বিদ্যাশিক্ষা বলতে গুটিকয়েক অক্ষরজ্ঞান আর পুঁথি আওড়ানোকে বোঝায় না। বরং বিদ্যাশিক্ষা হল- যা জীবনকে সুন্দর-সুশৃঙ্খল ও আনন্দক্ষম প্রজ্ঞা দ্বারা উপভোগ করতে শেখায়, যা মানুষের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করে একজনকে মার্জিত রুচিশীল ব্যক্তিতে পরিণত করে; যা মানুষের মধ্যে আত্মজ্ঞান, স্বজাতিজ্ঞান, স্বাজাত্যবোধ জাগ্রত করে এবং যা মানুষকে শৃঙ্খলামুক্ত ও সংস্কারমুক্ত হয়ে স্বাধীনচেতা ব্যক্তিতে পরিণত করে, তাকে বোঝায়। মানুষের সুকুমার প্রবৃত্তিকে জাগ্রত করা, মানুষের মধ্যে হিতাহিত জ্ঞান, ন্যায়-অন্যায় বোধ সৃষ্টি করা এবং মানুষকে একজন মানবিক মানুষ হিসেবে তৈরি করাই শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য। রোববার (২৪ নভেম্বর) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
কিন্তু আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এবং শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত সমূহ মানসচেতনতা আজ কোন দিকে ধাবিত হচ্ছে? নীতি-নৈতিকতা, মূল্যবোধ, সুকুমার প্রবৃত্তির উৎকর্ষ সাধন- সর্বোপরি মানবিক মানুষ হওয়ার পরিবর্তে আমরা আজ পরীক্ষাকেন্দ্রিক ফল লাভের জন্য অতি মাত্রায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েছি।
গুরুদেব বললেন, বিদ্যাশিক্ষা অর্জন কর, জ্ঞানচর্চা কর, মানবিক মূল্যবোধ আর সুকুমার প্রবৃত্তির উৎকর্ষ সাধন কর- ফলে জাগতিক জীবনে উৎকর্ষ ফল লাভ করবে। কিন্তু আমরা অধম জাতি গুরুর সব উপদেশ জলাঞ্জলি দিয়ে শুধু ফলটাকেই গুরুত্ব দিয়ে বসলাম। ফলে আমাদের বিদ্যাশিক্ষার প্রকৃত ফল গোসা হয়ে যোজন যোজন দূরে পড়ে রইল। আর আমরা শিক্ষিত হতে লাগলাম; কিন্তু মানুষের মতো প্রকৃত মানুষ হতে পারলাম না। এজন্য সহপাঠীকে পিটিয়ে হত্যা করা, টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজি করা, ঘুষ খেয়ে, ঘুষ দিয়ে কার্যসিদ্ধির চেষ্টা করা, দুর্নীতি-প্রতারণা-প্রপঞ্চনা করে বিত্তবৈভবের মালিক হয়ে বিত্তবৈভবকে অহঙ্কারের সামগ্রীরূপে গণ্য করা, যে কোনো মূল্যে শুধু নিজে ভালো থাকার বাসনা তথা আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থপর আকাক্সক্ষা আজ আমাদের প্রধান মানস প্রবণতায় পরিণত হয়েছে।
কোনো উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কতগুলো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হয় এবং উদ্দেশ্য সম্পর্কে সজাগ থাকতে হয়। নচেৎ উদ্দেশ্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে আত্মঘাতী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আমাদের বিদ্যাশিক্ষা এবং শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে অনুরূপ মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। প্রতি বছর আমাদের দেশে প্রায় ছাব্বিশ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী জেএসসি পরীক্ষা, প্রায় একুশ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা এবং প্রায় তেরো লক্ষাধিক শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এ বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের সবাই কি বিদ্যাশিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে জ্ঞাত? নাকি তারা শুধু পরীক্ষায় পাস করে বা ভালো ফল তৈরি করে জীবন ও জীবিকার জন্য একটি ভালো কর্মসংস্থানের প্রত্যাশাকেই শিক্ষার একমাত্র লক্ষ্য বলে পরিগণিত করছে? যদি তাই হয়, তাহলে এখানে যথেষ্ট উদ্বেগের কারণ রয়েছে।
