প্রাথমিক-জুনিয়র বৃত্তিবঞ্চিত দেড় লাখ শিক্ষার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক |

২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা ও ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষা চালুর পর পুরনো পদ্ধতির বৃত্তি পরীক্ষা বাতিল করা হয়। বলা হয় ওই পরীক্ষা দুটোতে সবাই অংশ নিতে পারতো না। তাই নতুন চালু করা পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষার ভিত্তিতেই বৃত্তি দেওয়া শুরু হয়। কিন্তু গত দুই বছর পিইসি ও জেএসসি এবং সমমানের পরীক্ষা হয়নি। এ বছরই সরকার ঘোষণা করেছে, এ দুই পরীক্ষা আর হবে না। ফলে বন্ধ রয়েছে প্রাথমিক ও জুনিয়র বৃত্তি। এই ঘোষণার ফলে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বৃত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রায় দেড় লাখ মেধাবী শিক্ষার্থী।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগামী বছর পর্যায়ক্রমে নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন শুরু হবে। নতুন শিক্ষাক্রমে পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা রাখা হয়নি। আগামীতে এ দুই পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ আর নেই। পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষার ভিত্তিতে বৃত্তি দেওয়ার সুযোগও আর থাকছে না। বৃত্তি বন্ধের পর প্রায় আড়াই বছর পার হয়ে গেলেও বিষয়টি নিয়ে নতুন প্রস্তাব কী, তা জানা যায়নি।

জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. মুহিবুর রহমান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘আগের দুই বছরের মতো এ বছরও পিইসি হবে না। নতুন শিক্ষাক্রমেও পিইসি পরীক্ষা নেই। কিন্তু বৃত্তিবিষয়ক পরীক্ষা যে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে, সে কথা এখন পর্যন্ত অফিশিয়ালি ডিক্লেয়ার করা হয়নি। আগে তো আমাদের এ বিষয়ক সার্কুলার পেতে হবে। সেটা পেলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব মতে বৃত্তি নিয়ে আমরা নতুন করে ভাবব। হয়তো কোনো উপায় বের হবে।’ 

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ  বলেন, ‘জুনিয়র বৃত্তি নিয়ে এখনো কোনো প্রস্তাব তৈরি হয়নি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তর ও শিক্ষা বোর্ডগুলো বসে এ ব্যাপারে একটা পদ্ধতি খুঁজে বের করতে হবে। তবে নতুন কোনো পরীক্ষার পক্ষে আমি নই। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের অ্যাসেসমেন্ট ও স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার ফল দিয়েই জুনিয়র বৃত্তির ব্যবস্থা করা যেতে পারে।’

জানা যায়, পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষায় সর্বশেষ অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৫০ লাখের মতো। বৃত্তি দেওয়া হতো ১ লাখ ৬০ হাজার ২০০ শিক্ষার্থীকে। পিইসি ও ইবতেদায়ির ১ লাখ ৫ হাজার এবং জেএসসি ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার ভিত্তিতে ৫৫ হাজার ২০০ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হতো। পিইসির শিক্ষার্থীরা তিন বছর এবং জেএসসির বা জেডিসির শিক্ষার্থীরা দুই বছর বৃত্তি পায়।

প্রাথমিকে মেধাবৃত্তি পেত ৩৩ হাজার শিক্ষার্থী, যারা প্রতি মাসে পেত ৩০০ টাকা। আর সাধারণ বৃত্তি পেত ৪৯ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী, যারা মাসিক পেত ২২৫ টাকা। ইবতেদায়ির ৭ হাজার ৫০০ মেধাবৃত্তি এবং ১৫ হাজার শিক্ষার্থী সাধারণ বৃত্তি পেত। তাদের প্রাপ্ত টাকার পরিমাণ প্রাথমিকের সমান। জেএসসিতে ১৪ হাজার ৭০০ মেধাবৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থী মাসে ৪৫০ এবং ৩১ হাজার ৫০০ সাধারণ বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থী পেত ৩০০ টাকা। জেডিসিতে ৩ হাজার শিক্ষার্থী মেধাবৃত্তি ও ৬ হাজার শিক্ষার্থী সাধারণ বৃত্তি পেত। তাদের টাকার পরিমাণ ছিল জেএসসির শিক্ষার্থীদের সমান। সব স্তরের বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীকে বছরের শুরুতে এককালীন বই-খাতা কেনার টাকা দেওয়া হতো।

ভিকারুননিসা অভিভাবক ফোরামের নেতা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বৃত্তি বন্ধ থাকায় দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীরা আরও বিপদে পড়েছে। যুগ যুগ ধরে চলা এ বৃত্তির মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হতো। শুনেছি এটা আবার চালু হবে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028219223022461