প্রভোস্টের দায়িত্বে জাবির ছাত্রাবাস, তদারকি করেন ‘বড়ভাই’

জাবি প্রতিনিধি |

বাংলাদেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় বলা হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে (জাবি)। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাদেশ অনুযায়ী প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ক্লাস শুরুর প্রথম দিন থেকেই একটি সিট বরাদ্দ দেয়া হবে এবং কোনো শিক্ষার্থী যদি হলে না থাকতে চায় তাহলে তাকে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত নিয়ে বাইরে থাকতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা এর ভিন্ন। মেয়েদের হলগুলোতে ছয় মাস কিংবা এক বছর গণরুমে থাকার পর নিজের বরাদ্দ সিটে ওঠার ব্যবস্থা থাকলেও ছেলেদের হলগুলোতে এক ছাত্রকে বরাদ্দকৃত সিটে ওঠার জন্য অপেক্ষা করতে হয় তিন থেকে সাড়ে তিন বছর। অর্থাৎ একজন ছাত্র তার বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের মাঝামাঝি অথবা চতুর্থ বর্ষে তার বরাদ্দ আসনে উঠতে পারে। প্রথম বর্ষে ছাত্রদের থাকতে হয় গণরুমে, দ্বিতীয় বর্ষে মিনি গণরুমে (৪ জনের কক্ষে ১২-১৫ জন), তৃতীয় বর্ষে ৪ জনের রুমে ৬ জন এবং পরবর্তী সময়ে সিট খালি হলে তার জন্য একক সিটের বরাদ্দ দেয়া হয়।

ছাত্রদের আসন বণ্টনের পুরো বিষয় সম্পর্কে কোন খোঁজই রাখেন না কোনো হলের প্রভোস্ট। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রত্যেকটি হলে সক্রিয় রয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, জাবি শাখার তিনটি গ্রুপ। জাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানার একটি গ্রুপ যেটি পরিচিত প্রেসিডেন্ট প্যানেল নামে, সাধারণ সম্পাদক আবু সুফিয়ান চঞ্চলের একটি গ্রুপ যেটি পরিচিত সেক্রেটারি প্যানেল নামে, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইনের নেতৃত্বে একটি উপগ্রুপ রয়েছে যেটি মূলত সেক্রেটারি প্যানেলের বিদ্রোহী গ্রুপ নামে পরিচিত। সাধারণত এই তিনটি গ্রুপের নিয়ন্ত্রণেই ভাগাভাগি হয়ে থাকে হলগুলোর সিট। তারা নিজেদের মধ্যে হলের সিট ভাগ করে নেয় এবং সেখানে পছন্দ অনুযায়ী নিজেদের অনুসারীদের হলে থাকার অনুমতি দেয়। মাঝে মাঝে হলগুলোতে সিটের দখল নেয়াকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের গ্রুপগুলোর মারামারির ঘটনারও নজির রয়েছে।

এর বাইরে হলে সিট পাওয়ার প্রচলিত কোনো নিয়ম নেই উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের একজন ছাত্র বলেন, ‘এটা বিশ্বদ্যিালয়ে ওপেন সিক্রেট। প্রথম বর্ষের একজন শিক্ষার্থীকে হলে ওঠার প্রথম দিন থেকেই র‌্যাগিং নামক নির্যাতনের ভেতর দিয়ে যেতে হয়। একজন ছাত্র যখন প্রথম দিন থেকেই দেখে প্রশাসন তার নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তখন সে আস্তে আস্তে এই সিস্টেমটাকেই নির্ভুল ভাবতে শুরু করে। এবং সে নিজেই এটাকেই সমর্থন করা শুরু করে। রাজনৈতিক বিবেচনায় নয় আমরা সিট চাই মেধা ও প্রয়োজনের ভিত্তিতে।’
 
যারা গণরুমের নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে রুম নিয়ে থাকে তাদের পরবর্তী সময়ে হলে সিট নেয়ার জন্য পোহাতে হয় দুর্ভোগ। হলে নিজের বরাদ্দ আসনে ওঠার জন্য তখন তাদের দৌড়াতে হয় ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতাদেও পেছনে এবং শিকার হতে হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের।

কেন হল প্রভোস্টরা ছাত্রদের সিট দেয়া সংক্রান্ত বিষয়গুলোর দেখভাল করেন না? এমন প্রশ্নের জবাবে হল প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক বশির আহমেদ বলেন, ‘মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ হওয়ার সাতদিনের মধ্যেই একজন শিক্ষার্থীর হলের সিট ছেড়ে দেয়ার নিয়ম। কিন্তু রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাকর্মীদের বেশিরভাগই তাদের শিক্ষাজীবন শেষ করে ফেলেছেন। দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্র হলগুলোতে এই সঙ্কট বিদ্যমান। আমরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে, এই সঙ্কট সমাধানের চেষ্টা করছি। আমরা প্রত্যেকটা হলের আবাসিক শিক্ষকদের চিঠি দিয়েছি রাত সাড়ে আটটা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত তারা যেন হলে থেকে ছাত্রদের সুবিধা-অসুবিধার বিষয়ে খোঁজ নেন।’

এদিকে হলের সিট সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশাসনের উদাসীনতা এবং প্রত্যেক হলের ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতাদের চারজন বা দুইজনের রুমে একা থাকার কারণে আবাসিক হলগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র আসন সঙ্কট। এদিকে সব আবাসিক হলগুলোতেই রয়েছে ছাত্রলীগের পলিটিক্যাল ব্লক, যেখানে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয় এমন কেউ থাকতে পারে না।

এ বিষয়ে জাবি শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুয়েল রানা বলেন, ‘আমরা যাতে আমাদের সাংগঠনিক কাজ ভালোভাবে করতে পারি এজন্য হল প্রশাসনের অনুমতিক্রমেই আমরা যারা ছাত্রলীগ করি তারা একসঙ্গে থাকার চেষ্টা করি। ছাত্রলীগ কখনও হলের সিট বণ্টনে সঙ্গে জড়িত নয়, তবে যদি হল প্রশাসন চাই আমরা সাধারণ ছাত্রদের সিট প্রাপ্তির ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে থাকি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রমের ৩১ পাঠ্যবইয়ে ১৪৭ ভুল বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ - dainik shiksha বজ্রপাতে মাদরাসার ২১ ছাত্র আহত, হাসপাতালে ১১ যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি - dainik shiksha যতো লিখেছি, ছিঁড়েছি তার বেশি তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি - dainik shiksha তত্ত্বাবধায়ককে বাধ্য করে ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই কবির জন্মবার্ষিকী পালনের নির্দেশ শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই - dainik shiksha শিক্ষকদের চাকরির মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেই বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী - dainik shiksha বিদ্যালয়ের ক্লাস থামিয়ে ভোট চাইলেন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027899742126465