প্রাইমারি স্কুল, রেলের বিশেষ কোটার জটিলতা থাকছেই!

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

সরকারি চাকরির সব গ্রেডের নিয়োগে ৭ শতাংশ কোটা কার্যকরের নতুন সিদ্ধান্তের প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে। তবে সরকারের কিছু দপ্তরে আলাদা নিয়োগবিধির কারণে এখনও কার্যকর রয়েছে বিভিন্ন বিশেষ কোটা।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদের (১১তম গ্রেড) নিয়োগে ৬০ শতাংশ নারী কোটা আছে। একইভাবে বাংলাদেশ রেলওয়েতে ১৪তম থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত ৩০ শতাংশ পোষ্য কোটা রয়েছে। বিভিন্ন সেক্টর ও করপোরেশনের নিয়োগবিধি ভিন্ন ভিন্ন হওয়ায় সেখানে বিভিন্ন কোটা কার্যকর আছে। তিন পার্বত্য জেলার সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য আলাদা কোটার ব্যবস্থা রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে কোটা আগামীতে কীভাবে নির্ধারিত হবে, তা নিয়ে অস্পষ্টতা এখনও রয়ে গেছে।

২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে সরকার যখন সব কোটা বাতিল করে, তখনও প্রাথমিক শিক্ষকের ৬০ শতাংশ নারী কোটা ও রেলের নিয়োগে পোষ্য কোটা বলবৎ ছিল।

এদিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গতকাল সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিকের নিয়োগ প্রসঙ্গে বলেন, আদালতের আদেশের দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন বদলানোর ক্ষমতা আমাদের নেই। নতুন প্রজ্ঞাপন অনুসারে সব নিয়োগ সম্পন্ন হবে।

তবে জনপ্রশাসন বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব বিশেষ কোটা নিয়োগবিধির মাধ্যমে হয়। তাই এগুলো বহাল থাকবে। কারণ, পরিপত্র দিয়ে কখনও আইন বা বিধি বাতিল করা যায় না।
এদিকে, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায় অনুসারে সরকারি চাকরির কোটার সংশোধন করে গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখা থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। দুপুরে রাজধানীর গুলশানে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ আরও তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘সরকার এই মর্মে আদেশ জারি করছে যে, সমতার নীতি ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর প্রজাতন্ত্রের কর্মে প্রতিনিধিত্ব লাভ নিশ্চিত করতে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অর্থাৎ সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্বশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষের এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে/কর্মে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে সকল গ্রেডে কোটা নির্ধারণ করা হলো– মেধাভিত্তিক ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ১ শতাংশ এবং শারীরিক প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১ শতাংশ।’

এতে বলা হয়, ‘নির্ধারিত কোটায় যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে সংশ্লিষ্ট কোটার শূন্য পদ সাধারণ মেধাতালিকা থেকে পূরণ করা হবে।’ প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, ‘২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা পরিপত্রসহ আগে জারি করা এ-সংক্রান্ত সকল পরিপত্র, প্রজ্ঞাপন, আদেশ, নির্দেশ, অনুশাসন রহিত করা হলো। এ আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে।’
‌নতুন কোটা পদ্ধতি কার্যকর হওয়ায় প্রাথমিকে আগামীতে কীভাবে শিক্ষক নিয়োগ হবে– এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, আদালত যে নির্দেশ দিয়েছেন, সেই আলোকেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। নতুন প্রজ্ঞাপন অনুসারে সব নিয়োগ সম্পন্ন হবে।

তবে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ।

প্রাথমিকে নিয়োগের বিষয়ে প্রবীণ শিক্ষক নেতা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, প্রাথমিকের কোমলমতি শিশুদের মাতৃস্নেহ প্রতিপালন ও শিক্ষা দেওয়ার জন্য নারী শিক্ষক ৬০ শতাংশ রাখার যৌক্তিক কারণ রয়েছে। এখন প্রাক-প্রাথমিকে অনেক ছোট শিশু বিদ্যালয়ে আসছে। এ ছাড়া দাতাগোষ্ঠীর সুপারিশেই এ নিয়ম তখন চালু করা হয়েছিল।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক শ্যামল কান্তি ঘোষ বলেন, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদের নিয়োগ বরাবরই কোটা আদেশের বাইরে ছিল। এ নিয়োগের নিয়োগবিধি আলাদা। ভবিষ্যতে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে নারী শিক্ষক কমানো হবে কিনা, তা আলোচনার দাবি রাখে। তিনি বলেন, আমি মনে করি, আপিল বিভাগ একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে এ রায় দিয়েছেন। রায়টি অভিনন্দনযোগ্য। রায়ে ভবিষ্যতের জন্যও দ্বার খোলা রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে, সরকার চাইলে এটি পরিবর্তন করতে পারবে। 

এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার বলেন, রেল, প্রাথমিক ও বিভিন্ন করপোরেশনের নিয়োগও ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে করতে গেলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান থেকে আলাদা আদেশ জারি করতে হবে। জনপ্রশাসনের বর্তমান প্রজ্ঞাপনে এগুলো বাতিল হবে না।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি - dainik shiksha মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি বয়স ৩৫ করার দাবিতে শাহবাগে চাকরি প্রত্যাশীদের মহাসমাবেশ - dainik shiksha বয়স ৩৫ করার দাবিতে শাহবাগে চাকরি প্রত্যাশীদের মহাসমাবেশ এমপিওভুক্তি: দীপু মনির ভাই টিপুচক্রের শতকোটি টাকার বাণিজ্য - dainik shiksha এমপিওভুক্তি: দীপু মনির ভাই টিপুচক্রের শতকোটি টাকার বাণিজ্য অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য, আওয়ামী লীগ নেতাকে স্থলাভিষিক্ত করার চেষ্টা - dainik shiksha অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য, আওয়ামী লীগ নেতাকে স্থলাভিষিক্ত করার চেষ্টা ভুয়া নিয়োগে এমপিও: এক মাদরাসার ১৫ শিক্ষকের সনদ যাচাই করবে অধিদপ্তর - dainik shiksha ভুয়া নিয়োগে এমপিও: এক মাদরাসার ১৫ শিক্ষকের সনদ যাচাই করবে অধিদপ্তর বার্ষিক পরীক্ষার উদ্দীপকসহ ও উদ্দীপক ছাড়া প্রশ্ন - dainik shiksha বার্ষিক পরীক্ষার উদ্দীপকসহ ও উদ্দীপক ছাড়া প্রশ্ন একসঙ্গে তিন প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন তুলতেন মাদরাসা কর্মচারী - dainik shiksha একসঙ্গে তিন প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন তুলতেন মাদরাসা কর্মচারী আবাসিক হোটেলে শিক্ষার্থীদের অভিযান, হামলা - dainik shiksha আবাসিক হোটেলে শিক্ষার্থীদের অভিযান, হামলা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0048940181732178