প্রাথমিকে শুধু শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে, এ চিত্র সকলের মুখে মুখে। পাশাপাশি অসংখ্য শিক্ষক যে, ঝরে পড়ে সে খবর রাখার মানসিকতা কারো মাঝে আছে বলে দৃশ্যমান নয়। বেশির ভাগ শিক্ষার্থী দরিদ্রতার করালগ্রাসে বাবা-মাকে সহযোগিতা বা নানা উপার্জনমুখী কাজ করে থাকেন। প্রাথমিকের উপবৃত্তি তাদের কাছে অতি নগণ্য। তাদের বিদ্যালয়ে ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন কমিটির সদস্যদের মাসিক চাঁদা, সচ্ছল অভিভাবকদের দানসহ বিভিন্ন সরকারি অনুদান দিয়ে দরিদ্রতা দূর করে আর্থিক সক্ষমতা দিতে হবে।
বিদ্যালয়ে নিয়মিত লেখাপড়ার বিনিময়ে তাদের এ সহযোগিতা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে আসলেই শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধ অনেকটা শূন্য সহিষ্ণুতায় নেমে আসবে। প্রাথমিকে দীর্ঘ সময় থেকে বদলীতে ঘুষ বাণিজ্য চলে আসছে। প্রাথমিক শিক্ষায় ক্যাডার সার্ভিস না থাকলে বদলি ঘুষ বাণিজ্যের ক্যাডার বিদ্যমান। সাধারণত কতিপয় শিক্ষক নেতা নামক দালাল এ কাজ করে থাকেন। ক্ষমতার শীর্ষে পর্যন্ত তাদের খ্যাতি। তাদের এক নামে সবাই চেনে। নানা অপকর্ম করেও শার্ট, প্যান্ট, টাই পরে মাথায় তেল দিয়ে সিনা টান করে ঘুরে বেড়ায় বীরদর্পে। হায়রে ত্রিশ লাখ শহিদের রক্তে ভেজা আমাদের এ বাংলাদেশ। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বিলম্বে হলেও অনলাইনে বদলি প্রক্রিয়া শুরু করার ফলে ঘুষ বাণিজ্যের দুর্নীতি জিরো টলারেন্স নামিয়ে আনার জন্য অভিনন্দন জানাই। শিশু শিক্ষায় বৈষম্য দূরীকরণে বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ প্রতিষ্ঠালগ্ন হতে অভিন্ন (পাঠ্যবই, শিশুবান্ধব সময়সূচি ও মূল্যায়ন পদ্ধতি) বাস্তবায়নে দাবি জানিয়ে আসছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মহোদয় সকল শিশুর জন্য অভিন্ন পাঠ্য পুস্তক পাঠের ঘোষণাকে সাধুবাদ জানাই। পাশাপাশি অভিন্ন শিশুবান্ধব সময়সূচি ও মূল্যায়ন পদ্ধতি কার্যকর করার প্রত্যাশা রইল।মেধাবী তরুণ প্রজন্ম এ মহান পেশা থেকে ঝরে পড়ে। শিক্ষকতার ১৩তম স্কেল তাঁদের অন্য পেশায় যেতে বাধ্য হয়ে থাকে। বিপুল সংখ্যক প্রাথমিক শিক্ষার ক্যাডার সার্ভিস সহ উন্নত বেতনে অন্য পেশায় চলে যায়। প্রাথমিক শিক্ষা হয়ে পড়ে মেধাহীনদের প্রতিষ্ঠান। মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, সচিব, মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটা কৃপণ স্বভাবের। তাদের এ মানসিকতার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা এগুতে পারছেনা।
সাবেক সিনিয়র সচিব আকরাম আল হোসাইন বিভিন্ন মিডিয়ায় ঘোষণা দিয়ে গেছেন, প্রাথমিকের সহকারীরা শতভাগ পদোন্নতি পেয়ে প্রধান শিক্ষক হবেন। বর্তমান মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে যে লাউ সে কদু দৃশ্যমান। প্রাথমিক শিক্ষক থেকে ৬৫% ও বহিরাগত থেকে ৩৫% কোটা পূর্বের মত। প্রাথমিক প্রধান শিক্ষকদের মহামান্য আদালতের আপীল বিভাগের রায়সহ সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম গ্রেড থেকে মুক্ত করা অতি জরুরি।
প্রাথমিক শিক্ষায় যেমন শিক্ষার্থীর পাশাপাশি মেধাবী, চৌকসু শিক্ষক ঝরে পড়া রোধ করতে হবে। এ ঝরে পড়া রোধ ছাড়া গলাবাজি, তালবাহানা ও কৃপণতাসহ কোন অবস্থায় কাম্য নয়। মাননীয় প্রতিমন্ত্রী, সচিব, মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টরা বঙ্গবন্ধু ও জননেত্রী প্রধানমন্ত্রীর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ঝরে পড়া রোধ করবেন। প্রতীক্ষা রইলাম।
লেখক : মো. সিদ্দিকুর রহমান, সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ ও সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষাডটকম।