প্রভাষকের অবৈধ নিয়োগ, অধ্যক্ষকে নিয়োগের ফল প্রদর্শনের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত কলেজের প্রভাষক কানিজ ফাতেমার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে নিয়োগ লাভ ও এমপিওভুক্তির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগটি ইতিমধ্যে তদন্ত করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। কানিজ ফাতেমা তথ্য গোপন করে নিয়োগ পেয়েছেন, এমন তথ্য উঠে এসছে তদন্ত প্রতিবেদনে। এ প্রেক্ষিতে কলেজটির অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মেহেববুল্লাহ খানকে প্রভাষক কানিজ ফাতেমার নিয়োগ পরীক্ষার ফল, মাস্টার্স পরীক্ষার সনদ ও নম্বর পত্র প্রদর্শন এবং নিয়োগের বিষয়ে মতামত প্রদানের নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। 

প্রভাষক কানিজ ফাতেমার বিরুদ্ধে অভিযোগটি করেছেন কলেজের অপর এক প্রভাষক। অভিযোগে বলা হয়, কানিজ ফাতেমার নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ নয়। বানোয়াট নম্বর ফর্দে তাকে বাছাই পরীক্ষায় প্রথম দেখানো হয়েছে। এ কাজে সহায়তা করেছেন কলেজটির অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মেহেববুল্লাহ খান। কানিজ ফতেমা নিয়োগের যোগ্যতা ছাড়া আবেদন করে প্রভাষক পদে নিয়োগ পেয়েছেন। অবৈধভাবে নিয়োগ নিয়ে এমপিওভুক্ত হয়েছেন তিনি। অভিযোগে আরও বলা হয়, প্রভাষক কানিজ ফাতেমা কলেজে অনুপস্থিত থাকেন। অধ্যক্ষের প্রত্যক্ষ সহায়তায় তিনি কলেজের ও সরকারি টাকা আত্মসাৎ করছেন। 

দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১০ মার্চ গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত কলেজে প্রভাষক পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। এ প্রেক্ষিতে কানিজ ফাতেমা প্রভাষক পদে কলেজটিতে ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১২ মার্চ আবেদন করেন। একই বছর ২৫ মার্চ নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ২৬ মার্চ কলেজটির গভর্নিং বডির সভায় নিয়োগ পরীক্ষায় কৃতকার্যদের নিয়োগের সুপারিশ করা হয়। ওই বছর ১৩ জুন নিয়োগ পত্র দেয়া হয় কানিজ ফাতেমাকে। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১ জুলাই তিনি দর্শনের প্রভাষক পদে কলেজটিতে যোগদান করেন। ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে ১২ মার্চ এমএ পাস হিসেবে প্রভাষক পদে আবেদন করলেও তার মাস্টার্সের সার্টিফিকেটে ফল প্রকাশ হয় ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুন। তথ্য গোপন করে প্রভাষক পদে চাকরি বাগিয়ে এমপিওভুক্ত হয়েছেন প্রভাষক কানিজ ফাতেমা (ইনডেক্স নম্বর ৪৩৮৮৮৬)। এভাবেই এমপিওর নামে সরকারি টাকা আত্মসাৎ করে আসছেন তিনি। আর এসব কাজে সার্বিক সহায়তা করেছেন কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মোহেবুল্লাহ খান। জানা যায়, তারা সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী।

অভিযোগটি আমলে নিয়ে তা তদন্ত করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। করা হয় তদন্ত কমিটি। অভিযোগটি সরেজমিনে তদন্ত করে অধিদপ্তরে প্রতিবেদন দাখিল করেছেন কমিটির প্রধান ও মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের কুমিল্লা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. শাহ আলম। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, কানিজ ফাতেমার নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ নয়। নিয়োগে তথ্য গোপন করা হয়েছে। কানিজ ফাতেমা নির্ধারিত বিষয়ে ক্লাস পরিচালনায় বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন। 

এ প্রেক্ষিতে ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের ৮ জুন কানিজ ফাতেমাকে শোকজ করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। একই বছর ৭ জুলাই শোকজের জাবাব দেন প্রভাষক কানিজ ফাতেমা। কিন্তু অদৃশ্য কারণে বন্ধ হয়ে যায় তদন্ত প্রক্রিয়া তথা ব্যবস্থা গ্রহণের অগ্রগতি। 

২০১৮ খ্রিস্টাব্দের ১৯ ডিসেম্বর অভিযুক্ত শিক্ষককের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে আবেদন করেন অভিযোগকারী প্রভাষক মো. মফিজুল ইসলাম। আবেদনে বলা হয়, তদন্তের পর ১৭ মাস কেটে গেলেও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি অভিযুক্ত প্রভাষকের বিরুদ্ধে।

এ প্রেক্ষিতে গৃদকালিন্দিয়া হাজেরা হাসমত কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ মোহেবুল্লাহ খানকে প্রভাষক কানিজ ফাতেমার নিয়োগ পরীক্ষার ফল, মাস্টার্স পরীক্ষার সনদ ও নম্বর পত্র প্রদর্শন এবং নিয়োগের বিষয়ে মতামত প্রদানের নির্দেশ দেয় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। ৩ কর্মদিবসের মধ্যে অধ্যক্ষকে কানিজ ফাতেমার নিয়োগ পরীক্ষার ফল, মাস্টার্স পরীক্ষার সনদ ও নম্বর পত্র প্রদর্শন করতে বলা হয়েছে তাকে।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রভাষক কানিজ ফাতেমা বলেন, অধ্যক্ষ আমার স্বামী। আমরা(!) চিঠির মতামত দিবো। আর চিঠির জবাব দেয়ার আগে কোন মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন তিনি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023689270019531