অপরাপর সৃষ্টির মতো মানুষ সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি হলেও তাকে কিছুটা নিজেকে নিজেই গড়ে নিতে হয়। অর্থাৎ মানুষের দৈহিক আকৃতি সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি হলেও তার মানসিক অবস্থাকে নিজে নিজেই তৈরি করে নিতে হয়। বিদ্যাশিক্ষার প্রধান কাজ হল মানুষের এ মানসিক চেতনাকে নতুন করে বিনির্মাণ করে তোলা। যে শিক্ষা মানুষের চেতনার জগতে রূপান্তর ঘটাতে পারে না, সেই শিক্ষা কখনই তার প্রকৃত উদ্দেশ্য সাধন করতে পারে না। বিদ্যাশিক্ষা মানুষের জীবন ও জীবিকা নির্বাহের সহায়ক হিসেবে কাজ করতে পারে; জীবনে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা এনে দিতে পারে- কিন্তু তার আসল কাজ হল মানুষের মানসিক চেতনার বিনির্মাণ করা। ছাত্র, শিক্ষক, অভিভাবক এবং শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত সবার শিক্ষার প্রধান লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে এ দিককে গুরুত্ব দিয়ে।
জীবন কখনই সরলরৈখিকভাবে চলে না। নানা ঘাত-প্রতিঘাত আর প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে চলাই মানব জীবনের প্রধান ধর্ম। আর এ প্রতিকূল অবস্থার মোকাবেলা করার জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন আত্মবিশ্বাস ও আত্মনির্ভরশীলতার চেতনা। কারণ পরনির্ভরশীলতা মানুষের সোজা হয়ে দাঁড়ানোর শক্তিকে প্রায় নিঃশেষিত করে ফেলে। তাই বিদ্যাশিক্ষার মধ্য দিয়েই শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও আত্মনির্ভরশীলতার বোধকে জাগ্রত করতে হবে। শিক্ষার্থীদের আত্মজ্ঞান সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। অর্থাৎ নিজের প্রয়োজন, অভ্যাস, পছন্দ-অপছন্দ, সুপ্ত বাসনা, লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ইত্যাদি সবকিছু সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে। শিক্ষার্থী নিজেকে যত বেশি জানতে পারবে, সে তত বেশি জীবনকে পরিবর্তন করতে পারবে।
নিজের চিন্তা-চেতনা এবং দেহ-মনের উৎকর্ষ সাধন করতে পারবে। অন্যদিকে একজন ব্যক্তির প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করার সক্ষমতা নির্ভর করে তার চারিত্রিক দৃঢ়তার ওপর। হাজারও প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করার জন্য একটি ইতিবাচক মনোবলই যথেষ্ট। তাই শিক্ষার্থীদের এ ইতিবাচক মনোবল তৈরির অনুশীলন করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ব্যর্থতা মানে জীবনে থেমে যাওয়া নয়, বরং ব্যর্থতার মধ্যেই সফলতার সিঁড়ি নিহিত রয়েছে। সফলতা তখনই আনন্দময় হয়ে ওঠে, যখন মানুষ ব্যর্থতার স্বাদ আস্বাদন করতে পারে। জীবনের যে কোনো পদক্ষেপে সফলতা বা ব্যর্থতা থাকতে পারে; কিন্তু মনে রাখতে হবে কঠোর পরিশ্রমের মধ্যেই সফলতার বীজ নিহিত রয়েছে। এটাই জীবন। শুধু পাস করা কিংবা ভালো ফল তৈরি করা নয়, বরং শিক্ষাজীবনে প্রতিটি পরীক্ষার শিক্ষাকে গ্রহণ করতে হবে এ কঠোর পরিশ্রম আর সফলতা-ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে জীবনকে কীভাবে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, তার দিকে লক্ষ্য রেখে।
একটি সামাজিক জীব হিসেবে সমাজের প্রতি ব্যক্তির কতগুলো দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। বিদ্যাশিক্ষার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার বোধকে জাগ্রত করতে হবে। শুধু আত্মচিন্তা আর স্বার্থপর আকাক্সক্ষা নিয়ে মশগুল থাকলে চলবে না। তাছাড়া বিশ্ব প্রকৃতির একটি অংশ হিসেবে প্রকৃতির প্রতিও মানুষের বিশেষ দায়বদ্ধতা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের প্রকৃতি জ্ঞান সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। প্রকৃতিকে ভালোবাসা এবং প্রকৃতির যত্ন নেয়ার শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে।
এরপরে আসা যাক নৈতিক মূল্যবোধের কথায়। বস্তুতপক্ষে নৈতিকতা ও মূল্যবোধের কারণে মানুষ প্রাণিত্বের বন্ধন ছিন্ন করে মানবসত্তায় উত্তীর্ণ হতে পেরেছে। আমাদের শিক্ষা পদ্ধতিতে এ নৈতিকতা ও মূল্যবোধের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ আমাদের সবার সব প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত বিফলে যাবে, যদি আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানবিক মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে না পারি। নৈতিকতা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভালো-মন্দের বোধ তৈরি করে দেয়। এটি তাদের মধ্যে সততা ও শৃঙ্খলা জ্ঞান তৈরি করে এবং বাস্তব জীবনে তা প্রয়োগ করতে শেখায়। নৈতিকতা শিক্ষার্থীর আচার-আচরণের ওপর প্রভাব ফেলে এবং জীবনের কঠিন সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। যদিও আমাদের পাঠ্য বইগুলোতে বিভিন্ন নৈতিক শিক্ষার সন্নিবেশ রয়েছে; কিন্তু সেগুলো পর্যাপ্ত নয়। কারণ নৈতিক শিক্ষা একটি আচরিত বিষয়। শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি অভ্যাসের মধ্য দিয়ে তা শিক্ষার্থীদের রপ্ত করতে হবে।
শিক্ষা মানুষের সুপ্ত প্রতিভাকে জাগ্রত করে। বিচার-বিশ্লেষণ, যুক্তিবাদী চিন্তাশীল ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। শিক্ষা গ্রহণের সময় শিক্ষার্থীদের এ যুক্তি, বুদ্ধি, বিচার-বিশ্লেষণের প্রতি সজাগ থাকতে হবে। মনে রাখতে হবে, মনের অসংখ্য প্রশ্নের যৌক্তিক উত্তর অন্বেষণ করাই শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য। তাই শিক্ষার্থীদের জগৎ, জীবন ও সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন করতে হবে। প্রশ্ন করার ধরন শিখতে হবে এবং যুক্তি, বুদ্ধি, বিচার-বিশ্লেষণ দ্বারা এর যৌক্তিক উত্তর অন্বেষণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে ভয় পেলে বা থেমে গেলে চলবে না। জ্ঞানী-চিন্তাশীলরা কখনই প্রশ্ন করতে গিয়ে থেমে যায় না। কারণ তারা জানে এটাই হল জ্ঞান অর্জন ও জ্ঞানচর্চার সর্বোত্তম উপায়।
এবার আসা যাক শিক্ষকদের কথায়। বলা হয়ে থাকে জ্ঞানরাজ্যে বিদ্যাদান সাপেক্ষ। বিদ্যাদান ও বিদ্যার্জন এমন একটি মানসিক প্রক্রিয়া যেখানে ছাত্র-শিক্ষকের মধ্যে এক ধরনের পারস্পরিক বোঝাপড়ার সম্পর্ক ক্রিয়াশীল থাকে। পাঠদানের ক্ষেত্রে শিক্ষকের ভূমিকাকে দার্শনিক সক্রেটিস ধাত্রীর সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, ধাত্রী যেমন গর্ভবতী মাকে সন্তান প্রসব করতে সহায়তা করে, ঠিক তেমনি একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীকে পঠন-পাঠনে সহায়তা করে। অর্থাৎ একজন শিক্ষার্থী নিজেই শিক্ষার্জন করবে, শিক্ষক সেই শিক্ষার্জনে তাকে সহায়তা করবে মাত্র।
এ ক্ষেত্রে শিক্ষক পাঠদানের পাশাপাশি তার কথাবার্তা, চালচলন, যুক্তিপূর্ণ বিচার-বিশ্লেষণ ও নৈতিক গুণাবলির দ্বারা এমন একটি আদর্শ স্থাপন করবে; যা শিক্ষার্থীদের সামনে অনুসরণীয় হয়ে থাকবে। এ বিষয়ে মহাত্মা গান্ধী বলেছেন, ‘একজন শিক্ষকের জীবন শিক্ষার্থীদের সামনে খোলা বইয়ের মতো।’ অর্থাৎ শিক্ষার্থীরা বই পড়ে যেমন জ্ঞার্নাজন করে, তেমনি একজন আদর্শ শিক্ষকের জীবনদৃষ্টান্তের দিকে তাকিয়ে জীবনের জন্য শিক্ষালাভ করতে পারে। তাই শিক্ষকদের এ শিক্ষকতা পেশাকে আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করতে হবে। একজন শিক্ষক যতই পণ্ডিত হোক না কেন, তিনি যদি শ্রেণিকক্ষে আন্তরিক না থাকেন তাহলে তার সব চেষ্টা বিফলে যাবে।
