প্রাথমিক শিক্ষকরাও কর্মকর্তা হতে পারবেন

নিজস্ব প্রতিবেদক |

এবার কপাল খুলছে সারাদেশের লাখ লাখ প্রাথমিক শিক্ষকের। আর ৬৫ ভাগ নয়, বরং প্রধান শিক্ষক পদে তারা পাবেন শতভাগ পদোন্নতি। শুধু প্রধান শিক্ষকই নয়, উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, বিভাগীয় উপপরিচালক, এমনকি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক পদ পর্যন্ত পদোন্নতি পাবেন তারা। এমনই পরিকল্পনা করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ১৩ মে সহকারী শিক্ষকদের এক সংগঠনের সঙ্গে আলোচনায় বসে এ আশ্বাস দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আকরাম আল হোসেন।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এফ এম মনজুর কাদির সাংবাদিকদের বলেন, 'প্রাথমিক শিক্ষকদের শতভাগ পদোন্নতি ও কর্মকর্তা পদে তাদের পদায়ন করতে হলে নিয়োগবিধির সংশোধন করতে হবে। বর্তমান নিয়োগবিধির আলোকে শিক্ষকদের প্রত্যাশা পূরণ করা সম্ভব নয়। সে কারণে সহকারী শিক্ষক, প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষা কর্মকর্তাদের নিয়োগবিধি সংশোধন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।'

বর্তমানে সারাদেশে ৬৫ হাজার ৬০১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন তিন লাখ ২২ হাজার ৭৬৬ জন। বিদ্যালয়গুলোতে দুই কোটি ১৯ লাখ ৩২ হাজার ৬৩৮ ছাত্রছাত্রী পড়াশোনা করছে।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানান, ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দের আগ পর্যন্ত তারা টিও, এটিও ও ডিপিও পর্যন্ত হতে পারতেন। ১৯৯৮ খ্রিষ্টাব্দে নতুন শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা জারি করা হলে শিক্ষকদের কর্মকর্তা হওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে পড়ে। বর্তমানে প্রাথমিক শিক্ষকদের পদোন্নতির সুযোগ খুব সীমিত। সরকারের নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে পদোন্নতির সোপান সৃষ্টি হবে। এতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার চাকরি অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে এবং এ পেশায় আকৃষ্ট হবেন মেধাবীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষকসহ অন্য সব পদে শতভাগ পদোন্নতির দাবি দীর্ঘদিনের। প্রধান শিক্ষক পদে ৬৫ ভাগ সহকারী শিক্ষকের পদোন্নতির বিধান থাকলেও ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে আদালতে মামলা থাকায় পদোন্নতি বন্ধ রয়েছে। পদোন্নতি বন্ধের কারণে সারাদেশে প্রায় ২০ হাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক শূন্য হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় শিক্ষকদের আন্দোলনের মুখে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে পদোন্নতিযোগ্য শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক পদে চলতি দায়িত্ব দেওয়া শুরু করে, যা অব্যাহত রয়েছে এখনও। মামলার জটিলতা নিষ্পত্তি হলে চলতি দায়িত্বের পদগুলোকে পদোন্নতি হিসেবে দেখানোর পরিকল্পনা রয়েছে এ মন্ত্রণালয়ের।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৪ এপ্রিল 'প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগবিধি-২০১৯' জারি করা হয়। এতে সহকারী শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষক- উভয়ের নিয়োগ যোগ্যতা স্নাতক বা সমমান নির্ধারণ করা হয়েছে।

নতুন জারি করা 'প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগবিধি-২০১৯'-এ প্রধান শিক্ষক পদে ৩৫ ভাগ সরাসরি নিয়োগের কথা বলা হয়েছে, যাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা চাওয়া হয়েছে শুধু স্নাতক বা সমমান। কিন্তু সহকারী শিক্ষকদের মধ্য থেকে ৬৫ ভাগ পদোন্নতির ক্ষেত্রে নিয়োগ যোগ্যতা চাওয়া হয়েছে স্নাতক সমমান এবং সহকারী শিক্ষক পদে কমপক্ষে সাত বছরের অভিজ্ঞতা ও ডিপিএড বা বিএড ডিগ্রি। এতে প্রধান শিক্ষক পদে সরাসরি নিয়োগপ্রাপ্ত ও পদোন্নতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়াদের মধ্যে চরম বৈষম্য তৈরি হয়েছে।

জানা গেছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরেই বেতন-বৈষম্য নিরসনসহ প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতি দাবি করে আসছেন। বেতন-বৈষম্য নিরসনের দাবির পাশপাশি তাদের দাবি সহকারী শিক্ষক পদকে এন্ট্রি পদ ধরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পর্যন্ত শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি। ৪ এপ্রিল জারি করা নিয়োগবিধির গেজেট হওয়ার পর তারা বিভিন্ন দাবির সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষার আওতাধীন সব উচ্চতর পদে শতভাগ পদোন্নতির দাবি জানিয়ে গত ২০ মে থেকে ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেন। এ আন্দোলনের ডাক দেওয়ার পর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সচিব ও ডিজিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আন্দোলনরত শিক্ষক সংগঠনগুলোর ১৯ জন প্রতিনিধির সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে গত ১৩ মে এক রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন। সেখানেই শিক্ষকদের শতভাগ পদোন্নতির আশ্বাস দেওয়া হয়।

ওই সভায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি শামছুদ্দিন মাসুদ বলেন, 'শতভাগ পদোন্নতি নিয়ে শিক্ষকদের যুক্তি হলো, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক ২৫/৩০ বছর চাকরি করার পর প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পান। পদোন্নতি না দিলে বেশিরভাগ শিক্ষককেই অবসরে চলে যেতে হবে। আজীবন সহকারী শিক্ষক হিসেবে একই পদে চাকরি করা মানসিক যন্ত্রণার। তা ছাড়া প্রধান শিক্ষক পদটি প্রশাসনিক পদ হওয়ায় এখানে অভিজ্ঞতার অবশ্যই প্রয়োজন আছে। অনভিজ্ঞ কেউ এসে ২৫/৩০ বছরের সিনিয়র সহকারী শিক্ষকের সঙ্গে কাজ করতে স্বস্তি বোধ করবেন না।'

তিনি বলেন, সহকারী শিক্ষক হতে অন্য সব পদে শতভাগ পদোন্নতিতে সবচেয়ে বড় বাধা নিয়োগবিধি-১৯৮৫। সেখানে প্রধান শিক্ষক হতে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার পদে পদোন্নতির বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা না থাকায় প্রধান শিক্ষক পদটি ব্লক পোস্টে পরিণত হয়েছে।

সাধারণ শিক্ষকরা মনে করেন, বেতন-বৈষম্য নিরসনসহ শতভাগ পদোন্নতির ব্যবস্থা থাকলে প্রাথমিক শিক্ষায় সহকারী শিক্ষক পদে মেধাবীরাই আসবেন। মেধাবীদের ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে এই ডিপার্টমেন্টের যে অপবাদ রয়েছে, তা কিছুটা হলেও ঘুচবে। গুণগত মান বাড়বে প্রাথমিক শিক্ষার।


 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0048339366912842