দৈনিক শিক্ষাডটকম ঢাবি : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২০–২১ সেশনের কিছু শিক্ষার্থী ‘প্রলয় গ্যাং’ নামে একটি অপরাধী সংগঠন গড়ে তুলেছেন। এই গ্রুপের মারধরের শিকার হয়েছিলেন জুবায়ের ইবনে হুমায়ুন। পরে নিজেই গ্রুপে যোগ দিয়েছেন। এবার কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে এক শিক্ষার্থীকে মারধর করেছেন তিনি। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর মা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছরের মার্চে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল চত্বরে প্রলয় গ্যাংয়ের মারধরের শিকার হন জুবায়ের ইবনে হুমায়ুন। তিনিই সম্প্রতি ৮-১০ জনকে সঙ্গে নিয়ে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মীর আলভি আরসালানকে মারধর করেছেন। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা করেছেন ভুক্তভোগীর মা ডা. রেহেনা আক্তার। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কনসালট্যান্ট।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুর মোহাম্মদ। তিনি বলেন, ‘একটি মামলা হয়েছে। যথাযথ প্রক্রিয়ায় তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলায় আসামিরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল এবং শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী তবারক মিয়া, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের শিক্ষার্থী মুরসালিন ফাইয়াজ, সাকিব, জুবায়ের এবং স্যার এএফ রহমান হলের শিক্ষার্থী জুবায়ের ইবনে হুমায়ুনসহ অজ্ঞাতনামা ৮ থেকে ১০ জন।
আসামি জুবায়ের ইবনে হুমায়ুন চলতি বছরের ২৫ মার্চ রাতে প্রলয় গ্যাংয়ের একদল সদস্যদের হাতে মারধরের শিকার হন। এ ঘটনায় শাহবাগ থানায় মামলা করেন তাঁর মা সাদিয়া আফরোজ খান।
অনুসন্ধানে ঢাবি ক্যাম্পাস এলাকার পানির ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, পানির পাম্পের কক্ষ দখল, ঢাবি মেডিকেলের কক্ষ দখল, ঢাকা মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসক সাজ্জাদকে মারধরসহ বিভিন্ন অপকর্মে প্রলয় গ্যাংয়ের জড়িত থাকার তথ্য বেরিয়ে আসে। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় একটি তদন্ত কমিটিও করেছে। তদন্তে প্রতিবেদন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জমাও দিয়েছে কমিটি।
এজহারে নাম থাকার বিষয়ে জানার জন্য জুবায়ের ইবনে হুমায়ুনকে ফোনকল করা হলে নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। তাঁর মা সাদিয়া আফরোজ খানকে কল করলে তিনি রিসিভ করেননি।
তবে প্রলয় গ্যাং থেকে বেরিয়ে আসা একাধিক সদস্য বলেন, একসময়ের ভুক্তভোগী জুবায়ের ইবনে হুমায়ুন এখন প্রলয় গ্যাংয়ের সদস্যদের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করেন, আড্ডা দেন।
মামলার এজহারে ভুক্তভোগীর মা ডা. রেহেনা উল্লেখ করেন, গত ৮ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পশ্চিম পাশে বসে মীর আলভী আরসলান বান্ধবীর গল্প করছিলেন। এ সময় তবারক, মুরসালিন, সাকিব, জুবায়ের ও জোবায়ের ইবনে হুমায়ূনসহ বেশ কয়েকজনের একটি দল তাঁদের হেনস্থা করে ও ভয়ভীতি দেখায়। আলভী প্রতিবাদ করলে তাঁকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নির্জন স্থানে নিয়ে নির্যাতন করে। রড, লাঠি ও কাঠ দিয়ে তাঁকে পেটানো হয়। তবারক আলভীর পকেটে থাকা ২ হাজার ৫০০ টাকা নিয়ে সরে যান। মুরসালিন আলভীর কাছে থাকা ২৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি স্মার্টফোন কেড়ে নিয়ে ভেঙে ফেলেন। সবশেষে আলভীর ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র পুড়ে ফেলে অভিযুক্তরা। গুরুতর অবস্থায় আলভীকে ধানমন্ডির পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়, বর্তমান আইসিউতে রয়েছেন।
নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে ডা. রেহেনা উল্লেখ করেন, এক নম্বর আসামি তবারক রড দিয়ে আলভীর দেহের বিভিন্ন জায়গায় পিটিয়ে রক্তাক্ত করেন। মুরসালিন লাঠি দিয়ে আঘাত করে আলভীর ডান হাতের কনুইয়ের হাড় ভেঙে ফেলেন। সাকিব ও আরও কয়েকজন মিলে আলভীর গায়ে সিগারেটের আগুন লাগিয়ে দেন। জুবায়ের আলভীর বুকে ও পিঠে লাথি মারেন। আলভীর মুখ, মাথা, ঠোঁট ও চোখে ঘুষি মেরে রক্তাক্ত করেছে তারা।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, ‘একটি ঘটনা শুনেছি, শাহবাগ থানায় মামলাও হয়েছে। মামলার কপি আমার কাছে আছে। যেহেতু এখন থানায় চলে গেছে—যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার সেটির ব্যবস্থা হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ও সেটি দেখবে।’