প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এর জন্মদিন আজ

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক |

দৈনিক শিক্ষাডটকম ডেস্ক: ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে আত্মাহুতি দানকারী বিপ্লবী প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার এর জন্মদিন আজ। তিনি জাতীয়তাবাদী বিপ্লবী ছিলেন, যিনি ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে প্রভাবশালী ছিলেন। চট্টগ্রাম ও ঢাকায় পড়াশোনা শেষ করে, তিনি কলকাতার বেথুন কলেজে ভর্তি হন। তিনি দূরশিক্ষার সঙ্গে দর্শনে স্নাতক হন, এবং পরবর্তীতে একজন স্কুল শিক্ষকা হন। তিনি ‘বাংলার প্রথম নারী শহীদ’ হিসেবে প্রশংসিত হয়েছেন।

প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ১৯১১ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে চট্টগ্রামের বর্তমান পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।তার পিতা ছিলেন মিউনিসিপ্যাল অফিসের হেড কেরানী জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার এবং মাতা প্রতিভাদেবী। তাদের পরিবারের আদি পদবি ছিলো দাশগুপ্ত। পরিবারের কোন এক পূর্বপুরুষ নবাবী আমলে ‘ওয়াহেদেদার’ উপাধি পেয়েছিলেন, এই ওয়াহেদেদার থেকে ওয়াদ্দেদার বা ওয়াদ্দার। শৈশবে পিতার মৃত্যুর পর জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার তার পৈতৃক বাড়ি ডেঙ্গাপাড়া সপরিবারে ত্যাগ করেন। তিনি পটিয়া থানার ধলঘাট গ্রামে মামার বাড়িতে বড় হয়েছেন। এই বাড়িতেই প্রীতিলতার জন্ম হয়। পরবর্তীকালে চট্টগ্রাম শহরের আসকার খানের দীঘির দক্ষিণ-পশ্চিম পাড়ে টিনের ছাউনি দেয়া মাটির একটা দোতলা বাড়িতে স্থায়ীভাবে থাকতেন ওয়াদ্দেদার পরিবার। অন্তর্মুখী, লাজুক এবং মুখচোরা স্বভাবের প্রীতিলতা ছেলেবেলায় ঘর ঝাঁট দেয়া, বাসন মাজা ইত্যাদি কাজে মা-কে সাহায্য করতেন।

ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা বিদ্যালয় ছিলো প্রীতিলতার প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি এই স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন। প্রতি ক্লাসে ভালো ফলাফলের জন্য তিনি সব শিক্ষকের খুব প্রিয় ছিলেন। সেই শিক্ষকের একজন ছিলেন ইতিহাসের ঊষাদি। তিনি প্রীতিলতাকে পুরুষের বেশে ঝাঁসীর রানী লক্ষীবাই এর ইংরেজ সৈন্যদের সাথে লড়াইয়ের ইতিহাস বলতেন। স্কুলে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন ছিলেন কল্পনা দত্ত (পরবর্তীকালে বিপ্লবী)। এক ক্লাসের বড় প্রীতিলতা কল্পনার সঙ্গে ব্যাডমিন্টন খেলতেন। স্কুলে আর্টস এবং সাহিত্য প্রীতিলতার প্রিয় বিষয় ছিলো। ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি সংস্কৃত কলাপ পরীক্ষায় বৃত্তি লাভ করেন। ১৯২৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি কয়েকটি বিষয়ে লেটার মার্কস পেয়ে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। অঙ্কের নম্বর খারাপ ছিলো বলে তিনি বৃত্তি পাননি। ম্যাট্রিক পরীক্ষার পর বন্ধের সময় তিনি নাটক লিখেন এবং মেয়েরা সবাই মিলে সে নাটক চৌকি দিয়ে তৈরী মঞ্চে পরিবেশন করেন।

