প্রাথমিকের সময়সূচি বনাম প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট সবাইকে বিশেষ করে অভিভাবকদের তাদের শিশুদের বাইরে খেলাধুলা করতে উৎসাহিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। এটা তাদের যে কোনো ভুল পথে যাওয়া বন্ধের পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিকাশে সহায়ক হবে। জাতিগঠনে এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, আমাদের বেশিরভাগ শিশু ফ্ল্যাটে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ এবং আইপ্যাড নিয়ে সময় কাটাচ্ছে, যা তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য মঙ্গলজনক নয়। প্রধানমন্ত্রী শিশুদের দৌড়ঝাঁপের সুযোগ করে দেয়ার জন্য অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আপনারা আপনাদের শিশুদের লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলার প্রতিও মনোযোগী হবেন। তাহলে শিশুরা আর ভুল পথে যাবে না। জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেছেন।

 

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘খেলাধুলা, শরীরচর্চা এবং সংস্কৃতিচর্চা একটি জাতির জন্য অপরিহার্য। এ কথা সবাইকে মনে রাখতে হবে আমাদের একেবারে ছোট শিশু থেকে সবাইকে উৎসাহিত করতে হবে। তাহলেই আমাদের ছেলেমেয়েরা মানুষের মতো মানুষ হতে পারবে। তাদের মনটাও ভালো থাকবে, তারা ভালভাবে লেখাপড়া শিখবে এবং বিপথে যাবে না। এটাই আমার বিশ্বাস।’

অথচ অতীব দুঃখ ও ক্ষোভের সাথে লক্ষ করছি, প্রাথমিকের সংশ্লিষ্টরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিশুদের জন্য এসব গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শমূলক নির্দেশনা যথাযথ পালন না করে ধৃষ্টতার উদাহরণ সৃষ্টি করে যাচ্ছেন। বর্তমান করোনার শিখন ঘাটতি পূরণের নামে উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজ, মাদরাসার চেয়েও বেশি কার্যক্রম শোডাউন করে প্রাথমিকের শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের কাছে বিরূপ সমালোচনার পাত্র হয়ে দাঁড়িয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 

সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছুটি বিকেল ৪টা ও ঢাকা শহরের ২টা ৪৫ মিনিটে। এক শিফটের বিদ্যালয়ের ছুটি ৩টা ১৫ মিনিট ও ঢাকা শহরের ২টা ১৫ মিনিট। এ সময়সূচি একদিকে বৈষম্যমূলক, অপরদিকে আমাদের দেশের মানুষের প্রধান খাবারের সময় দুপুরের খাবার। এ সময়সূচি দুপুরের শিশুদের খাবারের ও খেলাধুলা করার সময়ের অধিকার হরণ করে চলছে, যা প্রধানমন্ত্রীর শিশুদের খেলাধুলা উৎসাহিত করার সাথে সাংঘর্ষিক। 

প্রথমে ঢাকা শহরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের নিয়ে আলোকপাত করছি। ঢাকা শহরের প্রাথমিক বিদ্যালয় ছুটি ২টা ৪৫ মিনিট। বাড়ি গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে খানিকটা সতেজ হয়ে খেতে খেতে প্রায় ৪টা ঘনিয়ে আসে। ভাতের ক্ষুধার সময় নষ্ট হওয়ায় শিশুর খাওয়ার প্রতি আগ্রহ কমে যায়। বাড়িতে গিয়ে মাকে তাড়াতাড়ি খাবার দেয়ার তাগাদার মানসিকতা থাকে না।

  

