প্রসঙ্গ জাতীয়করণ আন্দোলন

মাজহার মান্নান |

এই বিশ্বে শিক্ষার মাধ্যমেই সভ্যতার সূচনা হয়েছে। জ্ঞান বিজ্ঞানের বিস্তরণের সুফল বিশ্ববাসী আজ ভোগ করছে। শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি আগাতে পারেনি। আমরা শিক্ষায় পিছিয়ে ছিলাম বলেই আজ পশ্চিমাদের দিকে নানা প্রয়োজনে তাকিয়ে থাকতে হয়।  শিক্ষার বিস্তরণে দুটি বিষয় অপরিহার্য। প্রথমটি হল বিদ্যালয় এবং দ্বিতীয়টি হল শিক্ষক। শিক্ষার সাথে শিক্ষকের সম্পর্ক দেহ এবং আত্মার মতো। দেহকে অবজ্ঞা করলে যেমন আত্মা টিকে না, ঠিক তেমনি আত্মাকে অবজ্ঞা করলে দেহ টিকে না। শিক্ষকদের অক্লান্ত পরিশ্রমেই একটি সভ্য, শিক্ষিত ও মেধাবী জাতি গড়ে উঠে। বঙ্গবন্ধুর সেই সোনার বাংলা গড়তে হলে একটি স্থায়ী শিক্ষা কাঠামো প্রয়োজন। স্থায়ী শিক্ষা কাঠামোর জন্য যোগ্য শিক্ষক প্রয়োজন। আর যোগ্য শিক্ষকের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত সম্মানী ও মর্যাদা।

কিছুদিন আগে সরকার নতুন শিক্ষাক্রম চালু করেছে। একেবারেই নতুন ধাঁচের এই শিক্ষা পদ্ধতিকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সবার আগে দরকার শিক্ষকের অংশগ্রহণ। শিক্ষকদের কিছু প্রশিক্ষণও ইতিমধ্যে দেয়া হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিতি তো লেজেগোবরে অবস্থা। যারা নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন করবেন তারা আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বসে শিক্ষা জাতীয়করণের আন্দোলন করে যাচ্ছেন। খেয়ে না খেয়ে, নির্মম যন্ত্রনা সহ্য করে, ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে তারা তাদের দাবি পেশ করে চলেছেন। যাদের এখন ক্লাশে থাকার কথা তারা এখন রাস্তায় সংগ্রামে ব্যস্ত। ক্ষতি তবে কার হচ্ছে? শিক্ষক? শিক্ষার্থী? রাষ্ট্রের? সহজভাবে ভাবলেই বোঝা যায় একটি সার্বিক ক্ষতির সম্মুখীন আমরা হচ্ছি। নতুন শিক্ষাক্রমে শিক্ষার্থীরা তেমন কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। এ মুহূর্তে তাদের দরকার শিক্ষকদের সরাসরি তত্ত্বাবধান। কিন্তু কোথায় আজ শিক্ষক? কেন শিক্ষকদের বারবার রাস্তায় নামতে হচ্ছে। জাতীয়করণের দাবিতো নতুন কোন দাবি নয়। দীর্ঘদিনের এই দাবিটিকে সরকারের উচ্চ মহলও যৌক্তিক মনে করে। তাহলে বাধা কোথায়? কেন জাতীয়করণ হয় না? শিক্ষকদের আর্থিক অবস্থা কেমন তা নতুন করে লিখে কলেবর বাড়াতে চাই না। সার্কভূক্ত দেশগুলির শিক্ষকদের বেতন কাঠামো দেখলে সহজে অনুমান করা যায় কি দৈন্য অবস্থা আমাদের শিক্ষকদের। প্রতিবেশী ভারতে শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদা নিজে চোখে দেখে এসেছি। ভারতের কয়েকটি বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষকদের সাথে কথা বলেছি। তারা উচ্চ বেতন এবং মর্যাদা দুটোই পেয়ে থাকে। ভারতের চেয়ে আমাদের আর্থিক সঙ্গতি নেহাৎ কম নয়। তাহলে গলদ কোথায়? পাকিস্থান, শ্রীলংকায়ও শিক্ষকরা মানসম্মত বেতন ও সম্মান পেয়ে থাকেন। তাহলে আমরা কোথায় আটকে আছি। প্রায়ই শোনা যায় আমলাতান্ত্রিক জটিলার ফাঁদে আটকা পড়েছে জাতীয়করণসহ নানা সুবিধা। কিন্তু কেন? শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো করার প্রতিশ্রুতি তো বড় রাজনৈতিক দলের ইশতেহারে ছিল। কোথায় গেল সেই আশ্বাস? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সদর দপ্তরের শিক্ষাক্ষেত্রে বৈশ্বিক উদ্যোগের উচ্চ পর্যায়ের এক আলোচনায় অংশ নিয়ে অস্ত্র নয় শিক্ষায় বিনিয়োগের আহবান জানিয়েছিলেন বিশ্ববাসীকে। শিক্ষার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রবল ইচ্ছাশক্তি তার এই বক্তব্যের মাধ্যমে প্রতিফলিত হয়েছে। আর তাইতো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে শিক্ষকদের প্রত্যাশা আরো বেড়ে গেছে। শিক্ষকরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই পারবেন শিক্ষা ব্যবস্থাকে একযোগে জাতীয়করণ করতে। যিনি পদ্মা সেতুর মত একটি বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছেন, তার পক্ষে শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ করা তেমন কোন বিষয় নয়। শুধু প্রয়োজন একটি গবেষণা ভিত্তিক জরিপ। ২০২৩ নির্বাচনের বছর। তাই শিক্ষকরা এই সময়টি বেছে নিয়েছে তাদের দাবি আদায়ের জন্য। কিন্তু এখনো তেমন কোন সাড়া তাদের মেলেনি। নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্যে দিশেহারা শিক্ষকরা আজ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছে।

সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থাকে জাতীয়করণ করতে কি পরিমাণ অর্থের প্রয়োজন এবং অন্যান্য কি কি চ্যালেঞ্জসমুহ রয়েছে সেটার একটি গবেষণা ভিত্তিক পরিসংখ্যান প্রয়োজন। বেসরকারি পর্যায়ে এবং বিচ্ছিন্নভাবে কিছু জরিপ করা হলেও পূর্ণাঙ্গ জরিপ এখনো হয়নি। তবে খন্ডিত জরিপ এবং বিশ্লেষকদের বিশ্লেষণ থেকে যেটা অনুমান করা যায় সেটা হলো, জাতীয়করণের জন্য অর্থের চেয়ে সদিচ্ছাটি বেশি প্রয়োজন। বেশিরভাগ শিক্ষক মনে করেন যে শিক্ষা ব্যবস্থার জাতীয়করণের দাবি যখনই জোরালো হয় তখন সেটা আমলাতান্ত্রিক জটিলতার জালে আটকা পরে মুখথুবরে পড়ে।  তাদের এ ধারণা কতটুকু সঠিক তা যাচাই করার সুযোগ নেই। তবে এতোটুকু আন্দাজ করা যায় যে শিক্ষকেরা কোন কিছুই সহজভাবে পায়নি। কঠোর আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়েই তাদের অধিকার আদায় করে নিতে হয়েছে। 

করোনা মহামারির কারণে প্রায় দু’বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। শিক্ষার্থীদের যেমন ক্ষতি হয়েছে, তেমনি ক্ষতির শিকার হয়েছেন বেসরকারি শিক্ষক কর্মচারীরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যখন খুললো তখন শিক্ষকদেরকে আসতে হলো প্রেসক্লাবে আন্দোলন করার জন্য। প্রতিকুল পরিবেশে জাতীয়করণের দাবি নিয়ে শিক্ষকরা প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান নিয়েছেন। সারা বছরই শিক্ষকদের কোন না কোন অংশ তাদের দাবি আদায়ে প্রেসক্লাবে অবস্থান করে। কিন্তু কেন? শিক্ষকদের কেন বারবার তাদের দাবি আদায়ে প্রেসক্লাবে অবস্থান করতে হবে? আরো তো বহু চাকুরিজীবি আছেন, তারা কয়দিন প্রেসক্লাবে তাদের দাবির পক্ষে অবস্থান করেন? এর থেকেই বোঝা যায় যে শিক্ষকরা, বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষকরা চরম বৈষম্যের শিকার। অবহেলার দাবানলে দগ্ধ এসব শিক্ষকরা আর কতোদিন রাজপথে থাকবে। যাদের বিদ্যালয়ে অবস্থান করে শিক্ষাদানে ব্যস্ত থাকার কথা তারা এখন রাজপথে তাদের দাবি আদায়ের জন্য। ফলে ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে তাদের ক্লাশ থেকে।  নতুন শিক্ষাক্রমে পাঠ্যবই, পরীক্ষা পদ্ধতি ও শ্রেণি কার্যক্রম নিয়ে মানসম্মত কিছু উদ্যেগ গ্রহণ করা হয়েছে। গ্রাম ও শহর অঞ্চলের শিক্ষা বৈষম্য বেড়েই  চলছে।

উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষা ব্যবস্থাকে জাতীয়করণ করা এখন জরুরি হয়ে উঠেছে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে জাতীয়করণ করা প্রয়োজন নিন্মোক্ত কারণেই। ১. শিক্ষায় বৈষম্য দূর করে সমতা আনার জন্য, ২. শিক্ষার সার্বিক মান উন্নয়নের জন্য, ৩. শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূর করার জন্য, ৪. শিক্ষা খাতের দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য, ৫. শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্য ও অনিয়ম দূর করার জন্য, ৬. শিক্ষকদের মর্যাদা ও জীবন মান উন্নয়নের জন্য, ৭. গ্রামীণ শিক্ষাকে বেগবান করার জন্য, ৮. বেসরকারি শিক্ষা ব্যবস্থায় চলমান নানা জটিলতা দূর করার জন্য, ৯. অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য, ১০. শিক্ষা খাতে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য, ১১. গর্ভনিং বডির দৌরাত্ম থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি জানতেন যে সোনার বাংলা গড়ার প্রথম এবং প্রধান সোপান হলো শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন। তাইতো তিনি ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে এক ঘোষণায় ৩৭ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছিলেন। ১২ হাজার নতুন বিদ্যালয় স্থাপন ও প্রায় অর্ধ লক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছিলেন এবং বিনামূল্যে বই বিতরণসহ নানা সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করেছিলেন। ১৯৭২ খ্রিষ্টাব্দের ২৬ জুলাই তিনি ডঃ মুহাম্মদ কুদরত ই খুদাকে প্রধান করে শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছিলেন। ঘাতকদের হাতে বঙ্গবন্ধুর জীবন অবসানের পর শিক্ষার সার্বিক অগ্রযাত্রা থেমে গিয়েছিলো। বেসরকারি শিক্ষকরা চরম সংকটে পড়েছিল তখন। যাহোক ব্যাপক দাবির মুখে ১৯৮০ খ্রিষ্টাব্দে বেসরকারি শিক্ষকদের জাতীয় বেতন স্কেলের অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে তিন মাস অন্তর অন্তর ৫০ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ দেয়া শুরু হয়। কিন্তু সেই সামাণ্য টাকা দিয়ে শিক্ষকদের ব্যয় নির্বাহ খুব কষ্ট হতো। শিক্ষকরা তাদের দাবি আদায়ে সোচ্চার হলে ১৯৯০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ৫০ শতাংশকে ৭০ শতাংশে উন্নীত করা হয়। কিন্তু শিক্ষকরা না চেয়ে কোন কিছু পেয়েছে এমনটি হয়নি। তারা তাদের প্রাপ্য আদায়ে সক্রিয় থাকে রাজপথে এবং ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে বেতন ৭০ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশে উন্নীত করা হয়।  ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে এটাকে ৯০ শতাংশে নেয়া হয়। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ এটাকে শতভাগে উন্নীত করা হয়। অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে শতভাগ বেতন পেতে এমপিওভূক্ত শিক্ষকদের ২০ বছরের বেশি আন্দোলন সংগ্রাম করতে হয়। যাহোক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেসরকারি শিক্ষকদের কল্যাণে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট (৫ শতাংশ চক্রাকারে) নিশ্চিত করেন। এটি শিক্ষকদের একটি বড় প্রাপ্তি। কিন্তু বাড়ি ভাড়া,  চিকিৎসা ভাতা ও পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতার বিষয়ে শিক্ষকরা আন্দোলন করে আসলেও সেগুলোর কোন সুরাহা এখনো হয়নি। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর প্রতিশ্রুতি দেয়া হলেও সেটা নানা কারণে আলোর মুখ দেখেনি। শিক্ষা ব্যবস্থার দৈনদশার কারণে এবং শিক্ষকদের জীবন-যাপন দেখে শিক্ষকতা পেশা থেকে মেধাবীরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। ফলে হুমকিতে পড়ছে দেশের শিক্ষার গুণগত মান ও সার্বিক অগ্রগতি।  শিক্ষা এবং শিক্ষকবান্ধব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে এক ঘোষণায় ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি রেজিষ্ট্রার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেন। দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে ডিগ্রি কলেজ ও একটি হাইস্কুল জাতীয়করণ করা হয়।

