প্রাথমিকে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদের প্রয়োজন আছে কি?

মাহফিজুর রহমান মামুন |

বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কর্তৃপক্ষ সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করবেন কিনা অথবা পদ সৃষ্টি  করলে তাদের কততম গ্রেড দেওয়া হবে, এটা প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারে অন্যতম একটি আলোচিত-সমালোচিত ইস্যু। কিছু সিনিয়র সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক এই পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্তকে সমর্থন করলেও অধিকাংশ সহকারী শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক সমিতিগুলো একযোগে এই পদ সৃষ্টির বিরোধিতা করছেন।

সহকারী শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষক সমিতিগুলো মনে করছেন যে এই পদ সহকারী শিক্ষকদের বেতন বৈষম্যকে আরো বৃদ্ধি করবে। অন্যদিকে যে অল্প কয়েকজন সিনিয়র সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক  এই পদ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত সমর্থন করছেন তাদের যুক্তি হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা যেহেতু ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত হচ্ছে সেহেতু এই পদ সৃষ্টি করা হোক। তারা এই পদ সৃষ্টির সমর্থনে হাইস্কুল ও কলেজের উদাহরণ দিচ্ছেন। আমি নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন একজন সহকারী শিক্ষক হিসেবে এটা বলতে চাচ্ছি না যে এই পদের একেবারে দরকার নেই। এই পদের দরকার অবশ্যই আছে; তবে বর্তমানে এই পদের আসলে কোন দরকার নেই।

হাইস্কুলে সহকারী শিক্ষক কর্মরত থাকেন প্রায় ১৫-২০ জন, সেখানে আরো কর্মরত থাকেন একজন দপ্তরি, আয়া, নাইট গার্ড ও অফিস সহকারী। তাছাড়া হাইস্কুলে রয়েছে বিশাল অবকাঠামো। তাই হাইস্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদের দরকার আছে। কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণিতো দূরের কথা, অনেক বিদ্যালয়ে ৫ম শ্রেণি চালানোর মত শিক্ষক ও অবকাঠামো নেই। অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গড়ে ৫ জন করে শিক্ষকের পোস্ট রয়েছে। তারমধ্যে পদশূন্যতার কারণে কতগুলো স্কুলে চার জন, তিন জন, দু’জন এমনকি একজন শিক্ষকও রয়েছেন এমন স্কুলও আছে বলে পত্রিকার মাধ্যমে কিছুদিন আগে জানা গিয়েছিল। তাছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোনো অফিস সহকারী নেই। এমনকি কিছু স্কুলে দপ্তরি পদ থাকলেও অধিকাংশ স্কুলে দপ্তরি পর্যন্ত নেই। তাই শিক্ষকদের পাঠদান ছাড়াও নিজেদেরকে দপ্তরি ও অফিস সহকারী হিসেবে স্কুলের সব কাজ করতে হয়। তাহলে বলুনতো প্রাথমিকে বর্তমানে কোন পদ জরুরি দরকার অফিস সহকারী নাকি সহকারী প্রধান শিক্ষক?

একজন সহকারী শিক্ষককে যেখানে দৈনিক ৭-৮টা ক্লাস নেয়ার পাশাপাশি দপ্তরি ও অফিস সহকারীর কাজগুলো করতে হয় সেখানে সব স্কুলে সহকারী শিক্ষকের সংখ্যা বৃদ্ধি, একজন করে দপ্তরি ও অফিস সহকারীর পদ সৃষ্টি না করে এই মুহূর্তে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ সৃষ্টি করা আমার মনে হচ্ছে বাতুলতা ছাড়া আর কিছুই নয়; বিদ্যালয়ের অবকাঠামোর কথাতো বাদই দিলাম। হ্যা, সহকারী প্রধান শিক্ষক পদের দরকার হবে এক সময়, যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো ৮ম শ্রেণিপর্যন্ত উন্নীত হবে, ১০-১৫ জন সহকারী শিক্ষক নিযুক্ত থাকবেন, অফিস সহকারী, দপ্তরি, আয়া, নাইট গার্ড নিযুক্ত হবেন, উন্নত অবকাঠামো হবে। তখন সহকারী প্রধান নিয়োগ দিলে কোন সমস্যা নেই।

আবার সহকারী প্রধান নিয়োগ দিলেই যে ১টা গ্রেড ব্লক রেখে সহকারী শিক্ষকদের বঞ্চিত করতে হবে তারও কোনো যুক্তি নেই। সহকারী শিক্ষকদের ও সহকারী প্রধান শিক্ষকদের একই গ্রেডে রেখে সহকারী প্রধান শিক্ষকদের জন্য সম্মানী ভাতার ব্যবস্থা করলেতো কারো কোন আপত্তি থাকার কথা নয়।

প্রাথমিক শিক্ষা বিভাগে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসারের গ্রেড একই (৯ম), পিটিআই ইন্সট্রাক্টর ও সহকারী সুপারিনটেনডেন্টের গ্রেডতো একই (৯ম)।সেখানেতো কোন সমস্যা হচ্ছে না। তাহলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক উভয়ের গ্রেড একই হলে সমস্যা কি? তাই কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের বিনীত নিবেদন মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের জন্য আপাতত সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ সৃষ্টির পরিকল্পনা স্থগিত রেখে সহকারী শিক্ষকদের দ্রুত ১১তম গ্রেড প্রদান করুন।

তারপরেও যদি কর্তৃপক্ষের মনে হয় যে সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ সৃষ্টি প্রয়োজন তাহলে সহকারী শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক উভয়কে একই গ্রেডে (১১তম গ্রেডে) রাখুন। প্রয়োজনে সহকারী প্রধান শিক্ষকদের জন্য মাসিক সম্মানি ভাতা/বাড়তি ২/৩টি ইনক্রিমেন্ট দেয়া যেতে পারে। তাই ভবিষ্যতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করলেও যেন সহকারী শিক্ষকদের বঞ্চিত করে ১টা গ্রেড সহকারী প্রধান শিক্ষকদের জন্য ব্লক করে না রাখা হয়। এটাই সহকারী শিক্ষকদের একান্তই চাওয়া। এতে করে ভবিষ্যতে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টি করা হলেও সহকারী শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক উভয়ই সন্তুষ্ট থাকবেন।

কর্তৃপক্ষের একথাও মনে রাখা উচিত যে সহকারী শিক্ষকরাই পাঠদানের মত আসল ও গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করেন। তাই তাদেরকে বঞ্চিত করে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা কখনো অর্জন করা সম্ভব নয়।

 

লেখক: সহকারী শিক্ষক, ভীমদামাল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বোদা, পঞ্চগড়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024738311767578