প্রশ্ন সরবরাহ : ছাত্রীর সঙ্গে ‘প্রেমের সম্পর্ক’ ছিলো জবি শিক্ষক জুয়েলের

জবি প্রতিনিধি |

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জুয়েল কুমার সাহার বিরুদ্ধে নিজ বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে সেমিস্টার ফাইনালের প্রশ্ন সরবারহের অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, ওই ছাত্রীর সঙ্গে শিক্ষকের প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। এদিকে এ ঘটনায় বিভাগের শিক্ষকদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে ক্ষোভ। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই ছাত্রী-শিক্ষক উভয়ের শাস্তি দাবি করেছেন তারা। 

ঘটনার বিষয়ে বিভাগের একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অভিযুক্ত জুয়েল সাহা স্নাতক চতুর্থ বর্ষের এক ছাত্রীকে তার নিজ কোর্স ‘ক্লাসিকাল ইলেকট্রো ডাইনামিকস: ১’সহ আরো বেশ কয়েকটি কোর্সের প্রশ্ন সরবারহ করেন। গত ৪ ডিসেম্বর এই কোর্সের মানোন্নয়ন পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে ওই ছাত্রী নকলসহ ধরা পড়েন।

পরবর্তীতে তার নকলের সঙ্গে প্রশ্নের অধিকাংশ উত্তর মিল থাকায় বিভাগের শিক্ষকরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি জুয়েল সাহা নামে ওই শিক্ষকের নাম স্বীকার করেন। এ ঘটনায় পরে বিভাগের একাডেমিক কাউন্সিলের বৈঠকে ওই শিক্ষককে সব ধরনের ক্লাস-পরীক্ষা থেকে ৩ বছরের জন্য মৌখিকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

তবে তাকে অফিসিয়ালি কোনও শাস্তির মুখোমুখি করা হয়নি এবং অজানা কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও অবহিত করা হয়নি। এই শাস্তি প্রদানের আগে কয়েক দফা বৈঠকে বসেন শিক্ষকরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম একটি খ্যাতনামা বিভাগ। কিন্তু এই বিভাগে এরকম কাজ হবে এবং তিনি শাস্তির মুখোমুখি হবেন না এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। সবকিছুর সূচনা হয়েছিলো ফাইনাল ইয়ারের ভাইদের র‍্যাগ ট্যুর থেকে। সেখানে ওই আপুর সাথে স্যারের সখ্যতা গড়ে উঠেছিল যা পরবর্তীতে ডিপার্টমেন্টেও এসে গড়ায়।

ছাত্রীর সঙ্গে শিক্ষকের প্রেমের সম্পর্কের বর্ণনা তুলে ধরে এ শিক্ষার্থী বলছেন তাকে (ছাত্রী) সকালে নাস্তা করানো থেকে শুরু করে আরও বিভিন্ন কারণে স্যার ওই মেয়েকে ল্যাবে নিয়ে যেত; যা সকলের দৃষ্টিগোচর হয়। এসব ঘটনার কারণে আগে থেকেই ডিপার্টমেন্টে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা চাঞ্চল্যকরভাব বিরাজমান ছিলো। যা পূর্ণতা পায় এই প্রশফাঁসের মাধ্যমে।

বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, বিষয়টি খুবই সেন্সিটিভ হওয়ায় আমি চাইব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরপেক্ষ তদন্তের ব্যবস্থা করুক। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই শিক্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি থাকবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে। পাশাপাশি ওই ছাত্রীর বিরুদ্ধেও যেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কারণ অভিযোগ প্রমাণিত হলে দুজনে সমান অপরাধী।

জানতে চাইলে বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. আঞ্জুমান আরা বলেন, এটা বিভাগের অভ্যন্তরীন বিষয় দেখিয়ে চেয়ারম্যান আমাদের কাছ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ নেননি। এরপর বিভাগের সকল শিক্ষকদের নিয়ে একাডেমিক মিটিংয়ে মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযুক্ত শিক্ষককে তিন বছরের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা থেকে অব্যহতি দেয়া হয়। কিন্তু তার এই শাস্তির বিষয়ে চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত নির্দেশনা জানতে চাওয়া হলে তিনি তা দিতে অস্বীকৃতি জানান।

বিভাগে ২য় বর্ষের পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. কানিজ ফাতেমা কাকলী বলেন, আমি বিষয়গুলো জানার পরই বিভাগের চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। এরপর বিভাগের সকল শিক্ষকরা মিলে একাডেমিক মিটিংয়ে তাকে তিন বছর ল্যাব ব্যতিত সকল ক্লাস-পরীক্ষা কার্যক্রম থেকে অব্যহতি দেয়া হয়। কিন্তু আমি লিখিত অভিযোগের কথা বললে বিভাগের চেয়ারম্যান বলেন বিভাগের বিষয় বিভাগেই সুরহা হোক। তাই আর লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়নি।

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকদের বর্ণনার বিষয়ে চেয়ারম্যান নূর আলম আবদুল্লাহ জানতে চাইলে তিনি উল্টো সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কাছে লিখিত কোন অভিযোগ আসেনি। এ জন্য আমি একাডেমিক শাস্তি কার্যকর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে অবিহিত করতে পারিনি।

অন্যদিকে ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের বিষয়ে মন্তব্য জানতে শিক্ষক জুয়েল সাহার সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কাছ থেকে কোনো ধরনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তার আগে প্রশ্ন সরবরাহের বিষয়ে ওই ছাত্রী জুয়েল সাহার নাম বললে তিনি সেটিও অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘না এমন কোনও ঘটনাই ঘটেনি। এটা ভুল তথ্য।’ 

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইমদাদুল হক বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি আজ অবগত হয়েছি।  আমি এ বিষয়টি নিয়ে বিভাগে খোঁজ নিবো। পরে তদন্ত সাপেক্ষে সর্বচ্চ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এসব একাডেমিক বিষয়ে আমরা সর্বদা জিড়ো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করব। কোন ছাড় দেয়া হবে না।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে - dainik shiksha চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ - dainik shiksha সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন - dainik shiksha রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? - dainik shiksha বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে - dainik shiksha ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি - dainik shiksha প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030100345611572