প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ : শারীরিক যোগ্যতার সনদ দেওয়ায় অনিয়ম

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি |

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের জন্য শারীরিক যোগ্যতার সনদ (ফিটনেস সার্টিফিকেট) দেওয়ার ক্ষেত্রে চট্টগ্রামে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগের সত্যতা স্বীকারও করেছেন চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন। এ বিষয়ে ইতিমধ্যে তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের শনাক্তেরও আবেদন জানিয়েছেন তিনি।

গত ১৭ ডিসেম্বর রাতে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের অসাধু কর্মচারী ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মচারীদের যোগসাজশে স্বাস্থ্য পরীক্ষার সনদ দেওয়া হচ্ছিল এমন সংবাদ জানার পর সিভিল সার্জন এই উদ্যোগ নেন।

এ বিষয়ে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী বলেন, ‘ম্যাক্স ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কিছু কর্মচারী এই চক্রের সঙ্গে জড়িত। এতে আমার অফিসেরও যদি কেউ জড়িত থাকে, তাহলে তাদেরও শনাক্ত করে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে জানিয়েছি। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটিও গঠিত হয়েছে।’

অভিযুক্ত ম্যাক্স হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লোকজন সিভিল সার্জন দপ্তরে রাতের বেলায় আসেন। কেন আসবে? আর এলে রাতেই বা কেন? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, সিভিল সার্জন দপ্তরের কর্মচারী ও ম্যাক্স হাসপাতালের ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কয়েক কর্মচারী যোগসাজশ করে টাকা নেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে চূড়ান্ত প্রার্থীদের কাছ থেকে। টাকার বিনিময়ে তাদের রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছিল। গত ১৭ ডিসেম্বর রাতে এই কার্যক্রম চলার সময় তারা ধরা পড়ে যায়।

এ বিষয়ে কথা হয় ম্যাক্স হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. লিয়াকত আলীর সঙ্গে। তিনি গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘এ ধরনের একটি ঘটনা ঘটেছে। তবে এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়। আমাদের দুজন কর্মীকে বলা হয়েছিল নমুনা সংগ্রহ করতে সিভিল সার্জন দপ্তরে যাওয়ার জন্য। কিন্তু রাতে ওখানে যাওয়া ঠিক হয়নি, আর ওখানে যাওয়ার দরকারও নেই।’ তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী প্রার্থীরা যেকোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা করে সিভিল সার্জন দপ্তরে রিপোর্ট জমা দেবেন।

ডা. লিয়াকত আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় জেলা প্রশাসনকে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার বিষয়টি আমরা জেনেছি। আমি জেলা প্রশাসনকে প্রকৃত বিষয়টি জানিয়েছি।’

জানা গেছে, গত ১৭ ডিসেম্বর রাত ৯টার দিকে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জনের কনফারেন্স হলে ৬০ থেকে ৭০ জন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকের শারীরিক (ফিটনেস) পরীক্ষার নমুনা নিচ্ছিলেন অভিযুক্তরা। পরে তা সিভিল সার্জন জানতে পেরে বন্ধ করে দেন। আর এতেই টনকনড়ে প্রশাসনের।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, সরকারি প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক পদে চট্টগ্রামের ১ হাজার ২০২ জন মনোনীত হয়েছেন। এখন তারা শারীরিক যোগ্যতা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই কেবল চাকরিতে যোগদান করতে পারবেন। আগামী ৩ জানুয়ারির মধ্যে এই সনদ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার দপ্তরে জমা দিতে হবে।

এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘যাদের ফিটনেস রিপোর্ট পজিটিভ আসবে আমরা তাদের নিয়োগপত্র দেব। আর এই রিপোর্ট দেবে সিভিল সার্জন দপ্তর।’

শারীরিক যোগ্যতার ক্ষেত্রে কী কী পরীক্ষা করা হয় কিংবা এর নিয়ম কী জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী বলেন, ‘সরকারি বিধি অনুযায়ী যেসব পরীক্ষা করতে হয়, সেগুলো যেকোনো সরকারি বা প্রাইভেট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে করে রিপোর্ট আমাদের কাছে জমা দেবে। সেই রিপোর্টের আলোকে সিভিল সার্জন দপ্তর ফিটনেস রিপোর্ট দেবে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে - dainik shiksha চলতি মাসে টানা ৪ দিনের ছুটি মিলবে যেভাবে সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ - dainik shiksha সিইসিসহ পাঁচ কমিশনারের পদত্যাগ রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন - dainik shiksha রাষ্ট্রপতি যেকোনো সময় পদত্যাগ করতে পারেন বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? - dainik shiksha বাতিল কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা আরও একবছর ভুগবেন কেন? ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে - dainik shiksha ডিআইএতে টাকার খেলা, অভিযুক্তরাই স্কুল অডিটে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে - dainik shiksha সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই নতুন অ্যাডহক কমিটি হবে প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি - dainik shiksha প্রাথমিকে স্বতন্ত্র ক্যাডার সার্ভিস চালুর দাবি দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0050342082977295