দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: সরকারের প্রশাসনের সাংগঠনিক কাঠামোতে আমূল পরিবর্তন আনা হয়েছে। এজন্য ‘বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন) গঠন ও ক্যাডার আদেশ, ২০২৪’ জারি করেছে সরকার। এতদিন ‘বিসিএস (অ্যাডমিনিস্ট্রেশন) কম্পোজিশন অ্যান্ড ক্যাডার রুল, ১৯৮০’ দিয়ে এ ক্যাডার সার্ভিস পরিচালিত হলেও নতুন আদেশের মাধ্যমে পুরোনো আদেশ বিলুপ্ত করা হলো। বিলুপ্ত আদেশে প্রশাসন ক্যাডারের পদ ছিল ৩ হাজার ৯৭টি। নতুন আদেশে তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৭ হাজার ৭৬টি। নতুন আইনের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পদও সিভিল সার্ভিসের তপশিলভুক্ত করে পদের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শ্যামল সরকার।
প্রতিবেদনে আরও জনা যায়, এছাড়া পুরোনো সব নিয়োগবিধিতে সরকারের চাকুরেদের কর্মচারী হিসেবে উল্লেখ করা হলেও নতুন আইনে তাদের কর্মকর্তা হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। জনপ্রশাসনে বিভিন্ন সময়ে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনের দাবি থাকলেও প্রশাসন ক্যাডারের ইতিবাচক সংস্কারের ফলে আন্তঃবৈষম্য আরও বাড়বে বলে মনে করছেন অনেকেই।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দের তুলনায় প্রশাসনের আকার বেড়েছে। প্রশাসন ক্যাডারের সঙ্গে ইকোনমিক ক্যাডার একীভূত করা হয়েছে। এর বাইরে আরও কয়েকটি ক্যাডার একীভূত হওয়ার প্রস্তাবও জমা আছে। সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন) গঠন ও ক্যাডার আদেশ সংশোধন ছাড়া এখন আর কোনো উপায় ছিল না।
প্রসঙ্গত, জনপ্রশাসনে ২৬টি ক্যাডার রয়েছে। এসব ক্যাডারের উপক্যাডারও সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রশাসন ক্যাডার আদেশ নতুন করে জারি করা হলেও অন্যান্য ক্যাডার আদেশ সংশোধন করা হয়নি। বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যে প্রভাব, কাজের সুযোগ এবং আর্থিক সুবিধায় ভিন্নতা থাকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রশাসন ক্যাডারের বাইরে থাকা ক্যাডাররা। নতুন আদেশ কার্যকরের পর এ ক্ষোভ আরও বাড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন।
সংশোধিত ক্যাডার আদেশে প্রশাসন ক্যাডারের লাইন পদের সঙ্গে আরও কিছু পদ যোগ করা হয়েছে। বাড়তি পদ যোগ করতে গিয়ে ভিন্ন আইনে সৃষ্ট পদও এ আদেশ দিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের তপশিলভুক্ত করা হয়েছে। যেমন বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি) ভিন্ন একটি আইনি প্রতিষ্ঠান হলেও এর রেক্টর পদটি ঐ আইন দিয়ে সৃষ্ট। আইনে উল্লেখ আছে সরকার একজন রেক্টর নিয়োগ করবে এবং তিনি সরকারের সচিব হবেন। কিন্তু প্রশাসন ক্যাডারের তালিকাভুক্ত পদ হয়ে যাওয়ায় এখন এ পদে শুধু প্রশাসন ক্যাডার থেকেই নিয়োগ দিতে হবে। এসআরও দিয়ে একটি আইনি আদেশকে বাদ দেওয়ায় এখন এ আইন সংশোধন করতে হবে। একইভাবে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদটিকেও প্রশাসন ক্যাডারের তফসিলভুক্ত করা হয়েছে।
সরকারের চাকুরেরা কর্মচারী হিসেবে পরিচিত। অন্যান্য নিয়োগবিধিতেও কর্মচারী শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। নতুন আদেশে কর্মকর্তা শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। ডেপুটি কমিশনার পদটি প্রশাসন ক্যাডারের শিডিউলভুক্ত পদ ছিল। আগের আইনে জেলা প্রশাসক নামের কোনো অস্তিত্ব ছিল না। নতুন আইনে ডেপুটি কমিশনার বাদ দিয়ে জেলা প্রশাসক নামে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সংবিধানের ১৪০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) সঙ্গে পরামর্শ করে এ আদেশ জারি করা হয়েছে মর্মে নতুন ক্যাডার আদেশের শুরুতে বলা হয়েছে। তবে প্রশাসন ক্যাডারের এক কর্মকর্তা বলেছেন, ‘পিএসসি কীভাবে অন্য আইন বা বিধিভুক্ত পদকে এর অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দিতে পারে?’ অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যে পদগুলোর ভিত্তি আইন বা বিধি, সেই পদ অন্য একটি ক্যাডারের করা যায় না। এমন কোনো আদেশ আইন বিধি করা উচিত নয় যা বিদ্যমান আদেশ, আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’
প্রশাসন ক্যাডারের বাইরের ভিন্ন একটি ক্যাডারের কর্মকর্তা বলেন, ‘সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদ ভূমি মন্ত্রণালয়ের কোনো দপ্তর বা সংস্থার সাংগঠনিক কাঠামোর পদ নয়। উপজেলা ভূমি অফিস নামে একটি বিধি আশির দশকে করা হয়েছে। সে অনুযায়ী উপজেলা ভূমি অফিস চলে। সেখানে ভূমি অফিসার, কানুনগো, নাজির, সার্ভেয়ার এসব পদ আছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) নামে কোনো পদ নেই। ভূমি অফিস চালানোর জন্য জেলা প্রশাসক একজন সহকারী কমিশনারকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন, যেটা এখনো চলছে। এখন ভূমি মন্ত্রণালয়ের চাহিদা অনুযায়ী সহকারী কমিশনারদের দায়িত্ব পালনের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়।’
রেল ক্যাডারের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘সিভিল সার্ভিসের ক্যাডার আদেশ সংশোধন করা বেশ জটিল কাজ। কারণ রেলে দুটি ক্যাডার রয়েছে। একটি ইঞ্জিনিয়ারদের, অন্যটি সাধারণদের বাণিজ্যিক জায়গা থেকে। এ দুই ক্যাডারের সঙ্গে পরে আরো একটি সাবক্যাডার যোগ করা হয়েছে। এখন একটা বড় জটিলতা হচ্ছে, রেলের ডিজি বা এডিজি হবেন কোন ক্যাডার থেকে। দুই ক্যাডারই সমান দাবিদার। প্রশাসন ক্যাডার যেভাবে তাদের নিজের ক্যাডার রুল সংশোধন করেছে বা নতুন করে করেছে, একইভাবে অন্য ক্যাডারদের রুলটাও সংশোধন করতে হবে। কারণ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সব ক্যাডারের মন্ত্রণালয়।
সামগ্রিক বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, এটি প্রশাসনের বড় সংস্কার। এর ফলে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য থাকবে না। পদোন্নতির ক্ষেত্রে সিভিল সার্ভিসে যুক্ত সকলেই সমান সুযোগ পাবেন।