পরীক্ষার ফলাফল দেয়ার সময়টাতে তার বাড়িতে এক বিয়ের প্রস্তাব আসে। কিন্তু প্রীতিলতার প্রবল আপত্তির কারণে বিয়ের ব্যবস্থা তখনকার মতো স্থগিত হয়ে যায়। আইএ পড়ার জন্য তিনি ঢাকার ইডেন কলেজে ভর্তি হন। এ কলেজ়ের ছাত্রী নিবাসের মাসিক থাকা খাওয়ার খরচ ছিলো ১০ টাকা এবং এর মধ্যে কলেজের বেতনও হয়ে যেতো। এ কারণেই অল্প বেতনের চাকুরে জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার মেয়েকে আইএ পড়তে ঢাকায় পাঠান। ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে আইএ পরীক্ষায় তিনি মেয়েদের মধ্যে প্রথম এবং সবার মধ্যে পঞ্চম স্থান লাভ করেন। এই ফলাফলের জন্য তিনি মাসিক ২০ টাকার বৃত্তি পান এবং কলকাতার বেথুন কলেজ়ে বি এ পড়তে যান।

বেথুন কলেজে মেয়েদের সঙ্গে তার আন্তরিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছিলো। বানারসী ঘোষ স্ট্রীটের হোস্টেলের ছাদে বসে প্রীতিলতার বাঁশি বাজানো উপভোগ করতো কলেজের মেয়েরা। প্রীতিলতার বিএ তে অন্যতম বিষয় ছিলো দর্শন। দর্শনের পরীক্ষায় তিনি ক্লাসে সবার চাইতে ভাল ফলাফল করতেন। এই বিষয়ে তিনি অনার্স করতে চেয়েছিলেন কিন্তু বিপ্লবের সঙ্গে যুক্ত হবার তীব্র আকাঙ্ক্ষার কারণে অনার্স পরীক্ষা তার আর দেয়া হয়নি। ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দে ডিসটিংশান নিয়ে তিনি বিএ পাস করেন। কিন্তু ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকায় কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতক পাস করলেও তিনি এবং তার সঙ্গী বীণা দাসগুপ্তর পরীক্ষার ফল স্থগিত রাখা হয়। অবশেষে তাদেরকে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দের ২২ মার্চ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে মরণোত্তর স্নাতক ডিগ্রি দেয়া হয়।

প্রীতিলতা ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ সেপ্টেম্বর  চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাবে সশস্ত্র আক্রমণে ১৫ জনের একটি বিপ্লবী দলের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য পরিচিত। এই সময়ে একজন নিহত ও ১১ জন আহত হন। বিপ্লবীরা ক্লাবে অগ্নিসংযোগ করেন এবং পরে ঔপনিবেশিক পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। গ্রেফতার এড়াতে প্রীতিলতা সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সরকারি চাকরি থেকে ২০ শিক্ষককে অব্যাহতি - dainik shiksha সরকারি চাকরি থেকে ২০ শিক্ষককে অব্যাহতি ইউজিসি চেয়ারম্যানের অতিরিক্ত দায়িত্বে বহাল থাকছেন অধ্যাপক আলমগীর - dainik shiksha ইউজিসি চেয়ারম্যানের অতিরিক্ত দায়িত্বে বহাল থাকছেন অধ্যাপক আলমগীর চার তারিখের মধ্যে মাদরাসা শিক্ষকদের এমপিওর আবেদন - dainik shiksha চার তারিখের মধ্যে মাদরাসা শিক্ষকদের এমপিওর আবেদন ত্রাণ দিতে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনা, আহত ১২ চবি শিক্ষার্থী - dainik shiksha ত্রাণ দিতে যাওয়ার পথে দুর্ঘটনা, আহত ১২ চবি শিক্ষার্থী ব্যাংকের অনিয়ম তদন্তে কমিশন গঠন হচ্ছে - dainik shiksha ব্যাংকের অনিয়ম তদন্তে কমিশন গঠন হচ্ছে শীট মেশিন সম্বলিত প্রতিষ্ঠানের জন্য পুনরায় দরপত্র দাবি - dainik shiksha শীট মেশিন সম্বলিত প্রতিষ্ঠানের জন্য পুনরায় দরপত্র দাবি কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033361911773682