শিক্ষককে শিক্ষকতা পেশাকে ভালোবাসতে হবে। পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে আমাদের বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় হয়তো বিভূতিভূষণের ‘আরণ্যক’ উপন্যাসের মটুকনাথের মতো শিক্ষক পাওয়া যাবে না, যিনি শিক্ষকতা পেশাকে অন্তরের অন্তস্থ থেকে ভালোবেসে সব দৈন্যতা আর কষ্টকে মাথায় পেতে নিয়ে শিষ্যদের নিঃস্বার্থভাবে শিক্ষাদান করবেন; কিন্তু শিক্ষকতা পেশা আর শিক্ষার্থীদের অন্তরের অন্তস্থ থেকে ভালোবাসবেন এমন শিক্ষকের খুবই প্রয়োজন। একদল শিক্ষক আছেন যারা শিক্ষার্থীদের সামনে শুধু পাঠ্যবিষয়ের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেন, দ্বিতীয় স্তরের শিক্ষক পাঠ্যবিষয় ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ছাড়াও নতুন নতুন তথ্য ও তত্ত্ব উপস্থাপন করেন; কিন্তু একজন মহান শিক্ষক শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করেন।
একজন মহান শিক্ষক পরিবর্তিত বিশ্বের নিত্যনতুন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করবেন এবং সেই বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি করবেন। শিক্ষকের প্রধান লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদের মধ্যে জানার আগ্রহ সৃষ্টি করা। একজন মহৎ শিক্ষক জ্ঞান অর্জনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব দেবেন। তাছাড়া শিক্ষকদের মধ্যে এমন কিছু নৈতিক আদর্শ ও মূল্যবোধ ধারণ করতে হবে, যা অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ ক্ষেত্রে ডিরোজিও, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ড. আনিসুজ্জামান, ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদসহ অসংখ্য শিক্ষকের দৃষ্টান্ত দেয়া যেতে পারে; কিন্তু শিক্ষক তো মানুষ। তার সামাজিক অবস্থা এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তার কথা সমাজ ও রাষ্ট্রকে বিবেচনা করতে হবে। কারণ একটি ভঙ্গুর শিক্ষক সমাজ দিয়ে একটি নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন আদর্শিক শিক্ষিত জাতি গড়ে তোলা সম্ভব হবে না।
একটি লক্ষণীয় বিষয় হল- এবার যে জেএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হল এবং পিইসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে, তাতে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া বা অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটার খবর পাওয়া যায়নি। এতে আমাদের শিক্ষামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবশ্যই কৃতিত্বের দাবি রাখে। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট কর্তব্যক্তিদের সদিচ্ছা থাকলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার যে আমূল পরিবর্তন সম্ভব, তা এর মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণিত হল। তাই শুধু ফলকেন্দ্রিক পরীক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তে নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন একটি জাতি গড়ার লক্ষ্যে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এবং শিক্ষাগ্রহণের মানস-প্রবণতার একটি নতুন ইতিবাচক আন্দোলন গড়ে উঠুক। সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তি, শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অভিভাবক সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ শিক্ষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদের আগামীর বাংলাদেশ একটি সুন্দর ও সম্প্রীতিময় দেশ হিসেবে গড়ে উঠুক, এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করি।
লেখক: ড. ফাদার হেমন্ত পিউস রোজারিও, সিএসসি : অধ্যক্ষ, নটর ডেম কলেজ, ঢাকা