ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে খেলোয়াড় কোটায় সুযোগ পাওয়া ৪৯ শিক্ষার্থীর ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ হয়নি। গত ১৬ আগস্ট এই শিক্ষাবর্ষের ক্লাস শুরু হলেও ওই শিক্ষার্থীরা ক্লাসে যোগ দিতে পারছেন না। ফলে বিভাগের পড়ালেখা ও সেশনাল নাম্বার থেকে বঞ্চিত হয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা।মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) আমাদেরসময় পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন আশিকুল হক রিফাত।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র অনুযায়ী, কলা অনুষদ, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের মোট ২০টি বিভাগে খেলোয়াড় কোটায় ৪৯ শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পায়। বিভাগগুলো হলো- ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, ইংরেজি, সমাজবিজ্ঞান, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, ইতিহাস, ইসলামিক স্টাডিজ, সংস্কৃত, পপুলেশন সায়েন্সেস, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, ক্রিমিনোলজি, ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারোবিলিটি স্টাডিজ, শিক্ষা ও গবেষণা, ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা, বাংলা, দর্শন, লোক প্রশাসন এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে বিভাগগুলোতে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে সিমেস্টার ও মিড টার্ম পরীক্ষা শুরু হবে। সে কারণে পরীক্ষার প্রস্তুতি ছাড়া এবং সেশনাল নাম্বার বাদে তাদের পরীক্ষায় বসতে হবে। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক বছর পিছিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, খেলোয়াড় কোটায় চান্স পাওয়া সবার অবস্থা খারাপ। কারও ভর্তি সবেমাত্র শেষ হয়েছে। আবার কারও ভর্তি কার্যক্রম এখনো শেষ হয়নি। সে জন্য কেউ ক্লাস শুরু করতে পারেনি। বিভাগগুলো থেকে ইতোমধ্যে সিমেস্টার ও মিডটার্ম পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। পরীক্ষায় বসার জন্য বিন্দুমাত্র প্রস্তুতি নেই। আর আমাদের সেশনালের মার্কের বিষয়ে কোনো ধরনের সিদ্ধান্ত আসেনি।
খেলোয়াড় কোটায় সুযোগ পাওয়া গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, ভর্তি কার্যক্রম সবেমাত্র শেষ হলো। এদিকে আগামী মাসের ৭ তারিখ থেকে সিমেস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু। ক্লাস করতে না পারায় পড়াশোনা কিছু হয়নি। কীভাবে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নেব, তাও বুঝতেছি না। আর সেশনালের ৫০ নাম্বার পাব কিনা, তা নিয়ে শঙ্কায় আছি।
সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ক্লাস না করায় যে শিটগুলো পাচ্ছি, সেগুলো কিছুই বুঝতেছি না। ক্লাস না করলে এগুলো বুঝা সম্ভব না। এগুলো নিয়ে খুব বিপাকে পড়েছি।
বিশ^বিদ্যালয়ের নিজস্ব কিছু পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে খেলোয়াড় কোটার শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে কালক্ষেপণ হয়েছে বলে জানান কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির। তিনি বলেন, আমরা মিডটার্ম নেওয়ার জন্য বিভাগগুলোকে অনুরোধ করব। আর অ্যাসাইনমেন্ট ও প্রেজেন্টেশনের বিষয়ে শিক্ষার্থীরা বিভাগ বরাবর দরখাস্ত করলে সেগুলোর ব্যবস্থা করা হবে।
এ বিষয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমানকে একাধিকবার ফোন করে পাওয়া যায়নি।
সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. গোলাম আজম বলেন, ভর্তি প্রক্রিয়াটি বিশ্ববিদ্যালয় বিলম্ব করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিভাগ তাদের জন্য ব্যবস্থা রাখবে। আশা করি, কোনো সমস্যা হবে না।
শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মো. আবদুল হালিম বলেন, আমাদের ডিসেম্বরের ১১ তারিখ সেমিস্টার পরীক্ষা শেষ হয়ে যাবে। ওই শিক্ষার্থীদের ভর্তি নিতে হবে, এটা তার অধিকার। এখন ভর্তিটা কোথায় করা হবে? সেকেন্ড সেমিস্টারে না ফাস্ট সেমিস্টারে। সেকেন্ড সেমিস্টারে ভর্তি হলে তার ফাস্ট সেমিস্টারের কী হবে? অথবা আগামী বছরে ফাস্ট সেমিস্টারে ভর্তি হতে হবে। আমাদের কাছে ডিন অফিস থেকে ২১ তারিখ একটি চিঠি এসেছে। এখন এই সমস্যাটি নিয়ে আমরা মহাসমস্যার মধ্যে পড়েছি।
সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামালকে একাধিক ফোন ও মেসেজ পাঠানো হলে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।