আমাদের দেশে অপরিকল্পিত ভর্তি পরীক্ষার কারণে শিক্ষার্থীদের হয়রানি ও মানসিক চাপ দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাছাড়া কোচিং বাণিজ্যে প্রশ্নপত্রফাঁস ও নোট-গাইড বইয়ের দৌরাত্ম্যে প্রকৃত শিক্ষার সুফল আমরা পাচ্ছি না। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা শেষে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য লাখ লাখ ছাত্রছাত্রী ঢাকা শহরে কোচিংসেন্টারগুলোর শরণাপন্ন হয়। এতে করে ঢাকা শহরে অবস্থানের জন্য বাড়তি চাপ অনেক বেড়ে যায়। বিশেষ করে মেয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে অভিভাবকদের দুশ্চিন্তার শেষ থাকে না। তাছাড়া মেয়েদের জন্য নিরাপদ মেস (আবাসস্থল) পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এইচএসসি পাশের পর মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধ। কিন্তু পরিকল্পিত নিয়ম না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী সব ভর্তি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করতে পারে না। অনেক সময় একই দিনে বা পরের দিন কয়েক জায়গায় ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। যেমন: আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, পরের দিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, তার পরের দিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, তার পরের দিন বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা থাকায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ অসম্ভব হয়ে পড়ে। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানা যায়।
চিঠিতে আরও জানা যায়, ভর্তি পরীক্ষায় অবশ্যই পরিবর্তন এনে শিক্ষার্থীদের অহেতুক হয়রানি ও মানসিক চাপ থেকে বাঁচাতে হবে। ভারতে এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পনেরো দিনের মধ্যেই জয়েন্ট ইনট্রান্স পরীক্ষা নামে একটি ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে মেধা অনুযায়ী সিরিয়াল করে রাখা হয়। এই পদ্ধতি আমাদের দেশেও অনুসরণ করা যেতে পারে। আমাদের দেশে বর্তমান মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার মতো কৃষি বিষয়ে সকল কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা, সকল ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা, সকল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা এবং সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হলে শিক্ষার্থীরা ছুটোছুটির হয়রানি থেকে রক্ষা পাবে। এই ভর্তি পরীক্ষা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে নিতে পারলে ভর্তি কোচিং বাণিজ্য বন্ধ হতে কতক্ষণ?
মানসম্মত শিক্ষার জন্য কোচিং বাণিজ্য একটি বড়ো বাধা। আর কোচিং বাণিজ্যে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুযোগে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা! তাছাড়া এ কোচিং সেন্টারগুলো বেশিরভাগই ঢাকা শহরে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি নিঃশেষ করার জন্য জিরোটলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। এই নীতি বাস্তবায়ন হলেই শিক্ষাব্যবস্থায় দলমত নির্বিশেষে সঠিক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ হবে। সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা কারিকুলাম হতে হবে অবশ্যই কর্মমুখী।
যে কোনো মূল্যে প্রশ্নফাঁসকারীদের কঠিন হাতে দমন করতে হবে। আমাদের দেশ এবং জাতিকে এগিয়ে নিতে হলে কোনোভাবেই অনিয়ম-দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। খেয়াল রাখতে হবে কোনোভাবেই রক্ষক যেন ভক্ষক না হতে পারে। শিক্ষাব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হলে এগিয়ে যাওয়ার সমস্ত চেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে যাবে।
ভর্তি পরীক্ষায় অযথা হয়রানি নিরসনের জন্য গত ২৩-১-২০২০ তারিখে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তিপরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তে উপচার্যদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ভূমিকা সাধুবাদযোগ্য। এই সমন্বিত ভর্তিপরীক্ষা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে নিতে পারলে হাজার হাজার কোটি টাকার কোচিং বাণিজ্য ও প্রশ্নফাঁস সহজেই বন্ধ হবে। কাজেই এই মহতি উদ্যোগে সবার এগিয়ে আসা দরকার।
লেখক: এম এ কাদের, ঝিনাইদহ