প্রশ্নফাঁসের তদন্ত নিয়ে সিআইডি ও পিএসসি মুখোমুখি

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

চাকরির নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ও বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে পিএসসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জড়িত থাকার বিষয়টি গত জুলাইয়ে প্রকাশ্যে আনে সিআইডি। ওই ঘটনার পর তদন্ত কমিটি করে পিএসসি। তবে সে তদন্তে প্রশ্নপত্র ফাঁসের প্রমাণ মেলেনি। এমনকি গ্রেফতার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায় স্বীকার করে আদালতে দেওয়া জবানবন্দিও আমলে নেয়নি তদন্ত কমিটি।

পিএসসি অভিযোগ করেছে, তিন দফায় সিআইডি কর্মকর্তাদের বক্তব্যের জন্য ডাকলেও তাতে সংস্থাটির কেউ সাড়া দেননি। সিআইডির অভিযোগ, শুরু থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে পিএসসি। সিআইডির তদন্তেও তারা সহযোগিতা করছে না।

গত ৫ জুলাই রেলওয়ের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় পিএসসি যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল, তার প্রধান ছিলেন কমিশনের যুগ্ম সচিব ড. আব্দুল আলীম খান। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন কমিশনের পরিচালক দিলাওয়েজ দুরদানা ও মোহাম্মদ আজিজুল হক। গত সোমবার ওই কমিটি পিএসসির চেয়ারম্যানের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

তাদের তদন্তে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো ঘটনা পায়নি বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। কমিটি রেলওয়ের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিলের সুপারিশও করেনি। তারা তদন্তে প্রতিষ্ঠানের প্রশ্ন সংরক্ষণ ও সরবরাহের বিষয়ে সুপারিশ করেছে।

এ বিষয়ে পিএসসির তদন্ত কমিটির প্রধান ড. আব্দুল আলীম খান বলেন, ‘আমরা তদন্তে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো ঘটনা পাইনি। তা আমরা প্রতিবেদনে উল্লেখ করে পিএসসির চেয়ারম্যানের কাছে জমা দিয়েছি। কিছু সুপারিশ করেছি।’ তিনি অভিযোগ করেন, পিএসসির তদন্তে কমিটি সিআইডিকে তিন দফায় চিঠি দিয়ে তাদের কাছে তথ্য-উপাত্ত ও বক্তব্য চেয়েছে। তবে সিআইডির কর্মকর্তারা তাঁদের কোনো সহযোগিতা করেননি।

এ বিষয়ে সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা  বলেন, ‘পিএসসির কমিটি তাদের কোনো বক্তব্য নেয়নি। কোনো বিষয়ে তথ্যও চায়নি। সর্বশেষ ৫ সেপ্টেম্বর একটি চিঠি আমরা পাই, ওই দিনই আমাদের বক্তব্যের জন্য যেতে বলে। তবে সেদিন আদালতে আমাদের মামলার তারিখ থাকায় যেতে পারিনি। এ বিষয়ে পিএসসিকে জানানো হয়েছে। পরে পিএসসি আর আমাদের বক্তব্য নেয়নি।’

সিআইডি অভিযোগ করেছে, ঘটনার শুরু থেকেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে পিএসসি। শুরুতেই তারা প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি অস্বীকার করেছে। সিআইডির তদন্তেও তারা সহযোগিতা করছে না। যে জায়গা থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে, সেই কক্ষের সামনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চাইলেও তা সরবরাহ করেনি পিএসসি।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল চাকমা বলেন, ‘আমাদের পিএসসির কেউ মোবাইলেও ফোন দিয়ে বক্তব্য চায়নি। প্রশ্নপত্র ফাঁসের অনেক তথ্য-প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে।’

রেলওয়ের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গত ৮ জুলাই দিবাগত রাতে পিএসসির সাবেক ও বর্তমান ছয়জন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ১৮ জনকে  গ্রেফতার করে সিআইডি। তাঁরা হলেন পিএসসির উপপরিচালক আবু জাফর ও মো. জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক এস এম আলমগীর কবীর, পিএসসির সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী, অফিস সহায়ক খলিলুর রহমান, ডেসপাস রাইডার সাজেদুল ইসলাম, পানি ব্যবসায়ী সাখাওয়াত হোসেন, সাখাওয়াতের ভাই সায়েম হোসেন, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী লিটন সরকার, পিএসসির অফিস সহায়ক মো. মোজাহিদুল ইসলাম, সাবেক সেনাসদস্য নোমান সিদ্দিকী, প্রতিরক্ষা ও অর্থ বিভাগ এসিসিডিএফের (বিওএফ) অডিটর প্রিয়নাথ রায়, ব্যবসায়ী মো. জাহিদুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তাপ্রহরী শাহাদাত হোসেন, ঢাকার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসের মুদ্রাক্ষরিক মো. মামুনুর রশীদ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টেকনিশিয়ান মো. নিয়ামুন হাসান ও সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম।

