প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রয়োজন মেধাবী শিক্ষক

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

শিশুদের দক্ষ মানুষ হিসাবে গড়ে তুলতে চাই দক্ষ শিক্ষক। শিক্ষার মূল ভিত্তি হলো প্রাথমিক শিক্ষা। প্রাথমিক শিক্ষা মজবুত না হলে মাধ্যমিক, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষা সফল হবে না। তাই প্রাথমিক শিক্ষাকে মজবুত করতে প্রয়োজন মেধাবী ও যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক। আর যথাযথ বেতন ও মর্যাদা দেওয়ার মাধ্যমেই কেবল এই মানের শিক্ষক পাওয়া সম্ভব। সবার জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিতকরণে সাংবিধানিক ও আইনগত বাধ্যবাধকতা রয়েছে। শনিবার (৮ জানুয়ারি) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। 

নিবন্ধে আরও জানা যায়, মানসম্মত শিক্ষার বিকল্প হিসেবে বিদ্যালয়কে আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলা প্রয়োজন। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠদানকে আরো কার্যকর করতে আধুনিক পদ্ধতি, কৌশল ও আকর্ষণীয় শিক্ষা উপকরণ দরকার। প্রতিটি শিশুকে জানানো প্রায়োজন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। ধর্মীয়, নৈতিক ও উন্নত চারিত্রিক গুণাবলি অর্জনে সহায়তা করা। এক্ষেত্রে শিক্ষক, বাব-মা, অভিভাবক, শিক্ষা ও প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিদের উদ্যমী হতে হবে। বর্তমান যুগে একটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হলো জাতির অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্য ও প্রত্যাশা পূরণের উপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করা। বাংলাদেশ ২০২০-২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার যে লক্ষ্য স্থির করেছে, মানসম্মত শিক্ষা ছাড়া সেটি অর্জন সম্ভব নয়।

গ্রামীণ বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীদের বৈচিত্র্যময় আর্থসামাজিক অবস্থা বিশেষ বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন এবং শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষকের জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণ ও বাড়তি সহায়তা প্রয়োজন কি না তা ভেবে দেখা জরুরি। বর্তমান ছাত্রছাত্রীদের একটি অংশের অভিভাবকের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। আরেকটি অংশের বাবা-মায়েরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেছেন। বাকি একটি অংশ আসছে এমন পরিবার থেকে যাদের বাবা-মা প্রাথমিক পরবর্তী শিক্ষায় শিক্ষিত। বিভিন্ন আর্থ সামাজিক পরিস্থিতি থেকে আসা ছাত্রছাত্রী যাতে শ্রেণিকক্ষে একটি সমধারা বা অভিন্ন পরিবেশে জ্ঞানার্জন করতে পারে, সেটি শিক্ষককে নিশ্চিত করতে হয়। শিক্ষক যাতে সেই ভূমিকা পালন করতে পারেন সেজন্য তাঁর উপযুক্ত প্রশিক্ষণ থাকা প্রয়োজন। অন্যদিকে, এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের প্রতি যে বাড়তি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন তা সহায়ক শিক্ষকের মাধ্যমে নিশ্চিত করা যেতে পারে। মানসম্মত শিক্ষাদানে শিক্ষক প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। সরকারের প্রাইমারি টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (পিটিআই)সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান শিক্ষক প্রশিক্ষণে ভূমিকা পালন করছে সত্যি, তবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এক্ষেত্রে যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও উদ্ভাবন চলছে তা পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ আমাদের শিক্ষকদের কতটুকু?

আমাদের দেশে চিকিত্সা, প্রকৌশল, স্থাপত্য, গবেষণা ইত্যাদি পেশায় জড়িতদের আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের যে সুযোগ রয়েছে, শিক্ষকদের জন্য তা তৈরি হয়েছে কি? আবার পেশাগত উত্কর্ষ সাধনের সঙ্গে ব্যক্তির মর্যাদা বৃদ্ধির বিষয়টি অঙ্গাঙ্গী জড়িত, যা শিক্ষকদের জন্য অত্যন্ত সীমিত। ফলে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী এ পেশায় আসতে আগ্রহবোধ করেন না। কাজের স্বীকৃতি যে কোনো পেশার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তির পেশাগত উত্কর্ষ সাধণে তা অনুপ্রেরণা জোগায়। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে বছরের শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের স্বীকৃতির বিদ্যমান সরকারি ব্যবস্থাটিকে আরো উদ্ভাবনমূলক ও প্রসারিত করা প্রয়োজন। প্রাইভেট টিউশনির দাপট, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়ার ঝোঁক, শূন্য শিক্ষকপদ, শিক্ষকমণ্ডলীরও আন্তরিকতার অভাব, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পরিকাঠামো, শিক্ষক-শিক্ষিকার শিক্ষণ পরিবেশের অভাব এবং এ কারণে গুণমানের অভাব থাকলে শিক্ষিত হবার ক্ষেত্রটি থেকে যায় সংকুচিত। শিক্ষা যদি জাতির মেরুদণ্ড হয়, তবে শিক্ষকবৃন্দ সে মেরুদণ্ডের স্রষ্টা। গোটা মনুষ্যসমাজে নৈতিক বিচারে শিক্ষকদের চেয়ে সম্মানিত ও শিক্ষকতার চেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পেশা আর একটিও নেই।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবিষ্যত্ বিশ্বে ১১টি উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তির একটি বাংলাদেশ। কিন্তু তাঁদের শঙ্কা শুধু শিক্ষায় পিছিয়ে থাকার কারণে অনেক প্রতিশ্রুতির সেই ভবিষ্যত্ মিথ্যা হয়ে যেতে পারে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের উদ্যোগী হতে হবে এবং তা এখনই। সুতরাং মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে উপযুক্ত শিক্ষাই আবশ্যক। আর শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে যথার্থ সম্মান এবং সম্মানীর ব্যবস্থা করতে রাষ্ট্রকেই দায়িত্ব নিতে হবে।

লেখক : গোলাম রহমান চৌধুরী, চট্টগ্রাম । 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025851726531982