প্রাথমিক শিক্ষকদের উচ্চধাপের আনন্দ ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা

মো. সিদ্দিকুর রহমান |

‘আমার যাবার সময় হলো-দাও বিদায়’-কাজী নজরুল ইসলামের বিয়োগান্ত গানের লাইনটি গাওয়ার সাথে সাথে সকলের হৃদয়ে বিদায়ের সুর বেজে উঠে। মানব জীবনে বিদায়ের বিভিন্ন স্তর থাকে। শৈশব বিদায় হয়ে কৈশরে, পর্যায়ক্রমে যৌবন, বৃদ্ধ সর্বশেষে চিরবিদায়। কর্মক্ষেত্রে পেশাজীবীদের ক্ষেত্রে পদোন্নতি সর্বশেষ চাকুরি থেকে বিদায়। প্রত্যেক মানুষ কর্মের মাধ্যমে তার বিদায়কে স্মরণীয় করে রাখতে পারে। যুগে যুগে বহু মানুষ তার কর্মের মাধ্যমে বিদায়ের পর অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন। প্রাথমিক শিক্ষা জাতীয়করণের মাধ্যমে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতি ও শিক্ষকদের মাঝে অমর হয়ে আছেন।

প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রাথমিক শিক্ষাকে ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকা পৌরসভা ও গ্রাম সরকারের হাতে হস্তান্তর করার অধ্যাদেশ জারি করেন। বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির আহ্বানে সারাদেশে ৩ মাস ১০ দিন বিদ্যালয় তালা ঝুলিয়ে রাখেন। সামরিক সরকারের প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের জাতীয়করণের বিরুদ্ধে জাতীয় সংসদে পাস করা ২টি আইন বাতিল করতে বাধ্য হয়। 

বাংলাদেশে সামরিক সরকারের প্রথম পরাজয় প্রাথমিক শিক্ষকদের কাছে। ঐক্যবদ্ধ জাতি যেমন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছেন। তৎকালীন বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি নেতৃত্বে তেমনি প্রাথমিক শিক্ষা বেসরকারিকরণ থেকে রক্ষা পায়। রাজাকার ভূমিকায় বিদ্যালয় খোলা রেখে সামরিক শাসকের ছত্রছায়ায় নেতৃত্ব দেন বি জি প্রেস প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আ. আউয়াল তালুকদার। এখনো জাতি ও প্রাথমিক শিক্ষকেরা বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতিকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছে। বিদায়ের পর তাদের কর্মকাণ্ড অমর হয়ে আছেন।

বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একই ধারাবাহিকতা কাজ করে অমর হয়ে থাকবেন। প্রাথমিক শিক্ষকদের অগণিত সংগঠন সকলের প্রত্যাশা ছিল প্রধান শিক্ষকদের ১০তম, সহকারী শিক্ষকদের ১১তম স্কেল। সাবেক মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সচিব সকলেই প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়ি ছড়িয়েছেন। অবশেষে প্রধান শিক্ষক ১১তম, সহকারী শিক্ষক ১৩তম গ্রেড, এ হলো খণ্ড-বিখণ্ড সংগঠনগুলোর আন্দোলনের ফসল। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে বেতন বৈষম্য আন্দোলনে প্রাথমিক শিক্ষকদের ফসল হিসেবে ননট্রেন্ড শিক্ষকরা এক লাফে ২ হাজার ৭০০ থেকে ৩ হাজার টাকা স্কেলে, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকেরা ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ১০০ স্কেলে, প্রধান শিক্ষকেরা ৩ হাজার ৭০০ টাকা স্কেল পান। সে সময় আমার অত্যন্ত প্রিয় স্নেহভাজন সাংবাদিক শরিফুজ্জামান পিন্টু এ উন্নীত স্কেল নিয়ে মন্তব্য জানতে চাওয়ায় আমি জবাব দিয়েছিলাম এ বেতন স্কেল শুভঙ্করের ফাঁকি। যা একটি জাতীয় পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে কারাবরণের জন্য নরসিংদী জেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি  আমার উদ্দেশ্যে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। সেখানে আমি শুভঙ্করের ফাঁকি এ ব্যাখ্যা দিয়ে বক্তব্য প্রদান করেছিলাম। 

সে সময় সরকারি কর্মচারীদের বেতন উন্নীত করা হলে নিম্নধাপে বেতন নির্ধারণ হতো। এ প্রেক্ষাপটে প্রায় ৯৫ ভাগ শিক্ষকের বেতন বৃদ্ধির পরিবর্তে পিপি কবলে পড়ে বেতন বৃদ্ধি থমকে দাঁড়াতো। ঢাকার সুরিটোলা স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক আ. রহমান দীর্ঘ ৪ বছর বেতন বৃদ্ধি আটকে ছিল নিম্নধাপের বেতন নির্ধারণের কারণে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়েও অর্থ মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে ধর্না দিয়ে কোন লাভ হয়নি। ২টি মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য ছিল এ সরকারি বিধি। এ লঙ্ঘন করা সম্ভব নয়। 

প্রাথমিক শিক্ষকদের বেলায় এ বিধি পরিবর্তন করা না হলেও পরিবর্তন করেছে অবশেষে ভূমি মন্ত্রণালয়। সকল প্রাথমিক শিক্ষকদের কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের প্রতি। ১৩তম গ্রেড অবশ্যই শিক্ষকদের আন্দোলনের ফসল। ১৩তম স্কেল আমাদের শিক্ষা দিয়েছে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন ছাড়া সহকারী শিক্ষকদের কাঙ্খিত ১১তম গ্রেড ও প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড পাওয়া দুরুহ। ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে দালালি, তোষামোদীর সুর পরিবর্তন করে বজ্র্যকন্ঠে শিশুসহ শিক্ষকদের অধিকার আদায়ে এগিয়ে আসুন। সিনিয়র সচিব মহোদয় অনেক যুগান্তকারী উদ্যোগ প্রাথমিক শিক্ষায় রেখে যাচ্ছেন। তার আসন্ন অবসরকে প্রাথমিক শিক্ষা ও শিক্ষকদের মাঝে স্মরণীয় রাখতে ১০ম ও ১১তম স্কেলের বাস্তবায়নসহ অভিন্ন (কর্মঘন্টা, বই, মূল্যায়ন পদ্ধতিসহ) প্রাথমিক শিক্ষায় সকল বৈষম্য দূর করবেন। এ প্রত্যাশা সকলের।

লেখক : মো. সিদ্দিকুর রহমান, সভাপতি, বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা গবেষণা পরিষদ; সম্পাদকীয় উপদেষ্টা, দৈনিক শিক্ষাডটকম।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় - dainik shiksha হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে - dainik shiksha সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড - dainik shiksha মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে - dainik shiksha প্রাথমিকের তৃতীয় ধাপের মৌখিক পরীক্ষা শুরু ৯ মে স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha স্কুল-মাদরাসা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ হাইকোর্টের বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলি নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশ হাইকোর্টের please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050311088562012