প্রাথমিক শিক্ষা ও শিক্ষক

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

এগিয়ে চলা প্রাথমিক শিক্ষার মৌল চেতনা বাংলাদেশের মহান সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদ। শিশুর শিক্ষার অধিকারও সম্প্রসারিত সুযোগকে বিকশিত করার চেতনা স্পষ্টত আমাদের জাতীয় ঐতিহ্য আর জাতিগত অগ্রসরতার প্রতিফলন।

স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশে মহান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষা বিষয়ের স্বপ্ন চেতনা, তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্পষ্ট কর্মপ্রেরণা আর কর্ম-পরিকল্পনার উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় স্পষ্টত প্রতিভাত।শুক্রবার (৩০ আগস্ট) দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন অহীন্দ্র কুমার মণ্ডল

দেশে আজ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৬৮৩৭৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতি বছর প্রাথমিক শিক্ষা স্তরের শুরুতে শিক্ষার্থী ভর্তি হচ্ছে। এই ভর্তির হার এখন ৯৮ শতাংশ (প্রায়) (বালক ৯৭.২ শতাংশ, বালিকা ৯৮.৭ শতাংশ )। যা শতভাগ বললেও অত্ত্যুক্তি হবে না। প্রাথমিক পর্বেও শিখন স্তরে অধ্যয়নরত আছে সব মিলিয়ে ১,৮৬,০২,৯৮৮ জন শিক্ষার্থী। যেখানে ২০১৮ সালে প্রাথমিক পর্যায়ে শিক্ষাচক্র সমাপনী হার বেড়ে ৮১.৪ শতাংশ ভাগ, ঝরে পড়ার হার হ্রাস পেয়ে ১৮.০৬ শতাংশ  এবং সমাপনী পর্যায়ে পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৯৭.৫৯ শতাংশ। শিশুর শিক্ষালাভ সহজতর করতে মেধা, মনন আর জ্ঞান বিকাশে প্রতিটি বিদ্যালয়ের অবকাঠামো হয়েছে উন্নততর। শিক্ষার্থীর শারীরিক, মানসিক, অধ্যাত্মিক, নৈতিক, নান্দনিক বিকাশে নেয়া হয়েছে ব্যাপক পদক্ষেপ। শ্রেণিকক্ষ, ওয়াশব্লক, সুপেয় পানি, বিদ্যুতায়ন, মাল্টিমিডিয়াসহ আধুনিক ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়ায় শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বিকাশের পদক্ষেপগুলো শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। তাদের জন্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক চর্চার উন্নয়নে শুরু হয়েছে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। নেয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ।

সার্বিক প্রক্রিয়ায় ঝরে পড়ার হার কমে গিয়ে শিক্ষার্থীর শিক্ষাচক্র সমাপনে বিষয়সমূহ ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। যারা এই কোমলমতি শিশুদের শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ায় সরাসরি সম্পৃক্ত; সেই সমস্ত শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকম-লীর অক্লান্ত ও নিরলস পরিশ্রমে একেকটি বিদ্যালয় হয়ে উঠছে ‘শিশুবান্ধব’ শিখন পরিবেশের নিয়ামক। বিদ্যালয় থেকে শ্রেণিপাঠ, শ্রেণিকক্ষ থেকে শিক্ষার্থী, শিক্ষার্থী থেকে অভিভাবক কিংবা অভিভাবক থেকে শিক্ষাপ্রশাসন; সবার সঙ্গেই তারা নিয়ত স্বীয় মহিমায় বিরাজ করেন কর্মদক্ষতা আর জ্ঞান প্রদীপের আলো বিতরণের আলোকবর্তিকা রূপে।

ফলত বিদ্যালয়গুলো হয়ে ওঠে আকর্ষণীয়, পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যকর আর শিখনবান্ধব।

জাতির ভবিষ্যৎ এবং শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বিকাশে-সুপ্ত চেতনার স্বপ্ন বাস্তবায়নে তারা হয়ে ওঠেন মহান পথপ্রদর্শক।

শিশুদের চেতনা এবং নৈতিকতা বিকাশে তাদের অক্লান্ত কর্মযজ্ঞে শিক্ষার্থী শিশু স্বচ্ছন্দে তার অবস্থান করে নিতে প্রয়াস পায়।

শিশুর মনোদৈহিক বিকাশ কিংবা পাঠচক্রের অগ্রগামিতায় এখন পর্যন্ত শিক্ষকের বিকল্প কেবল শিক্ষকই। বলা হয়ে থাকে একজন দক্ষ শিক্ষার্থী তৈরিতে একজন দক্ষ শিক্ষকের বিকল্প কিছু নেই। অন্য কথায়; একজন দক্ষ শিক্ষকের বিকল্প হতে পারে শুধু আরেকজন দক্ষ শিক্ষক।

আজকের বিশ্ব Global village এররূপ-পরিগ্রহ শেষে বিশ্বায়নের যাত্রাপথে SDG বা Sustainable Development Goals এর লক্ষ্য পূরণে অঙ্গীকারাবদ্ধ। শিক্ষাক্ষেত্রে SDG-4 এর বাস্তবায়নে আমাদের দেশও পিছিয়ে থাকতে পারে না।

আগামী বিশ্ব স্বপ্ন দেখছে Industrial Revolution 4.0 বা ৪র্থ শিল্প বিপ্লব বাস্তবায়নের। CPS ev Cyber Physical System-এ প্রযুক্তিগত আর উদ্ভাবনী ক্ষেত্র এই অগ্রযাত্রার স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রধান নিয়ামক। এর সঙ্গে আমাদের তাল না মিলিয়ে চলা হবে পিছিয়ে পড়ারই নামান্তর মাত্র। মেধাসম্পন্ন জাতি গঠনে যথাযথ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে শিক্ষক এক্ষেত্রে মুখ্য সূত্রধর।

