প্রশ্নফাঁস: ছাত্রত্ব হারাচ্ছে ঢাবির ৮৭ শিক্ষার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক |

প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭ শিক্ষার্থীর ছাত্রত্ব বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ- সিআইডির পক্ষ থেকে শিগগিরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে চিঠি পাঠিয়ে এই শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব বাতিল করতে বলা হবে। এদের সবার বিরুদ্ধে প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। এই ৮৭ শিক্ষার্থীসহ ১২৫ জনের বিরুদ্ধে ঈদের পরই আদালতে চার্জশিট দেওয়া হবে। এর মধ্যে ঢাবির ১৮ শিক্ষার্থীসহ ৪৭ জন গ্রেফতার আছে। একজন বাদে সবাই আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এই অপরাধীদের কাছ থেকে প্রশ্ন ফাঁসের ২০ কোটি টাকাও উদ্ধার করেছে সিআইডি।

সিআইডি প্রধান ও অতিরিক্ত আইজি শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরীক্ষা এবং বিসিএস ও ব্যাংকসহ বিভিন্ন সংস্থার নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস ও জালিয়াতির অভিযোগে রাজধানীর শাহবাগ থানায় একটি মামলা হয়েছিল। ওই মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি। মামলাটির তদন্ত করে ১২৫ জনের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র চূড়ান্ত হয়েছে। প্রায় দেড় বছর তদন্তের পর তৈরি অভিযোগপত্রটি ঈদুল ফিতরের পরে আদালতে জমা দেওয়া হবে।

বৃহস্পতিবার (৩০ মে) সিআইডি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে শফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগপত্রভুক্ত ১২৫ জনের মধ্যে ৮৭ জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এদের মধ্যে ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা সহ গ্রেফতার মোট ৪৭ জনের মধ্যে ৪৬ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে শফিকুল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যেসব শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে তাদের ছাত্রত্ব বাতিল করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে খুব শিগগির চিঠি দেওয়া হবে। এছাড়া অভিযুক্তদের বাইরেও আরও ৭৯ জনের তথ্য যাচাই বাচাই করে দেখা হচ্ছে বলেও জানান তিনি। নাম-ঠিকানা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও সম্পূরক চার্জশিট দেয়া হবে। সিআইডি প্রধান জানান, ‘অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি দল দীর্ঘ তদন্ত করে দেশের সর্ববৃহৎ প্রশ্নফাঁস ও ডিজিটাল জালিয়াত চক্রকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হন। গ্রেফতার হয় মূল হোতাসহ ৪৭ জন।’

গত ২০ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে শহীদুল্লাহ হল থেকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক মহিউদ্দিন রানা ও আব্দুল্লাহ আল মামুন নামে দুই ছাত্রকে গ্রেফতার করে সিআইডি। তাদের কাছ থেকে এটিএম কার্ডের মতো দেখতে ইলেকট্রনিক ডিভাইস উদ্ধার করা হয়, যা দিয়ে পরীক্ষা চলাকালে কানে আরেকটি ডিভাইস রাখা পরীক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। পরদিন তাদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৬৩ ধারা এবং ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দের পাবলিক পরীক্ষা আইনের ৯ (খ) ধারায় মামলা করে সিআইডি। পরে অন্যদের গ্রেফতার করা হয়।

তদন্তে উঠে আসে প্রশ্নফাঁস চক্রটি প্রিন্টিং প্রেস থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস করতো। চক্রের মাস্টারমাইন্ড ছিল নাটোর জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান এছামী, প্রেস কর্মচারী খান বাহাদুর, তার আত্মীয় সাইফুল, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বনি ও মারুফসহ আরও কয়েকজন। সে সময় অভিযান চালিয়ে মোট ৪৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, চক্রের সদস্যরা প্রেস থেকে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে পরীক্ষার আগের রাতে তার সমাধান ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের মুখস্থ করাতো। এছাড়া পরীক্ষা শুরুর কয়েক মিনিট আগে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীকে সমাধান সরবরাহ করতো। তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রশ্নফাঁস চক্রের মূল হোতাদের কাছ থেকে নগদ ২০ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে উত্তরা পশ্চিম থানায় মানিলন্ডারিং আইনে মামলা করা হয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024821758270264