প্রতি সোমবার সচিবালয়ে অফিশিয়াল পাস বন্ধ থাকে। ওইদিন সাধারণত দর্শনার্থী শূন্য দিবস। সে হিসেবে গতকাল সোমবারও সচিবালয়ে দর্শনার্থী ঢোকার কথা নয়। কিন্তু গতকাল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের দপ্তরে আধা ঘণ্টা বসে থেকে কমপক্ষে ১০-১২ জন দর্শনার্থীকে দেখা যায়। তাদের সবাই সিটি করপোরেশন এলাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলির তদবির নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদের সাক্ষাৎ প্রার্থী। কেউ কেউ মন্ত্রী-এমপির তদবির নিয়ে এসেছেন। আবার কেউ কেউ সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার তদবির নিয়ে এসেছেন। আবার সরকারি অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা তার স্ত্রী বা আত্মীয়স্বজনের বদলির তদবির নিয়ে নিজেই এসেছেন। তবে গত রোববার থেকেই সচিব ফরিদ আহাম্মদের ফোনও ছিল বন্ধ। মূলত তদবিরে অতিষ্ঠ হয়ে তিনি ফোনই বন্ধ করে রেখেছেন। মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) দেশ রুপান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শরীফুল আলম সুমন।
প্রতিবেদনে আরও জানা যায় জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘অনলাইন বদলিতে তদবিরের কোনো সুযোগ নেই। আমরা যে ক্রাইটেরিয়া নির্ধারণ করেছি, এর ভিত্তিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নম্বরের ভিত্তিতে সফটওয়্যারই নির্ধারণ করবে কে বদলি হবেন? আর শিক্ষকরা ঘরে বসেই তা জানতে পারবেন। তার পরও অনেকেই তদবির নিয়ে আসছেন। আমরা তাদের ক্রাইটেরিয়াগুলো বোঝানোর চেষ্টা করছি। অনেকে এর পরও একটা আবেদনের কপি রেখে যাচ্ছেন। আজ (১১ এপ্রিল মঙ্গলবার) আবেদন যাচাই-বাছাই শেষ হবে। এরপর সিটি করপোরেশন এলাকার বদলির তালিকা প্রকাশ করা হবে। যেহেতু ১০ শতাংশ শিক্ষক সিটি করপোরেশন এলাকায় আসতে পারবেন, তাই খুব কমসংখ্যক শিক্ষকই বদলির সুযোগ পাবেন।’
জানা যায়, গত ৪ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান ও সহকারী শিক্ষকরা ১২ সিটি করপোরেশন এলাকায় বদলির সুযোগ পেয়েছেন। ৭ ও ৮ এপ্রিল উপজেলা শিক্ষা অফিসাররা তা যাচাই-বাছাই করেছেন। ৯ এপ্রিল জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ও ১০ এপ্রিল বিভাগীয় উপপরিচালক যাচাই করেছেন। আর ১১ ও ১২ এপ্রিল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের যাচাই-বাছাই শেষে বদলিযোগ্য প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। এবার সব কাজই হয়েছে অনলাইনে। তার পরও আবেদনের পর থেকেই প্রার্থী ও তাদের আত্মীয়স্বজনরা তদবিরে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রাথমিকের শিক্ষক বদলির ক্ষেত্রে রাজধানীতে আসার জন সবচেয়ে বেশি চাপ থাকে। তবে ঢাকা মহানগরীতে পদশূন্য রয়েছে ৮২টি। কিন্তু বদলি নীতিমালা অনুসারে শূন্যপদের ১০ শতাংশ মাত্র আটজনের বদলি হয়ে আসার সুযোগ রয়েছে।
কিন্তু আবেদন পড়েছে ১ হাজার ৪৬৮টি। আর দেশের ১২ সিটি করপোরেশনে শতাধিক পদে বদলির সুযোগ থাকলেও আবেদন পড়েছে প্রায় ছয় হাজার। তবে এই শতাধিক পদের জন্য শুধু মন্ত্রণালয়েই মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের ১৭৩টি ডিও (আধা সরকারি পত্র) জমা পড়েছে।প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশন এলাকায় বদলির ক্ষেত্রে পাঁচ ধরনের মানদ- ঠিক করা হয়েছে। সেগুলো হলো সরকারি, আধা সরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত স্বামী/স্ত্রীর কর্মস্থল, চাকরির আগে বিয়ে হয়ে থাকলে স্বামী/স্ত্রীর স্থায়ী ঠিকানা, অসুস্থতা, চাকরিতে জ্যেষ্ঠতা ও বিধবা বা তালাকপ্রাপ্ত শিক্ষকের পিতা বা বর্তমান স্থায়ী ঠিকানায় বদলির ওপর মার্কিং করা হবে। যেসব শিক্ষক সর্বোচ্চ নম্বর পাবেন, তারাই বদলির সুযোগ পাবেন।
তবে সিটি করপোরেশন এলাকায় বদলির ক্ষেত্রে খুব কমসংখ্যক শিক্ষক সুযোগ পেলেও এর আগেই বেশ কিছু শিক্ষক বদলি হয়ে সিটি করপোরেশন এলাকায় ঢুকে গেছেন। বদলির নির্দেশিকায় রাখা জনস্বার্থে বদলির সুযোগে এরই মধ্যে অনলাইন ছাড়াও শতাধিক শিক্ষক বদলি হয়েছেন। এ ক্ষেত্রে কোনো কোনো বদলির ক্ষেত্রে বড় ধরনের আর্থিক লেনদেনেরও অভিযোগ রয়েছে।