প্রাথমিকে উপবৃত্তি বন্ধের তথ্য সঠিক নয়: অধিদপ্তর

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আগামী দুই বছর উপবৃত্তির টাকা পাবেন না- ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এমন তথ্য ভুয়া বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপবৃত্তি বিভাগের পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ড. নাছিমা বেগম।  

গতকাল রোববার দৈনিক আমাদের বার্তাকে তিনি বলেন, এমন তথ্য ভুয়া ও ভিত্তিহীন। কে বা কারা এটা ছড়িয়েছে জানি না। বর্তমান সরকার বরং উপবৃত্তির হার আরো বাড়াতে চায়। তাই দুই বছর বৃত্তি বন্ধ রাখার প্রশ্নই ওঠে না। 

তিনি বলেন, প্রাথমিক শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সন্তানরা অন্য স্কুলে পড়লেই বদলি- এমন একটি তথ্যও গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। এটিও ভুল। 

ড. নাছিমা দৈনিক আমোদের বার্তাকে বলেন, অধিদপ্তরের মহাপরিচালক স্যার এমন কোনো কথাই বলেননি। স্যার শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেছেন, আপনার স্কুলে আপনার বাচ্চা পড়বে। 

বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, স্যার বলেছেন আপনি শিক্ষক, আপনার স্কুলে যদি অপনার বাচ্চা না পড়ে, তাকে কিন্ডারগার্টেনে দেন তাহলে অন্য বাচ্চারা আপনার স্কুলে আসবে কেনো? 

উপবৃত্তি বিভাগের এই পরিচালক দৈনিক আমাদের বার্তাকে আরো বলেন, বিষয়টি অধিপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। এ ধরনের গুজবে জড়িতদের চিহ্নিত করা হবে। সে ব্যাপারে সবার সহযোগিতা দরকার।

এদিকে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে সারা দেশে প্রায় এক কোটি আট লাখ প্রাথমিক শিক্ষার্থী বৃত্তি পাচ্ছেন। তবে নতুন ঘোষণা এলে এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে। 

বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তি কার্যক্রমের আওতায় একটি পরিবারের সর্বোচ্চ ২ জন শিক্ষার্থী উপবৃত্তি পাচ্ছেন। তবে অধিদপ্তরের পরিচালক ড. নাছিমা বেগমের বক্তব্য অনুযায়ী সরকার উপবৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা একটি পরিবার থেকে একজন বাড়িয়ে মোট ৩ জন করা হতে পারে।

এর আগে, গত শনিবার ফেসবুকে কোনো ধরনের সূত্র, প্রজ্ঞাপন বা বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই ছড়িয়ে দেয়া হয় আগামী দুই বছর প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি বন্ধ থাকবে। পরে বিষয়টি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়, তথ্যটি সম্পূর্ণ ভুয়া, মিথ্যা ও গুজব। এ নিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক কিংবা শিক্ষক কেউই যেনো উদ্বিগ্ন না হয়। 

এ ছাড়াও গত শুক্রবার খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত এক কর্মশালায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুল হাকিম বক্তব্য দেন। তার সেই বক্তব্য ভুলভাবে প্রকাশ হয় কয়েকটি গণমাধ্যমে। এ নিয়ে ব্যাখ্যা দেয়া হয় অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে।

খুলানায় মহাপরিচালকের দেয়া বক্তব্য যেভাবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে: ‘প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আব্দুল হাকিম বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে জড়িত সব কর্মকর্তা ও শিক্ষক-শিক্ষিকার সন্তানদের অবশ্যই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়া নিশ্চিত করতে হবে। কারো সন্তান কিন্ডারগার্টেন বা অন্য কোনো বিদ্যালয়ে পড়ার প্রমাণ পেলে তাকে দূরে কোথাও বদলি করা হবে।’

‘শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) সকালে খুলনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আয়োজিত কর্মশালায় এসব কথা বলেন তিনি। এই কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম।’

উপবৃত্তি পাওয়ার যোগ্যতা: প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তি কার্যক্রম বাস্তবায়নের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি এ কার্যক্রমের আওতাভুক্ত হবে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা উপকরণ ও পোশাক-পরিচ্ছদ কেনা উপবৃত্তি কার্যক্রমের আওতাভুক্ত হবে।

প্রাক-প্রাথমিকে শিক্ষার্থীর বয়স চার বছর এবং প্রতিমাসে ৮৫ শতাংশ উপস্থিতি থাকলে উপবৃত্তির জন্য যোগ্য হবেন। প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদেরও ৮৫ শতাংশ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে উপবৃত্তি পেতে। আর চতুর্থ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ৮৫ শতাংশ উপস্থিতি এবং বার্ষিক পরীক্ষায় ৪০ শতাংশ নম্বর থাকতে হবে। তবে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের বেলায় প্রতি বিষয়ে নূন্যতম ৩৩ শতাংশ নম্বর শর্ত প্রযোজ্য হবে। এ ছাড়াও নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে ছাড়পত্রে শিক্ষার্থীর নম্বর পাওয়র বিষয়টি উল্লেখ থাকতে হবে। 

কোন শ্রেণিতে কত উপবৃত্তি: প্রাক-প্রাথমিকের প্রতি শিক্ষার্থী মাসিক ৭৫ টাকা হারে উপবৃত্তি পাবেন। আর প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণিতে কোনো পরিবারের একজন শিক্ষার্থী পড়লে মাসিক ১৫০ টাকা ও দুইজন শিক্ষার্থী পড়লে মাসিক ৩০০ টাকা হারে উপবৃত্তি পাবেন।

এ ছাড়াও ৬ষ্ঠ শ্রেণি-৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, যে সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণি চালু রয়েছে সেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো পরিবারের একজন শিক্ষার্থী পড়লে করলে মাসিক ২০০ টাকা, দুইজন শিক্ষার্থী পড়লে মাসিক ৪০০ টাকা হারে উপবৃত্তির টাকা পাবেন।

পরিস্থিতি বিবেচনা করে উপবৃত্তির পরিমাণ সরকারের অনুমোদন সাপেক্ষে হ্রাস বা বৃদ্ধি করা যাবে। 

প্রসঙ্গত, পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ মেয়াদে ২০২৪- ২৫ অর্থ বছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ হয় ৩৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। গত অর্থ বছরে এই বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছিলো ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। 

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল   SUBSCRIBE  করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে - dainik shiksha প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত - dainik shiksha স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প - dainik shiksha নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প শিক্ষার্থীদের দুপক্ষের দফায় দফায় সং*ঘর্ষে উত্তপ্ত চট্টগ্রাম! - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের দুপক্ষের দফায় দফায় সং*ঘর্ষে উত্তপ্ত চট্টগ্রাম! শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি - dainik shiksha শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029680728912354