প্রাথমিক শিক্ষা ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে কাঙ্ক্ষিত বাজেট বরাদ্দ না হলেও গত অর্থবছরের তুলনায় এ বছরে ৪ হাজার ৯৭ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ বাড়তি বরাদ্দের জন্য প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে প্রাথমিক শিক্ষক সমাজের পক্ষ থেকে অভিনন্দন।
প্রাথমিক শিক্ষার মান বৃদ্ধির প্রত্যয়ে গত বছরের তুলনায় ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে ৪ হাজার ৯৭ কোটি টাকা বেশি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ অর্থবছরের বাজেটে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জন্য ৩৮ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। গত বছরে এই মন্ত্রণালয়ের জন্য বরাদ্দ ছিলো ৩৪ হাজার ৭২২ কোটি টাকা। এ বরাদ্দের মধ্যে রয়েছে স্কুলে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য হুইলচেয়ার, ক্র্যাচ, শ্রবণ যন্ত্র ইত্যাদি। ক্রয় ও বিতরণ এবং তাদের শ্রেণিকক্ষে প্রবেশের সুবিধার্থে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে র্যাম্প নির্মাণ করা। বিদ্যালয়ের বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের বিষয়টি অতি গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে স্লিপ ফান্ডের প্রাপ্ত টাকা হতে খরচ করা যেতে পারে। বাংলাদেশের সর্বাধিক বৈষম্যে জর্জরিত প্রাথমিক শিক্ষা। বিশাল এ বৈষম্যে প্রাথমিক শিক্ষকদের নিমজ্জিত করে রেখেছে চরম হতাশাসহ অভাবের সীমাহীন যন্ত্রণার মাঝে। সংশ্লিষ্টরা মিথ্যা ধুলা ছিটিয়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের বৈষম্যকে জাতির সামনে আড়াল করে রেখেছেন। একটা খোঁড়া যুক্তি বড় বড় কর্তাব্যক্তিরা প্রায়ই বলে থাকেন প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন আগে তুলনা অনেক বেড়েছে।
বেতন-মজুরি ও আয় বৃদ্ধি হয়েছে আপাময় জনসাধারণের সব পেশা-শ্রেণির। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের কশাঘাত থেকে পেরিয়ে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে চলছে। টিনের তৈরি বেড়া, ভাঙা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আজ দৃষ্টিনন্দন বহুতলবিশিষ্ট ও আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে শিশুবান্ধব বিদ্যালয়রূপে জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে চলছে। অপরদিকে, শিক্ষকদের সমযোগ্যতা সম্পন্ন সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে বিশাল বেতন বৈষম্য।
প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের যোগ্যতা স্নাতক সমমানের দ্বিতীয় বিভাগ আর বেতন গ্রেড ১৩তম। অপরদিকে, সরকারের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগের যোগ্যতা স্নাতক সমমান বেতন গ্রেড ১০ম। আরো যেমন-
১. পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পদে নিয়োগের যোগ্যতা স্মাতক বা সমমান, বেতন গ্রেড ১০ম।
২. নার্সদের নিয়োগ পদে যোগ্যতা এইচএসসি (ডিপ্লোম ইন নার্সিং) বেতন গ্রেড ১০ম।
৩. উপসহকারী কৃষি অফিসার পদে নিয়োগে যোগ্যতা ৪ বছর কৃষি ডিপ্লোমা, বেতন গ্রেড ১০ম (প্রস্তাবিত)।
৪. মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক ও কর্মকর্তা পদে নিয়োগের যোগ্যতা স্মাতক সমমান, বেতন গ্রেড ১০ম ও ৯ম। এ ছাড়া একই কারিকুলাম, একই সিলেবাস ও একই শিক্ষার্থী নিয়ে কাজ করা পিটিআই পরীক্ষণ বিদ্যালয় শিক্ষক পদে নিয়োগ যোগ্যতা স্নাতক (দ্বিতীয় বিভাগ) বেতন ১০ম গ্রেড।
৫. সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ যোগ্যতা স্নাতকোত্তর, বেতন গ্রেড ১১তম।
প্রাথমিকের শিক্ষকদের সঙ্গে অন্যান্য সমযোগ্যতা ও সমকাজে কর্মচারীদের বিশাল বৈষম্য বিরাজ করছে। এ বৈষম্যের ফলে প্রাথমিক শিক্ষকদের মাঝে বিরাজ করছে ক্ষোভ ও যন্ত্রণা। প্রবাদ আছে পেটে দিলে পিঠে সয়। শিক্ষকদের পেটে তীব্র ক্ষুধার যন্ত্রণা রেখে মানসম্মত শিক্ষার বাস্তবতা দুরূহ। বঙ্গবন্ধু আজীবন বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে বেতন বৈষম্যের ফলে যন্ত্রণায় শিক্ষকদের কাতরাতে হচ্ছে।
বাস্তবতার নিরীক্ষা প্রাথমিকে শিক্ষকদের সঙ্গে সরকারি কর্মচারীদের এই বিশাল বেতন বৈষম্য কোনো অবস্থায় কাম্য নয়। প্রাথমিক শিক্ষা জাতির হৃৎপিণ্ড। একে অবহেলা বা অকার্যকর করা হলে দেশ ও জাতির উন্নয়নের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়বে। কার্যকর মানসম্মত শিক্ষার স্বার্থে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের ১০ম ও প্রধান শিক্ষকদের ৯ম গ্রেড প্রত্যাশা যৌক্তিক। এই যৌক্তিক প্রত্যাশার মাধ্যমে দূর হবে প্রাথমিক শিক্ষকদের বৈষম্যপূর্ণ বেতন স্কেল। মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেটে বাড়তি বরাদ্দ ৪ হাজার ৯৭ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। এ বরাদ্দ প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য দূরীকরণে ব্যবহার করা হবে-এ আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
লেখক: সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