প্রসঙ্গ গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার যে পরিকল্পনা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন নিয়েচ্ছিল তা আর হচ্ছে না। দেশের ৫টি বিদ্যালয়ের উপাচার্য এ বিষয়ে অভিন্ন মত প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হলে আপাতত মঞ্জুরি কমিশন তার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। তবে আসন্ন শিক্ষাবর্ষ ২০২০-২১ চারটি পৃথক গুচ্ছে ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পেরেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ। শনিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।

সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়,  সমমনা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চারটি গুচ্ছে ভাগ করে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। এর মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে একটি, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি করে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ইউজিসির আগারগাঁও কার্যালয়ে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যদের সঙ্গে মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানের এক সমঝোতা বৈঠকে এমন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি আসে। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ এতদিন ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ মেনে চলে আসছে। সেখানে ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত ধারাটিও মূল ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়- ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর এবং বুয়েট অনুসরণ করে আসছিল। এবারও তারা সেই বিধি অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষা নেবে। তবে ইউজিসির চেয়ারম্যান আশা প্রকাশ করেন এখনও তারা এই গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে। এই গুচ্ছ পরীক্ষা মূলত নিতে হচ্ছে বড় পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশগ্রহণ ছাড়া।

বর্তমানে দেশে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদাভাবে পরীক্ষা দিতে গিয়ে কর্তৃপক্ষের চাইতেও বেশি ভোগান্তিতে পড়ে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ। তাদের সন্তান নিয়ে সারা বাংলাদেশ ছুটে বেড়াতে হয়। আর্থিক অসঙ্গতি ছাড়াও গণপরিবহনের অত্যধিক ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়। এমনও দৃষ্টান্ত আছে দুই বৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নির্ধারিত কোন বিভাগে একদিনেই পড়ে যায়। ফলে বিপদে পড়ে আগ্রহী ও মেধাবী পরীক্ষার্থীরা। এছাড়া নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিয়ন্ত্রণে থাকা পরীক্ষাগুলোতে অনেক অনিয়ম আর দুর্নীতিও দৃশ্যমান হয়। আর্থিক লেনদেন, স্বজনপ্রীতি ও প্রশ্ন ফাঁসের মতো দুর্বিপাকও তৈরি হয়ে যায়। অতীতে এমন সব অস্থির কার্যক্রমও দৃশ্যমান হয়েছে। ভুয়া পরীক্ষার্থী কিংবা পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে ভর্তির প্রশ্নও সবার সামনে চলে এসেছে।

দীর্ঘদিন ধরে সমন্বিত বা গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার যৌক্তিক দাবি উঠে আসছিল। তবে কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েও সিদ্ধান্তহীনতায় এই সমন্বিত কার্যক্রমের ব্যাপারটি ধামাচাপা পড়ে যায়। এবার ইউজিসি অত্যন্ত জোরালোভাবে এই উদ্যোগকে সফলতার দ্বারে নিয়ে যেতে যে কর্মপ্রক্রিয়া অব্যাহত রাখে তারই ফল এই সমন্বিত পরীক্ষা। যদিও দেশের সর্ববৃহৎ এবং পুরনো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এর প্রতি অনাস্থা দেখিয়ে নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল থাকে। তবে এই শুভ উদ্যোগকে স্বাগত জানাবে অসংখ্য পরীক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকগণ। দুর্ভোগ আর বিড়ম্বনা থেকেও কিছুটা রেহাই পাবে তারা। সমন্বিত পরীক্ষা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা দেশের ঐতিহ্যবাহী উচ্চ শিক্ষার পাদপীঠের সম্মানিত উর্ধতন কর্মকর্তারা আসন্ন শিক্ষাবর্ষে যোগ দিতে না পারলেও আগামীতে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা যেন তাদের মধ্যে প্রচ্ছন্ন থাকে, এটিই প্রত্যাশা।

তবে নতুন কার্যক্রমে হতে যাওয়া এসব গুচ্ছ পরীক্ষাও অত্যন্ত সতর্কতা আর সমন্বয়ের জোরালো ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হওয়া জরুরী। এখানেও ঝক্কিঝামেলা থাকবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নেতৃত্বইবা দেবে কারা সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের যথার্থ কার্যক্রম সূক্ষ্ম নজরদারি আবশ্যক। কারণ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণী মান এক নয়, তার ওপর বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ও রয়েছে। সব সমন্বিত করে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন সত্যিই এক মেগা কর্মযোগ। পরবর্তীতে বিভিন্ন সরকারী কলেজেও এই গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত করার পরিকল্পনা রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। তবে বিশিষ্টজনরা বলছেন- এবার এভাবেই শুরু হোক, পরবর্তীতে আরও ভাল হওয়ার সম্ভাবনা তো থাকলই। আমরা সর্বাঙ্গীন সুন্দর ভবিষ্যতের প্রত্যাশায় থাকলাম।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002708911895752