বর্তমানে সারাদেশে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২ কোটি । শিক্ষা গবেষক ও বিশ্লেষকদের মতে, এসব শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে বেতন, সেশন ফি ও অন্যান্য টাকা আদায় হয় সেটার সাথে অতিরিক্ত কিছু অর্থ বরাদ্দ দিলে অনায়াসে একযোগে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা সম্ভব। বর্তমানে এমপিওভূক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন, বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট ও উৎসব ভাতা বাবদ প্রায় ৯ হাজার ১শ কোটি টাকা দেয়া হয় রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন,  এটাকে ১৫ হাজার কোটি টাকায় নিতে পারলে জাতীয়করণ অনায়াসে সম্ভব। সারাদেশে ৩৯ হাজার বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫ লাখ শিক্ষক রয়েছেন, যারা এখনো নানা সমস্যায় জর্জরিত। দেশের শিক্ষা খাতের চাকাকে চলমান রাখতে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অবদান সবচেয়ে বেশি, অথচ তারাই আজ সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। সরকার ধাপে ধাপে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। কিন্তু তাতে প্রকৃত সমস্যার কোন সুরাহা হবে না বরঞ্চ সমস্যা আরো প্রকট হবে। জাতীয়করণের তালিকা থেকে যারা বাদ পড়বে তাদের হতাশা ও বৈষম্য বহুগুণে বেড়ে যাবে। একযোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণে যে খরচ হবে সেটা পদ্মা সেতুর নির্মাণ খরচের তুলোনায় কিছুই না। এখানে সদিচ্ছাটাই বড় প্রশ্ন। রাষ্ট্রপ্রধানকে সঠিক তথ্য, উপাত্ত ও জরিপ দিয়ে বোঝানো গেলে জাতীয়করণের পথ সুগম হবে। কিন্তু কে বুঝাবে? সরিষার ভিতরে ভূত কে তাড়াবে? তাই রাষ্ট্রপ্রধানকেই মূল উদ্যোগটি নিতে হবে। তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নের দায়িত্ব তার। ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দে থেকে নতুন শিক্ষাক্রম শুরু হয়েছে। শিক্ষকদের ব্যাপক হারে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।  দেশের অনেক বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে যেগুলোর প্রচুর আয় রয়েছে। জাতীয়করণ করা হলে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে রাষ্ট্রীয় কোষাগার  বিপুল অর্থ জমা পড়বে। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের বেতন সমন্বয়ের মাধ্যমে আয় বুদ্ধির সুযোগ রয়েছে। প্রেসক্লাবে শিক্ষকরা জাতীয়করণের দাবিতে অবস্থান নিয়েছে। তাদের দাবি অবশ্যই যৌক্তিক। আর তাদের যৌক্তিক দাবির প্রতি সরকার সদাশয় হবেন এটাই প্রত্যাশা। রাষ্ট্র যদি শিক্ষকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা না নেয়, তবে সে দেশ কখনোই উন্নয়নের শেখরে পৌঁছাতে পারে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে আর এর পেছনের কারিগর হলেন শিক্ষকরা।

নতুন শিক্ষাক্রম সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষা জাতীয়করণের কোন বিকল্প নেই। শিক্ষকের পেটে ক্ষুধা রেখে তাদের কাছে বিদ্যার প্রত্যাশা করা আসলেই কি যৌক্তিক? স্মার্ট বাংলাদেশের স্লোগান দেয়া হচ্ছে। কিন্তু স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য দরকার স্মার্ট শিক্ষা আর স্মার্ট শিক্ষক।  কিন্তু সেই স্লোগান কেন শুনি না? কার উপর ভরসা করে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চায় সরকার? কিছু কর্তাব্যক্তি মুখে বললেই কি স্মার্ট বাংলাদেশ হয়ে যাবে?  সেটা হবে দিবাস্বপ্ন মাত্র। আগে স্মার্ট শিক্ষক তৈরি করতে হবে। তাই শিক্ষকদের আর অবহেলা নয়। তাদের প্রাপ্যটুকু রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে এটাই সবার প্রত্যাশা।

লেখক : মাজহার মান্নান, কবি ও কলামিস্ট, সহকারী অধ্যাপক

  
 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও - dainik shiksha ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল - dainik shiksha বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক - dainik shiksha এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0068390369415283