প্রয়োজন ছাড়াই ৭ শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার চেষ্টার অভিযোগ চবি ভিসির বিরুদ্ধে

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক, চবি |

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক, চবি : চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও ৭ জন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে উপাচার্য শিরীণ আখতারের বিরুদ্ধে। আগামী সোমবার বিভাগের শিক্ষকদের সম্মতি না থাকার পরেও ৮৮ জন প্রার্থীকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডেকেছে কর্তৃপক্ষ।

শুধু তা–ই নয়, বর্তমানে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদভুক্ত এ বিভাগে শিক্ষার্থী হতে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে ন্যূনতম জিপিএ লাগে ৩.৫। তবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক হওয়ার জন্য ন্যূনতম জিপিএ নির্ধারণ করা হয়েছে ৩.০০। এ নিয়ে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের চলছে নানা আলোচনা। বাংলা বিভাগের শিক্ষকেরাই বলছেন, শিক্ষার্থীর চেয়ে কম যোগ্যতায় শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা হাস্যকর।

বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ, সংবিধি ও শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী, কোন বিভাগে কতজন শিক্ষক দরকার হবে, তা নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগের পরিকল্পনা কমিটি। এরপর শূন্য পদের বিপরীতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী আবেদনকারীদের তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়। এরপর এসব তথ্য পাঠানো হয় নিয়োগ বোর্ডে। বোর্ড প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেয় এবং নিয়োগের সুপারিশ করে। পরে সিন্ডিকেট সভায় নিয়োগের চূড়ান্ত অনুমোদন হয়। তবে বাংলা বিভাগের ক্ষেত্রে এসব নিয়ম মানা হয়নি। বিজ্ঞপ্তি দেওয়া, প্রার্থী বাছাই সবকিছু কর্তৃপক্ষই করেছে। কীভাবে প্রার্থী বাছাই করলেন, যোগ্যতা নির্ধারণ করলেন এরও কোনো সদুত্তর দেননি কর্তৃপক্ষের কেউ।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১২ জানুয়ারি ও গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি বাংলা বিভাগে শিক্ষকের নিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে কি না, তা জানতে চেয়ে দুই দফা বিভাগকে চিঠি দিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। এ চিঠি পাওয়ার পর গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি সভায় বসে বিভাগের প্ল্যানিং কমিটির সদস্যরা। এ কমিটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগের প্রয়োজন নেই বলে সিদ্ধান্ত নেয়। পরে এ সিদ্ধান্ত ওই দিনই কর্তৃপক্ষকে জানায় বিভাগের তৎকালীন সভাপতি মোহাম্মদ শফিউল আযম।

তবে পরিকল্পনা কমিটির এ সিদ্ধান্ত না মেনেই চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি ওই বিভাগে ৭ শিক্ষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। এরপর প্রার্থীদের আবেদন যাচাই-বাছাই করতে চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর আবার বিভাগকে চিঠি দেয় কর্তৃপক্ষ। তবে আবেদন যাচাই করতে অস্বীকৃতি জানায় বিভাগের পরিকল্পনা কমিটি।


১০ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রারকে দেওয়া এক চিঠিতে বিভাগের বর্তমান সভাপতি তাসলিমা বেগম জানান, প্ল্যানিং কমিটির সম্মতি না থাকার পরও বিজ্ঞপ্তি দেওয়াটা অনাকাঙ্ক্ষিত। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দের অধ্যাদেশ পরিপন্থী। এ ছাড়া শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতার ক্ষেত্রে প্ল্যানিং কমিটি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক মিলিয়ে ন্যূনতম জিপিএ ৮.০০ দেওয়ার সুপারিশ করেছিল। কিন্তু বিজ্ঞপ্তিতে জিপিএ ৭.০০ উল্লেখ করা হয়েছে, যা শিক্ষক নিয়োগের জন্য মানসম্মত নয়।

জানতে চাইলে বিভাগের সভাপতি তাসলিমা বেগম বলেন, বর্তমানে বিভাগে শিক্ষক রয়েছেন ১৭ জন। এসব শিক্ষকের মধ্যেই ইউজিসির টিচিং লোড নীতিমালা অনুযায়ী ক্লাস দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। শিক্ষক বেশি থাকায় ১০টি ক্লাসের জায়গায় ৩টি ক্লাস নিতে হচ্ছে। এর মধ্যে নতুন শিক্ষকের একেবারেই প্রয়োজন নেই। বাংলা বিভাগ চালাতেও কোনো সমস্যা হচ্ছে না। এ সবকিছু বিবেচনায় তাঁরা শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে রাজি হননি।

প্রয়োজন না থাকার পরও কেন বাংলা বিভাগে শিক্ষক দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, এ নিয়ে মন্তব্য জানতে চেয়ে উপাচার্য শিরীণ আখতারের কার্যালয়ে পরপর তিন দিন গেলেও তাঁর সাক্ষাৎ পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে অন্তত ১০ বার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠালেও সাড়া দেননি। শিক্ষক নিয়োগ শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. হাছান মিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বিভাগের দ্বিমত থাকার পরও শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টায় উপাচার্যের বিশেষ স্বার্থ আছে বলে মনে করেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী। তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক লাগবে কি লাগবে না, সেটি বিভাগের শিক্ষকেরা বুঝবেন। কারণ, বিভাগের শিক্ষকেরাই ক্লাস নেন, প্রয়োজন–অপ্রয়োজন বোঝেন। উপাচার্যের বোঝার কথা নয়। যদি উপাচার্য বিশেষভাবে নিয়োগ দিতে তৎপর হন, তাহলে বুঝতে হবে, তাঁর বিশেষ কোনো স্বার্থ সেখানে থাকতে পারে। উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মকে তোয়াক্কা করছেন না, তিনি নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী সবকিছু করছেন। এ ঘটনাও আরেকটি প্রমাণ।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
আইনের মারপ্যাঁচে অনিশ্চিত ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন - dainik shiksha আইনের মারপ্যাঁচে অনিশ্চিত ১৯তম শিক্ষক নিবন্ধন ‘ঢাবির ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হচ্ছে শিগগিরই’ - dainik shiksha ‘ঢাবির ক্লাস ও পরীক্ষা শুরু হচ্ছে শিগগিরই’ হাই-টেক পার্কের নাম হবে জেলার নামে: উপদেষ্টা নাহিদ - dainik shiksha হাই-টেক পার্কের নাম হবে জেলার নামে: উপদেষ্টা নাহিদ দীপু মনির নামে আরেক মামলা, আসামি ৬০০ - dainik shiksha দীপু মনির নামে আরেক মামলা, আসামি ৬০০ স্কুল-কলেজে বিশৃঙ্খলা : কোথাও জবরদস্তি কোথাও পালিয়ে থাকা - dainik shiksha স্কুল-কলেজে বিশৃঙ্খলা : কোথাও জবরদস্তি কোথাও পালিয়ে থাকা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002579927444458