বেতন বাড়ল প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের

নিজস্ব প্রতিবেদক |

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেডে বেতন বাড়িয়ে আদেশ জারি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) জারি করা আদেশটি প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র দৈনিক শিক্ষাডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এই গ্রেডে শুরুতে একজন শিক্ষকের মূল বেতন হবে ১১ হাজার টাকা। 

বেতনবৈষম্য নিরসনের দাবিতে দীর্ঘ আন্দোলনের পর সরকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বিষয়ে এ পদক্ষেপ নিল। তবে দাবি অনুযায়ী বেতন না বাড়ায় সন্তুষ্ট নন শিক্ষকরা। 

সূত্র জানায়, সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেডে বেতন এ আদেশ জারির তারিখ অর্থাৎ ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীণ উভয় শিক্ষকরাই ১৩তম গ্রেডে বেতন পাবেন। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা ২০১৯ এর যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী পূরণযোগ্য পদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী এ আদেশ কার্যকর হবে।

দেশে এখন প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৬৫ হাজার ৬২৬টি। এগুলোতে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক মিলিয়ে মোট শিক্ষক আছেন ৩ লাখ ৪৯ হাজার ২১৭ জন।

এর আগে গত ৭ নভেম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ১১তম ও সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেডে বেতন বাড়ানোর বিষয়ে সম্মতি জানায় অর্থ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী, আগে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকরা প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষকদের থেকে একধাপ উপরের গ্রেডে বেতন পেলেও নতুন গ্রেডে সে ভেদাভেদ থাকছে না। নতুন গ্রেডে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও প্রশিক্ষণবিহীন প্রধান শিক্ষকরা উভয়ই ১১তম গ্রেডে বেতন পাবেন। আর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক ও প্রশিক্ষণবিহীন সহকারী শিক্ষকরা উভয়ই ১৩তম গ্রেডে বেতন পাবেন।

জানা গেছে, এতদিন প্রশিক্ষণ পাওয়া সহকারী শিক্ষকেরা ১৪তম গ্রেডে (শুরুতে মূল বেতন ১০ হাজার ২০০) প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষকেরা ১৫তম গ্রেডে (৯ হাজার ৭০০) বেতন পাবেন। আর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা ১১তম গ্রেডে ও প্রশিক্ষণবিহীন প্রধান শিক্ষকরা ১২তম গ্রেডে বেতন পেতেন। 

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন দশম গ্রেডে এবং সহকারী শিক্ষকদের বেতন  ১১তম গ্রেডে উন্নীত করার দাবিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে তারা গত বছর ঢাকায় সমাবেশ করেন।  এ ছাড়া গত বছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বর্জনেরও হুমকি দেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। যদিও পরে সরকারের আশ্বাসে শিক্ষকরা  পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন করেন। তবে তাদের আন্দোলন অব্যাহত থাকে। 

আন্দোলনের একপর্যায়ে গত বছর কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া চিঠিতে, প্রশিক্ষিত ও প্রশিক্ষণবিহীন সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেডে এবং প্রশিক্ষিত ও প্রশিক্ষণবিহীন প্রধান শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডে (মূল বেতন হবে ১২ হাজার ৫০০ ) বেতন দেয়ার কথা বলা হয়েছে। 

এদিকে, অর্থ বিভাগের সম্মতি থাকলেও সহকারী শিক্ষকদের সঙ্গে গতকাল প্রধান শিক্ষকদের বেতন বাড়ানোর আদেশ জারি হয়নি। এই প্রসঙ্গে প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিব প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেডের বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতে মামলা চলমান। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কিছু করা যাচ্ছে না। তাই শুধুমাত্র সহকারী শিক্ষকদের বেতন বাড়ানো হয়েছে। 

তবে কিছু শর্তে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের ১১তম ও সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেডে বেতন বাড়ানোর বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়। শর্তগুলো হল, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা ২০১৯ এর যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা অনুযায়ী কার্যকর হবে। প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ জারির তারিখ থেকে বেতন গ্রেড কার্যকর হবে। আর বিদ্যমান সব বিধি বিধান ও আনুষ্ঠানিকতা যথাযথভাবে পূরণ করতে হবে। 

এদিকে, প্রশিক্ষিত ও প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষকদের একই গ্রেডে বেতন দেয়া হলে বাধ্যতামূলকভাবে নিয়োগের পরই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে পাঠানোর পরামর্শ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদের সভাপতি ও দৈনিক শিক্ষাডটকমের সম্পাদকীয় উপদেষ্টা মো. সিদ্দিকুর রহমান। তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, সর্বপ্রথম সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষকদের পরের গ্রেডে বেতন দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। আর প্রশিক্ষিত  ও প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষকদের একই গ্রেডে বেতন দেয়া হলে নিয়োগের পরপরই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। আর একই গ্রেডে বেতন হলেও যতদিন পর্যন্ত সব শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিশ্চিত না হবে ততদিন প্রশিক্ষিত শিক্ষকদের সম্মানজনক ভাতা দেয়া হোক। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0105299949646