা হয়। আবার এসব দেশের আর্থিক খাতের সুশাসনের মাত্রা অনেক উঁচুতে। পদ্ধতিগত কারণে সেখানে কোনো অনিয়ম–দুর্নীতির তথ্য আড়াল করা কঠিন। এছাড়া বেনামি ঋণ, ঋণখেলাপি, অর্থপাচারকারী বা অনিয়ম–দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত কেউ কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রবেশ করতে পারে বলে আমাদের জানা নেই। এখন বাংলাদেশে সবার জন্য উন্মুক্ত রেখে কেবল সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে আসলে কি তথ্য আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে আমরা সে প্রশ্ন রাখতে চাই।’

রেফায়েত উল্লাহ আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্বশাসন হারানোর কারণে আর্থিক খাতের দূরবস্থার কথা বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ, গবেষকদের বক্তব্যে উঠে এসেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ব্যবস্থাপনায় দূর্বলতা, তদারকি ব্যবস্থার ভঙ্গুরতা, বিভিন্ন গোষ্ঠীর চাপে নীতির ধারাবাহিকতা রাখতে না পারার বিষয়টি সবার জানা। ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে তড়িঘড়ির কারণে অস্থিরতা, ব্যাংক খাতের বর্তমান তারল্য সঙ্কটের বিষয়টি সবার জানা। এসব সমস্যার সমাধান না করে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কারণে জনমণে আতঙ্ক আরও বাড়বে। তথ্য প্রবাহ আটকানোর চেষ্টা দেশের জন্য বড় কোনো বিপদ ডেকে আনতে পারে। কারও জন্য যা কাম্য নয়।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জোর করে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের পদত্যাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের করা হুঁশিয়ারি - dainik shiksha জোর করে প্রতিষ্ঠান প্রধানদের পদত্যাগ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের করা হুঁশিয়ারি রাজনীতি করি না, ভবিষ্যতেও করবো না: ঢাবির নতুন ভিসি - dainik shiksha রাজনীতি করি না, ভবিষ্যতেও করবো না: ঢাবির নতুন ভিসি চার তারিখের মধ্যে মাদরাসা শিক্ষকদের এমপিওর আবেদন - dainik shiksha চার তারিখের মধ্যে মাদরাসা শিক্ষকদের এমপিওর আবেদন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য অধ্যাপক আমানুল্লাহ - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন উপাচার্য অধ্যাপক আমানুল্লাহ দীপু-টিপু-রতন সিন্ডিকেটের ঘুষের সাম্রাজ্য - dainik shiksha দীপু-টিপু-রতন সিন্ডিকেটের ঘুষের সাম্রাজ্য এনসিটিবির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের শাস্তি দাবি বৈষম্যবিরোধীদের - dainik shiksha এনসিটিবির দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের শাস্তি দাবি বৈষম্যবিরোধীদের কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.011816024780273