ফরম পূরণে বাড়তি অর্থ আদায়ের অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক |

২০২০ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিতব্য মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার (এসএসসি) ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে শিক্ষাবোর্ড। তবে অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য প্রাথমিকভাবে প্রধান শিক্ষক ও বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতিকে ডেকে আনা হবে।

সোমবার (১৮ নভেম্বর) এই প্রতিবেদককে বিষয়টি নিশ্চিত করেন আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক।

মু. জিয়াউল হক বলেন, ‘আমরা নিজেদের মতো করে বিদ্যালয়গুলো মনিটরিং করছি। যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এসএসসির ফরম পূরণে বাড়তি অর্থ আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে তাদেরকে বোর্ডে ডাকা হচ্ছে। গতকালও দুটি বিদ্যালয়কে ডাকা হয়েছিল। তবে তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রমাণসহ অভিযোগ থাকে তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

মু. জিয়াউল হক জানান, এখন পর্যন্ত অভিযুক্ত কোনো বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধেই প্রমাণ দিতে পারেনি কেউ।

তবে ঢাকা শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানের এই বক্তব্য ‘সত্য নয়’ বলে জানিয়েছেন অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবক। জেলাভিত্তিক বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়েও এমন বক্তব্য পাওয়া গেছে। অভিযুক্ত স্কুলগুলোতে বেশি অর্থ আদায়ের বিপরীতে শিক্ষার্থীদের কোনো রশিদ না দেয়ায় অভিযোগের প্রমাণ থাকছে না বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার বিদ্যালয়গুলোর বিরুদ্ধে অর্থ আদায়ের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ পাওয়া গেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, কোচিং ফি, বকেয়া বেতনসহ নানা অজুহাতে বিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বোর্ড নির্ধারিত ফি’র চেয়ে অতিরিক্ত হাজারেরও বেশি টাকা দিতে তাদেরকে বাধ্য করা হচ্ছে। তবে এই টাকা আদায়ের বিপরীতে বেশিরভাগ স্কুলই রশিদ দিচ্ছে না।

বেশি অর্থ আদায় করা বিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, খড়মপুর শাহ পীর কল্লা শহীদ উচ্চ বিদ্যালয়, আমোদাবাদ আলহাজ শাহ আলম উচ্চ বিদ্যালয়, নাছরীন নবী পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, দেবগ্রাম সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, মোগড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম পাওয়া গেছে। এছাড়া ফেনী জেলার কয়েকটি বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বিষয়টি নিয়ে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুস ছালামের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘বোর্ডের নির্দেশ অমান্য করে কোনো স্কুলে বাড়তি অর্থ আদায় করা হচ্ছে- এমন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। যদি কোথাও এমনটা হয়ে থাকে তাহলে বোর্ডে অভিযোগ দিলে আমরা ব্যবস্থা নেব। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো অন্যায় সহ্য করা হবে না।’

তবে আখাউড়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শওকত আকবর খান জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র রয়েছে তিন মাসের কোচিং ফি বাবদ সর্বোচ্চ এক হাজার দুইশ টাকা পর্যন্ত নেয়া যাবে। তবে এজন্য শিক্ষার্থীদেরকে অবশ্যই কোচিং করাতে হবে এবং কোন খাতে টাকা নেয়া হচ্ছে সেটি উল্লেখ করে লিখিত রশিদ দিতে হবে।

উল্লেখ্য, কুমিল্লা বোর্ডের পক্ষ থেকে এবার মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের জন্য ১ হাজার ৮৫০ এবং বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের জন্য ১ হাজার ৯৭০ টাকা ফি নির্ধারণ করে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।

এদিকে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের অধীন অনেক বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধেও অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ পেয়েছে । অভিযুক্ত এসব বিদ্যালয়ের বেশির ভাগই পাবনা ও নাটোর জেলার অন্তর্গত। এই দুই জেলার বেশকয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের পাশাপাশি টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করা শিক্ষার্থীদের অর্থের বিনিময়ে পরীক্ষায় বসার সুযোগ করে দেয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এসএসসি পরীক্ষায় ফরম পূরণে মানবিক ও বাণিজ্য বিভাগে ১ হাজার ৮৯০ টাকা এবং বিজ্ঞান বিভাগের জন্য ২ হাজার ৫ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড। কিন্তু এই বোর্ডের অধীন অনেক মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে নির্ধারিত ফি’র চেয়ে ৫০০ থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা বেশি আদায় করেছে বলে জানা গেছে। অভিভাবকরা জানিয়েছেন, অর্থ আদায়ের জন্য এসব প্রতিষ্ঠান পরীক্ষার্থীদেরকে মানসিক চাপও প্রয়োগ করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. মোকবুল হোসেন বলেন, ‘এসব ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পাওয়া না গেলে আমাদের কিছু করার থাকে না। যারা ভুক্তভোগী তারা কোনো কারণে অভিযোগও করেন না। ফলে অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। সরকারের পক্ষ থেকে নজরদারি করা না হলে এমনটা চলতেই থাকবে। মৌখিক অভিযোগ পাওয়া যাবে তবে অন্যায় বন্ধ হবে না।’

ফরম পূরণে বাড়তি অর্থ আদায় বন্ধে আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হকও একই কথা বলেছেন।

উল্লেখ্য, ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি পরীক্ষার অনলাইনে ফরম পূরণ কার্যক্রম গত ৭ নভেম্বর শুরু হয়। ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত বিলম্ব ফি ছাড়া ফরমপূরণ করা গেলেও বিলম্ব ফিসহ ১৮ নভেম্বর থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত এসএসসির ফরম পূরণ করা যাচ্ছে। এতে ১০০ টাকা বাড়তি ফি দিতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025331974029541