ভুয়া মাদরাসার নামে জমি দখলপ্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ

দৈনিক শিক্ষাডটকম, বরিশাল |

বরিশাল নগরী থেকে প্রায় ২৭ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমের প্রত্যন্ত গ্রাম খন্তাখালী। স্থানীয় বন্দর থানাধীন চাঁদপুরা ইউনিয়নের নৈমিত্র নামক এলাকায় গ্রামটির অবস্থান। এখানেই এক চালা টিনের ঘরের ৪টি কক্ষ নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে দক্ষিণ খন্তাখালী স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসা। অভিযোগ উঠেছে স্থানীয়দের জমি দখল করে আটকে রাখতে স্থাপিত হয় প্রতিষ্ঠানটি। মাদরাসার প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে জাল-জালিয়াতি করে সরকারি অর্থ লোপাটের। তবে সকাল অভিযোগকে বিরোধীদের ষড়যন্ত্র বলে দাবি এই শিক্ষকের। 

গত রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, মাদরাসাটির সবকটি কক্ষেই ঝুলছে তালা। সামনের মাঠে বড় বড় ঘাস আর কচুগাছ জানান দিচ্ছে দীর্ঘদিন সেখানে কারো আনাগোনা হয়নি। তবে মাদরাসার কাঠের দরজার ফাঁক দিয়ে ভেতর একটু দেখার চেষ্টা করে চক্ষু চড়কগাছ হবার জোগাড়। কাগজে কলমে প্রতিষ্ঠানটিতে ৫ জন শিক্ষক ও ১৩২ জন শিক্ষার্থীর নিয়মিত পাঠদান কার্যক্রম থাকলেও ভেতরের সব আসবাবপত্রে জমে আছে পুরনো ধুলো। শেষ কবে সেগুলো শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করেছেন তা বুঝে ওঠা কঠিন।

স্থানীয় সূত্র বলছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে কখনো পাঠদান কার্যক্রম দেখা যায়নি। ৪৮ শতাংশ জায়গায় নির্মিত মাদ্রাসার মধ্যে ২০ শতাংশ স্থানীয়দের কাছ থেকে জোরপূর্বক নেয়া হয়েছে। যা নিয়ে আদালতে মামলা চলমান রয়েছে। শিক্ষার্থী না থাকলেও নিয়মিত আসছে সরকারি অনুদান ও বই-পুস্তক। আগে আসতো উপবৃত্তির টাকাও, যা মাদরাসা কর্তৃপক্ষ এবং প্রিন্সিপাল নিজেরা লোপাট করেন বলে অভিযোগ আছে।

এই মাদরাসাসহ আশেপাশের আরো ৫টি নাম সর্বস্ব মাদরাসা খুলে বাণিজ্য করছে মো. শাহজালাল হাওলাদার। অন্য মাদরাসাগুলো হলো দক্ষিণ কড়াপুর মাদরাসা, হযরত মাও. কেরামত আলী (রহ.) মাদরাসা, দিনার আল কুরআনিয়া মাদরাসা, কড়াপুর মাদরাসা ও আঞ্জুমান আরা বেগম মাদরাসা। এসব মাদরাসায় ভুয়া সরকারি কোড ও জাল পাঠদান স্বীকৃতিপত্র ব্যবহারের মাধ্যমে কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ উঠেছে শাহজালাল হাওলাদারের বিরুদ্ধে। স্থানীয় জেলা প্রশাসনের কাছে দেয়া অভিযোগে এক ভুক্তভোগী এসব মাদরাসার শিক্ষক নিয়োগের নামে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগও করেন।

এদিকে মাদরাসা অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ইবতেদায়ি মাদরাসাগুলোতে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান হয়ে থাকে। নিবন্ধিত মাদরাসাগুলোতে এককালীন অনুদানসহ প্রধান শিক্ষককে ৩ হাজার ৫০০ এবং অন্যান্য শিক্ষকদের ৩ হাজার ৩০০ টাকা ভাতা দেয় সরকার। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য প্রেরণ করা হয় প্রয়োজনীয় সব বই ও অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের তালিকা অনুযায়ী করা হয় উপবৃত্তির ব্যবস্থা।

খন্তাখালী গ্রামের বাসিন্দা নয়ন হাওলাদার জানান, একসময় পুরো জমি বিক্রি করে দেয়া হবে এই উদ্দেশে জোরপূর্বক জমি দখল করে মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। কোনো শিক্ষক-শিক্ষার্থী না থাকলেও প্রধান শিক্ষক সরকারি অনুদান-উপবৃত্তি লোপাট করেন। স্থানীয় বিত্তশালীদের কাছ থেকেও একাধিক মাদরাসার কথা বলে সংগ্রহ করেন বিপুল পরিমাণ টাকা।

