প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহারসহ বিভিন্ন অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে অন্তত ২০ জনের জেল, জরিমানা ও গ্রেফতার হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে জামালপুরে একজন সহকারী শিক্ষকসহ গ্রেফতার হয়েছেন দুইজন। জয়পুরহাটে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। আর নওগাঁয় ১৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে জেল ও ২ জনকে অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অন্যান্য স্থানে কারো গ্রেফতার বা দণ্ডিত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, দ্বিতীয় ধাপে গতকাল ময়মনসিংহ, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের ২২টি জেলা শহরে প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার এ পরীক্ষায় অংশ নেন চার লাখেরও বেশি চাকরিপ্রার্থী।
দৈনিক আমাদের বার্তার নওগাঁ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করে জালিয়াতি করায় বিভিন্ন কেন্দ্রে ১৫ জন চাকরি প্রার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে জেল ও জরিমানা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে পরীক্ষায় ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করাসহ অন্যান্য অপরাধে ১৩ জন প্রার্থীকে ১০ দিন থেকে ১ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড দেয় ভ্রাম্যমাণ আদালত। অপর দুইজনকে ৫০০ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। কারাদণ্ডপ্রাপ্তদের আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। শুক্রবার পরীক্ষা চলাকালে তাদের এ সাজা দেয়া হয়।
সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে মান্দা মমিন শাহানা সরকারি ডিগ্রি কলেজ কেন্দ্র থেকে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করায় মো. রবিউল ইসলামকে ১০ দিনের বিনাশ্রম এবং মো. মিঠুন ও মো. সুলতানকে ১ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। শহীদ কামারুজ্জামান কেন্দ্র থেকে মো. নাইমুর রহমানকে ও টেক্সটাইল কেন্দ্র থেকে মো. মোস্তাফিজুর বিন আমিনকে ১৫ দিন করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। মান্দা থানা আদর্শ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে জারজিস আলমকে ১০ দিন, মো. ফজলে রাব্বি মণ্ডলকে ১ মাস, মো. নুর আলমকে ৭ দিন, মো. জামাল উদ্দিনকে ১০ দিন, মো. আব্দুল্লাহ সাইরাফিকে ১০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়। মহাদেবপুর সর্বমঙ্গলা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে আনসার আলী নামে এক জনকে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়। বদলগাছি উপজেলার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে একজনকে পুলিশে সোপর্দ করে তার বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে। নওগাঁ সদর থানার চক এনায়েত উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে ১ জনকে ১০ দিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে, পাহাড়পুর জিএম হাই স্কুল কেন্দ্র থেকে ১ জনকে ১০ দিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়াও সরকারি বিএমসি মহিলা কলেজ কেন্দ্র থেকে ২ জনকে ৫০০ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।
পরীক্ষা চলাকালীন কানে ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করার অপরাধে পাবলিক পরীক্ষা আইন ১৯৮০ এর ১১ ধারায় তাদের সাজা দেয়া হয়।
দৈনিক আমাদের বার্তার নওগাঁ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রতারণার অভিযোগে জামালপুর সদর উপজেলায় সহকারী শিক্ষকসহ দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- সরিষাবাড়ী উপজেলার পোগলদিঘা ইউনিয়নের রুদ্র বয়ড়া এলাকার আব্দুস সামাদের ছেলে মো. আবুল কালাম আজাদ (৪৮) ও পূর্ব বয়ড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এবং ইসলামপুর উপজেলার কান্দারচর ফকিরবাড়ি এলাকার মো. ছাবেদ আলীর ছেলে মো. মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে মিনার (৩৬)।
গতকাল শুক্রবার দুপুরে জেলা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক কাজী শাহনেওয়াজ ইমন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এর আগের দিন বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার শেখের ভিটা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
তিনি জানান, শুক্রবার সকালে সারাদেশের ন্যায় জামালপুরে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হয়। এই পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে একদল প্রতারক আগের দিন বিভিন্ন জায়গায় প্রতারণার ফাঁদ পাতে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার শেখের ভিটা মির্জা আজম চত্ত্বর ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন এলাকায় অভিযান চালিয়ে সহকারী শিক্ষকসহ দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়।
আসামিদের দুপুরে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
দৈনিক আমাদের বার্তার জয়পুরহাট প্রতিনিধি জানান, জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদের নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি করার অভিযোগে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার পরীক্ষা চলাকালে তাদের আটক করা হয়।
আটকরা হলেন- জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার বাঁশখুর গ্রামের মাহমুদুল হাসান, একই উপজেলার তাজপুর গ্রামের মোস্তাকিম হোসাইন ও আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর এলাকার মোসা. সানজিদা বেগম।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারসহ অসদুপায় অবলম্বন করে পরীক্ষা দিতে আসা তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, জেলার ১২টি কেন্দ্রে প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে জয়পুরহাট সরকারি কলেজ, খঞ্জনপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও জয়পুরহাট সিদ্দিকিয়া কামিল মডেল মাদরাসা কেন্দ্র থেকে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তারা ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারসহ অসদুপায় অবলম্বন করে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন।
দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।