জাতিগতভাবে উন্নয়ন সাধন এবং আগামী বিশে^র সঙ্গে পথ চলায় মানসম্মত শিক্ষা আমাদের প্রধান হাতিয়ার। প্রযুক্তিগত জ্ঞান এবং ধ্যান-ধারণাগত উন্নয়ন এ প্রক্রিয়ায় মৌল চেতনা বলে প্রতীয়মান হয়।

প্রাথমিক শিক্ষা শিক্ষার মূলভিত্তি। শুরুটা এখান থেকে করাটাই বাঞ্চনীয় বলেই বর্তমান সরকার শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে বিশেষ গুরুত্বারোপ করে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।

তবে বিদগ্ধজনের অনেকেই মনে করছেন প্রাথমিক শিক্ষায় বস্তুগত (Logistic) সহায়তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে গুণগত (Qualitative) মান অর্জনের ফারাকটা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। বস্তুগত বা ভৌত সুবিধাদীর পাশাপাশি শিখন- শেখানো প্রক্রিয়ার মেধাগত বা Software এর উন্নয়ন অনেকখানি এগিয়ে নেয়ার অবকাশ রাখছে। এক্ষেত্রে প্রচলিত পাঠ্যক্রম থেকে শুরু করে পাঠের বিষয় কিংবা স্বাভাবিক পঠন-পাঠন প্রক্রিয়ার পরিবর্তন-পরিবর্ধন ও পরিমার্জন অবশ্য প্রয়োজনীয় একটি বিষয় বলে প্রতীয়মান হয়েছে।

শিখন প্রক্রিয়ার মৌলধারক-বাহক ও সঞ্চালকের ভূমিকায় সমস্ত শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক নিরলস কর্মচাঞ্চল্য দিয়ে, তাদের মেধা দক্ষতা, যোগ্যতার মাধ্যমে শিশুর-শিখন কর্মকা- নির্ধারণ ও নিশ্চিত করার প্রয়াস পান। পরিবর্তনের প্রাথমিক সূচনা সেখানেই স্পষ্ট করতে হবে। উন্নত জাতি তৈরির এই মহান কারিগররা শিক্ষা প্রক্রিয়ায় যুক্ত অংশীজনদের অধিকতর আন্তরিকতার সেতুবন্ধনে সম্পৃক্ত করবেন।

এটি শুরু করতে হবে সৃজনশীল চিন্তাধারায় উন্নত স্বপ্ন দর্শনের ভিত্তিপর্বে। শিশুদের সামাজিকীকরণ এবং ভাবোদ্দীপক শিখনের ক্ষেত্রে এ ধরনের সহায়তামূলক কর্মকা- শিক্ষক গুণাবলীর একান্ত অপরিহার্য নিয়ামক বলে প্রতিভাত হয়েছে। শিক্ষার্থীর সৃজনশীল চিন্তাধারার সঙ্গে সামাজিক আর ভাবোদ্দীপক শিখনে মূলসূত্রধর হলেন কেবলমাত্র শিক্ষক। সামাজিক ও আবেগীয় শিখনে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মাঝে সৃজনশীল চিন্তাধারার বহিঃপ্রকাশ তাদের আন্তঃসম্পর্কের ক্ষেত্রে উন্নততর সংযোগ স্থাপন করবে; যা কালের পরিক্রমায় শিখন-শেখানো ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সংস্থান রূপে বিবেচিত হতে পারে।

এক্ষেত্রে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ের জন্যই আকাক্সক্ষা (Aspiration) স্বয়ংক্রিয়তা (Automation) এবং উচ্চাশা (Ambition) গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক বলে পরিগণিত হয়।

প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষকগণের মাঝে বিষয়গুলোর অবতারণা, প্রশিক্ষণ কৌশল-তাদের শিখন-শেখানো প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ আবহ তৈরি করে থাকে। শিক্ষক নিজেই এখানে শিশু শিক্ষার্থীর জন্য স্বপ্নদ্রষ্টা; বন্ধু-দার্শনিক ও পথপ্রদর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। ফলত শিক্ষার্থীরা কখনই শিখন প্রক্রিয়ার বাইরে থেকে শিখন দূরত্বে অবস্থান করতে পারে না।

অংশীদারিত্বের মধ্য দিয়ে বিদ্যালয়ের পরিবেশ উন্নততর করা হলে; শিক্ষক নিজেই শিক্ষার্থীর শিখন অভিভাবকের স্থান দখলে নিতে প্রয়াস পান। আকর্ষণীয় বিদ্যালয় পরিবেশে শিশুর মানসম্মত শিখন নিশ্চিত করতে পারলে শিক্ষার্থী আনন্দের সঙ্গে তার শিক্ষা অর্জনে সক্রিয় হয়।

শিক্ষকের স্বপ্ন-দর্শন তখন শিক্ষার্থীর মাঝে সঞ্চারিত হয়। শিশু শিক্ষার্থী তার মনের অগোচরে শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষককে অনুকরণীয় আদর্শ মানব হিসেবে স্থান দিয়ে ভবিষ্যতের মানুষ হিসেবে নিজেকে তৈরি করার প্রয়াস পায়। তাই এক সময়ের প্রাথমিক শিক্ষকই হয়ে ওঠেন পরবর্তীতে ওই শিশু শিক্ষার্থীর স্বপ্ন গন্তব্যের দিশারী।

অহীন্দ্র কুমার মণ্ডল : জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, নারায়ণগঞ্জ


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027070045471191