আরেক বাসিন্দা ইয়াসিন মুন্সি বলেন, মাদ্রাসা ঠিকমতো চললে এলাকার গরিব বাচ্চারা লেখাপড়ার সুযোগ পেতো। কিন্তু সেটা না করে নানারকম বিতর্ক সৃষ্টি করছে মাদরাসার প্রিন্সিপালসহ অন্যান্যরা। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া।

তবে সকল অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে দক্ষিণ খন্তাখালী স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদরাসার প্রিন্সিপাল মো. শাহজালাল হাওলাদারের দৈনিক শিক্ষা ডটকম ও দৈসিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমি শুধুমাত্র এই মাদরাসার শিক্ষক এবং আমার স্ত্রী পার্শ্ববর্তী চড়কাউয়া ইউনিয়নের আঞ্জুমান আরা বেগম মাদরাসার শিক্ষক৷ এ ছাড়া অন্য কোনো মাদরামার সঙ্গে আমি জড়িত নই৷ তাই অন্য কোনো অনিয়মের সঙ্গে আমার জড়িত থাকার প্রশ্নই আসে না।

এসব অনিয়মের ব্যাপারে মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক নাদিয়া মাহমুদ দৈনিক শিক্ষাডটকম ও দৈনিক আমোদের বার্তাকে বলেন, ইবতেদায়ি মাদরাসার জন্য সরকার নির্ধারিত নীতিমালা এবং জনবল কাঠামো রয়েছে। কেউ যদি এসবের তোয়াক্কা না করে বিতর্কিত কার্যক্রম চালান তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। 
বরিশালের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) উপমা ফারিসা বলেন, জেলার কোনো মাদরাসা যদি অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকে তবে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
এইচএসসির ফল প্রকাশের তারিখ - dainik shiksha এইচএসসির ফল প্রকাশের তারিখ বাউবির এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল, সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে ফল - dainik shiksha বাউবির এইচএসসি পরীক্ষা বাতিল, সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ে ফল সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা নির্ধারণে কমিটি - dainik shiksha সরকারি চাকরিতে আবেদনের বয়সসীমা নির্ধারণে কমিটি এনসিটিবি কার্যালয় ঘেরাওয়ে আলেমদের হুঁশিয়ারি - dainik shiksha এনসিটিবি কার্যালয় ঘেরাওয়ে আলেমদের হুঁশিয়ারি সড়ক সংস্কারের দাবিতে মুগদায় আন্দোলনে স্কুল শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha সড়ক সংস্কারের দাবিতে মুগদায় আন্দোলনে স্কুল শিক্ষার্থীরা সড়ক সংস্কারের দাবিতে মুগদায় আন্দোলনে স্কুল শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha সড়ক সংস্কারের দাবিতে মুগদায় আন্দোলনে স্কুল শিক্ষার্থীরা মৌলবাদের সঙ্গে সরকারের আপসকামিতা উদ্বেগজনক দৃষ্টান্ত: টিআইবি - dainik shiksha মৌলবাদের সঙ্গে সরকারের আপসকামিতা উদ্বেগজনক দৃষ্টান্ত: টিআইবি এনটিআরসিএ সনদ যাচাইয়ে নতুন পদ্ধতি - dainik shiksha এনটিআরসিএ সনদ যাচাইয়ে নতুন পদ্ধতি প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নে কমিটি গঠন - dainik shiksha প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মানোন্নয়নে কমিটি গঠন প্রত্যাহার হচ্ছে সাইবার আইনের ৫ হাজার ৮১৮ মামলা, মুক্তি পাচ্ছেন গ্রেফতারকৃতরা - dainik shiksha প্রত্যাহার হচ্ছে সাইবার আইনের ৫ হাজার ৮১৮ মামলা, মুক্তি পাচ্ছেন গ্রেফতারকৃতরা পাঠ্যবই সংশোধনের অনানুষ্ঠানিক আলোচনাই ভুলবশত প্রজ্ঞাপন হয়ে যায় : শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha পাঠ্যবই সংশোধনের অনানুষ্ঠানিক আলোচনাই ভুলবশত প্রজ্ঞাপন হয়ে যায় : শিক্ষা উপদেষ্টা একাদশে রেজিস্ট্রেশনের সময় বাড়লো - dainik shiksha একাদশে রেজিস্ট্রেশনের সময় বাড়লো অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিতের ফল অক্টোবরের প্রথমার্ধে - dainik shiksha অষ্টাদশ শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিতের ফল অক্টোবরের প্রথমার্ধে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0058720111846924