দুপুরের খাবার ৪টায় খেলে সারা দিনের অবসাদ বা ক্লান্তি শরীরের ভর করে থাকে। এ সময় শিশু খানিকটা বিশ্রাম বা না ঘুমালে শরীরটা চাঙ্গা হয় না। সুস্থ দেহ ও মন নিয়ে শিশু খেলাধুলা করলে তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশ লাভ করে থাকে। এ অবস্থায় শরীর ও মনের সুস্থতার ফলে শিশু লেখাপড়ায় মনোযোগী হয়ে ওঠে। এভাবে মেধার বিকাশের মাধ্যমে আগামী প্রজন্ম গড়ে উঠবে সুস্থ সুন্দর জাতি হিসাবে। শিশুবান্ধব সময়সূচি হিসাবে আমি মনে করি ২টার মধ্যে শিশু দুপুরের খাবার খেয়ে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিয়ে খেলাধুলা করার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। মাত্রাধিক গরমের মাঝে শিশুর বিদ্যালয়ের পাঠদান কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয় । দুই শিফটের মাঝখানে যৌথ বা আলাদা সমাবেশ, বাংলা, গণিত, ইংরেজি সপ্তাহে ৪ দিন, বাংলাদেশ বিশ্বপরিচয়, বিজ্ঞান, ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা সপ্তাহে ৩ দিন, খেলাধুলা গান, আবৃত্তি, নাচ, শারীরিক শিক্ষা, আঁকাজোকা সপ্তাহে কমপক্ষে ২ দিন ক্লাস নেয়া হলে বিদ্যালয় হয়ে উঠবে শিশুর স্বর্গরাজ্য।

করোনায় পড়াশোনার ঘাটতির দোহাই দিয়ে শিশুর ওপর শুধু পড়া, পড়া ও পড়া তাদের অসুস্থ মানসিকতার দিকে ঠেলে দেবে। তাতে শিশু হয়ে উঠবে অসামাজিক, বিকারগ্রস্ত ও খিটখিটে মেজাজের। বিশ্রামহীন শিশু মাঠে গেলে খেলাধুলার পরিবর্তে দর্শক হিসাবে অসুস্থ মন ও শরীর নিয়ে গড়ে উঠবে বিকলাঙ্গ নাগরিক হিসাবে। আমরা বড়দের শরীরও দুপুরের খাবার খেলে ক্লান্তি-অবসাদে বিশ্রাম চায়। বিশ্রামহীন অবস্থায় কোনো কাজে মন বসে না। নিজের শরীরের কথা ভেবে নিয়ে খানিকটা হলেও শিশুদের নিয়ে ভাবুন। দীর্ঘ সময়ে একনাগাড়ে শিশুর ক্লাস মেধাহীন ও উদাসীন জীবন বয়ে আনবে। মনে রাখতে হবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এদেশের তৃণমূলের গরিব মেহনতি মানুষের সন্তানরা বেশিরভাগ লেখাপড়া করে থাকে। তাদের দুপুরে সময়মত গরম ভাত, বিশ্রাম ও বিকাল বেলা খেলাধুলার সুযোগ নষ্ট করার কোন ফন্দি ফিকির অজুহাত দাঁড় করানো কোনো অবস্থাতে কাম্য নয়। 

শিশুরা আপনাদের মত শক্তি ও সামর্থ্যের অধিকারী নয়। শিশুদের তাদের মত করে ভাবুন। কিন্ডারগার্টেন সরকারি বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাথমিক শাখার মতো প্রাথমিক শিশুদের একই কর্মঘণ্টা ভাবুন। আপনার শিশুর মত প্রাথমিকের শিশুদের দুপুরের গরম ভাত খেয়ে বিশ্রাম নিয়ে বিকাল বেলায় খেলাধুলা নিশ্চিত করুন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশাবলি অনুধাবন করুন। শিশুর সুন্দর জীবন নিশ্চিত হোক। 
লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা মাধ্যমে শিশুর শারীরিক ও মানসিক মেধার বিকাশ গড়ে উঠুক। এ জন্য প্রয়োজন সকল শিশুর জন্য শিশুবান্ধব বিদ্যালয়ের সময়সূচি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যাশা পূরণে সংশ্লিষ্টর ভাবনা জাগ্রত হোক।  

লেখক : মো. সিদ্দিকুর রহমান,  সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ ও সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষাডটকম।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032830238342285