এ ঘটনায় ৯ জুলাই পল্টন থানায় বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন আইনে মামলা করে সিআইডি। ওই মামলায় ১০ জুলাই আদালতে সাতজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তাঁদের মধ্যে চারজনই পিএসসির সাবেক ও বর্তমান কর্মচারী। তাঁরা হলেন সৈয়দ আবেদ আলী, মোজাহিদুল ইসলাম, খলিলুর রহমান ও সাজেদুল ইসলাম।

মোজাহিদুল তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, তিনি ২০ বছর ধরে পিএসসিতে চাকরি করেন। গত ৫ জুলাই পিএসসির মেম্বার সৈয়দ গোলাম ফারুকের চেম্বারের ট্রাংক থেকে রেলওয়ের নিয়োগ পরীক্ষার চার সেট প্রশ্নপত্র চুরি করেন তিনি। সেগুলো চুক্তি অনুযায়ী ৯৮ জন ব্যক্তিকে বিভিন্নজনের মাধ্যমে দেন। চাকরিপ্রার্থীদের ঢাকার বিভিন্ন এলাকার ভাড়া বাসায় রেখে তা মুখস্থ করানো হয়। এই বাবদ খলিল তাঁকে ৩৫ লাখ টাকা দিয়েছিলেন।

পিএসসির আলোচিত গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীর জবানবন্দিতেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা উঠে এসেছে। তিনি বলেন, রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী নিয়োগ পরীক্ষায় তিনি ৪৪ জনের কাছ থেকে ১০ লাখ করে টাকা নেন। পরীক্ষার দুদিন আগে ডেসপাস রাইডার সাজেদুল ইসলামের কাছ থেকে রমনা পার্কের গেট থেকে তিনি প্রশ্নপত্র নেন। প্রশ্নপত্রের জন্য সাজিদুলকে তিনি ৭৫ লাখ টাকা দেন। পরীক্ষার্থীদের সাভারের একটি রিসোর্টে রেখে সেগুলো মুখস্থ করান।

খলিলুর ও সাজেদুলের জবানবন্দিতেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়টি উঠে আসে। তবে জবানবন্দি আমলে নেয়নি পিএসসির তদন্ত কমিটি।

প্রশ্নপত্র ফাঁসসংশ্লিষ্ট কারও বক্তব্য, তথ্য ও উপাত্ত আমলে নেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে পিএসসির তদন্ত কর্মকর্তা আব্দুল আলীম খান বলেন, ‘আমরা নির্বাহী বিভাগ যে তদন্ত করেছি, সেখানে ফৌজদারি অপরাধের বিষয়টি আসেনি। বিচারাধীন বিষয় নিয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করতে চাই না। জবানবন্দি গোপনীয় বিষয়, তা আমরা দেখিনি। ওটা আদালতের বিচারের বিষয়, সেখানেই বিচার হবে। আমাদের তদন্তের বিষয় ছিল প্রতিষ্ঠান। নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
মাদরাসা শিক্ষকরাও অষ্টম গ্রেড পাবেন - dainik shiksha মাদরাসা শিক্ষকরাও অষ্টম গ্রেড পাবেন নেড়ি কুকুরের ভাষণে শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি নিয়োগ বিত্তান্ত - dainik shiksha নেড়ি কুকুরের ভাষণে শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি নিয়োগ বিত্তান্ত বাংলাদেশের পাঠ্যবই ভারতে ছাপাতেই হবে কেনো? - dainik shiksha বাংলাদেশের পাঠ্যবই ভারতে ছাপাতেই হবে কেনো? অধ্যক্ষ জুবাইদা রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান হচ্ছেন! - dainik shiksha অধ্যক্ষ জুবাইদা রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান হচ্ছেন! ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার : সেনাবাহিনী যা যা করতে পারবে - dainik shiksha ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার : সেনাবাহিনী যা যা করতে পারবে তিন ক্যাটাগরির গুণী শিক্ষক বাছাইয়ে নাম পাঠানোর আহ্বান - dainik shiksha তিন ক্যাটাগরির গুণী শিক্ষক বাছাইয়ে নাম পাঠানোর আহ্বান মাদকের গডফাদারদের ধরার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার - dainik shiksha মাদকের গডফাদারদের ধরার নির্দেশ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার শিক্ষা প্রশাসনে বদলি আতঙ্কে নাহিদ-দীপু সিন্ডিকেটের ৯২ কর্মকর্তা - dainik shiksha শিক্ষা প্রশাসনে বদলি আতঙ্কে নাহিদ-দীপু সিন্ডিকেটের ৯২ কর্মকর্তা দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0022499561309814