প্রাথমিকের শিক্ষকরা কোন ধরণের সরকারি কর্মচারী

মো: সিদ্দিকুর রহমান |

পাকিস্তান  আমলে বৈষম্যমূলক নীতির ফলে ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগে আজকের এ স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম। অথচ আজও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির অনুচররা মুক্তিযুদ্ধের সরকারের অভ্যন্তরে থেকে বৈষম্য সৃষ্টি করে যাচ্ছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শিক্ষাবান্ধব সরকার হিসাবে খ্যাত জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রাথমিক শিক্ষাকে সরকারিকরণের মাধ্যমে শিক্ষকদের সরকারি কর্মচারীর মর্যাদা দিয়েছেন। প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদাসহ প্রাক-প্রাথমিক ইবতেদায়ি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে বই বিতরণনসহ শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক অর্জন এ সরকারের।  অথচ আজ প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য চলতি দায়িত্বে নিয়োজিত প্রধান শিক্ষকদের ভাতা, ননভ্যাকেশনাল সরকারি কর্মচারীর মত প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এ ছাড়াও পাঠদানবহির্ভূত কাজের বোঝাসহ অহেতুক প্রশাসনিক জটিলতা সৃষ্টি করা হচ্ছে। প্রায় র্দীঘ ১০ বছর যাবৎ প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষক পদোন্নতি বন্ধ রয়েছে। আজও পদোন্নতি চালু করার ইতিবাচক কোন পদক্ষেপ দৃশ্যমান নয়। 

২০১৬ খ্রিস্টাব্দের  প্রথম দিকে ঢাকা শহরের শিক্ষকদের পদোন্নতি ও পোষ্যের চাকরির সুযোগের ওপর নেমে আসে চরম আঘাত। ঢাকা শহরের বাইরের জেলা থেকে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক বদলির হিড়িক  চলতে থাকে। এ অবস্থা থেকে ঢাকা শহরের প্রাথমিক শিক্ষকদের পরিত্রাণের জন্য প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আর্কষণ করেন। বদলির হিড়িক বন্ধ না হওয়ায় ২২ মে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনসহকারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কে ৬ দফা স্মারকলিপি সুপারিশসহ স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

স্মারকলিপিতে দেওয়ার পর তাৎক্ষনিক বদলি বন্ধ না হওয়ায় ঢাকা শহরের ২০০০ শিক্ষকের স্বাক্ষরিত আবেদন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হলো। স্মারকলিপি ও আবেদনের  ৬ দফা সুপারিশগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, ঢাকাসহ শহরঅঞ্চলের শিক্ষকদের বদলিনীতি সংশোধন, প্রধান শিক্ষকদের পদের পদোন্নতির কোনো জটিলতা থাকলে জরুরি ভিত্তিতে সিনিয়র শিক্ষকদের চলতি দায়িত্ব দিয়ে সমস্যা নিরসন ও পদোন্নতির ব্যবস্থা করা।

পরবর্তীতে ঢাকায় শিক্ষকদের পদোন্নতি ও পোষ্য কোটার অনেকটা হারিয়ে ঢাকা শহরের বাইরে থেকে বদলি বন্ধ হলো। অবশেষে ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে মে মাসে ঢাকা শহরের ৯৭ জন সহকারী শিক্ষককে চলতি দায়িত্বের সূচনা দীর্ঘ দেড় বছর সময়ক্ষেপন করে সারাদেশে চলতি দায়িত্ব দেওয়ার পর্ব প্রায়ই শেষ।

অতি ক্ষোভের সাথে বলতে হয়, প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলের কার্যক্রম শিশুর মত পথ চলা। প্রাথমিক শিক্ষার কার্যক্রমের ধীর গতি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াল জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণে। বর্তমান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মহোদয়ের চলতি দায়িত্বের আন্তরিক প্রয়াসকে প্রশ্নবিদ্ধ করলো চলতি দায়িত্বে দেয়া ও পোস্টিংয়ের জন্য ঘুষ বাণিজ্য। চলতি দায়িত্ব বাস্তবায়নের নামে গড়ে তুলল ঘুষ বাণিজ্যের সংগঠন। মহাপরিচালকের দপ্তর যেন তাদের দপ্তরে পরিণত হয়েছে। মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর  স্কুলে গিয়ে শিক্ষকের সন্ধান পাওয়া যায় না। পাওয়া যায় মিরপুর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কিংবা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। শিক্ষার্থী চেনেন না শিক্ষক, এ শিক্ষক আবার চলতি দায়িত্বের মহা নেতা। নীতিমালা প্রণয়ন করেও এ ঘুষ বাণিজ্যের নেতা থেকে অব্যাহতি মেলেনি। মাননীয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী অনেক দায়িত্বশীল শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের নিজে স্বয়ং শুনানি নিয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

মাননীয় মন্ত্রীর কাছে নিবেদন বিদ্যালয় খোলা রেখে ছুটি না নিয়ে মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে শিক্ষক নেতা বা শিক্ষকদের অবস্থানের জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরামের দায়েরকৃত ননভোকেশনাল কর্মচারীর মত সুনিদিষ্ট রিটটি চুড়ান্ত শুনানির অপেক্ষায় আছে। চলতি দায়িত্বে নিয়োজিত প্রধান শিক্ষকদের প্রাপ্য ভাতার জন্য আইনগত নোটিস দেওয়া হয়েছে। আশা রাখি, চলতি দায়িত্বের ভাতাপ্রাপ্তির জন্য মহামান্য হাইকোর্টে রিট করতে হবে না। প্রাথমিক শিক্ষকেরা সরকারি কর্মচারী অন্য সকল কর্মচারীর মত সকল সুবিধা তাদের প্রাপ্য তাদের অধিকার প্রাথমিক শিক্ষক নেতৃত্বের মাঝ থেকে সকল দুর্নীতি বন্ধের পাশাপাশি সরকারি কর্মচারীর মত প্রাথমিক শিক্ষকেরা সকল সুবিধা পাক, এই প্রত্যাশা। 


লেখক: আহ্বায়ক, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদ এবং প্রাথমিক শিক্ষক অধিকার সুরক্ষা ফোরাম; সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষা।


[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন]

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023260116577148