ফরাসি ভাষায় প্রকাশিত হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত আত্মজীবনী। মহান স্বাধীনতা দিবস ও বাংলাদেশ-ফ্রান্স কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪৫তম বার্ষিকীতে প্যারিসে ফরাসি ভাষায় এটি প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশ থেকে বইটির ফরাসি সংস্করণ প্রকাশনার সব কর্মকাণ্ড প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়েছে।
স্বাধীনতা দিবসে প্যারিসে ফরাসি প্রতিষ্ঠান জিংকো এডিটর প্রকাশিত আত্মজীবনীর ফরাসি সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন করেন ফ্রান্সে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. শহিদুল ইসলাম।
প্যারিস থেকে পাওয়া খবরে জানা যায়, ফরাসি ভাষায় প্রকাশিত আত্মজীবনীটি ইতোমধ্যে পাঠক সমাজের কাছে সমাদৃত হতে শুরু করেছে। ২৬ মার্চ ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় বইমেলা ‘সালোন লিভর প্যারিস’-এ পাওয়া যাচ্ছে। ২৪ থেকে ২৭ মার্চ চলা এ বইমেলায় বঙ্গবন্ধুর অপ্রকাশিত আত্মজীবনী পাঠকের মধ্যে সাড়া জাগায়। বইটির প্রকাশক মি. রেনালদ মন আশাপ্রকাশ করেছেন, বিশ্বের অন্যতম প্রধান ভাষা ফরাসিতে প্রকাশিত হওয়ায় ফ্রান্সের পাঠক ছাড়াও ফ্রাঙ্কোফোনি বিশ্বের ফরাসি ভাষাভাষী বিশাল পাঠক সমাজও এ গ্রন্থের সঙ্গে পরিচিত হতে পারবেন।
তিনি বলেন, সাহিত্যিক মান ও ঐতিহাসিক মূল্য বিবেচনায় অসমাপ্ত আত্মজীবনী বইটি ফ্রান্সের সাধারণ পাঠক সমাজ, ইতিহাসবিদ ও গবেষকদের কাছে সমাদৃত হবে। বইটির প্রচার বাড়াতে প্যারিস বইমেলা ছাড়াও জুনের প্রথম সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় ‘অ্যামেজিং ট্রাভেলার’ ও অক্টোবরে ‘দি মিটিং অব হিস্ট্রি’ নামের দু’টি গুরুত্বপূর্ণ বইমেলায় পরিবেশন করা হবে। বিশেষ করে দি মিটিং অব হিস্ট্রি বইমেলায় অসমাপ্ত আত্মজীবনীর উপর ফরাসি ইতিহাসবিদ ও গবেষকদের অংশগ্রহণে একটি সেমিনার থাকবে। এছাড়া সাধারণ পাঠকদের হাতে পৌঁছে দিতে বইটি রাখা হবে চারটি স্টলে।
বঙ্গবন্ধুর অপ্রকাশিত আত্মজীবনী ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করেন প্রফেসর ফ্রান্স ভট্টাচারর্য। এর ফরাসি সংস্করণের পাদটিকা লিখেছেন ফরাসি জাতীয় ভাষা ইনস্টিটিউট ইনালকোর বাংলা ভাষা ও সভ্যতার শিক্ষক জেরেমি কদ্রন। বইটির প্রকাশনা, ভাষাগত পরিশুদ্ধতা ও সর্বাঙ্গীন সৌষ্ঠব নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক ফরাসি রাষ্ট্রদূত সার্জ দেগালে, ইনালকোর বাংলা বিভাগের প্রধান ড. ফিলিপ বেনোয়া ও বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ফিলিপ রাত একযোগে কাজ করেছেন। প্যারিসের বাংলাদেশ দূতাবাস ইনালকোর সঙ্গে নানা কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার সুবাদে বইটির অনুবাদ ও প্রকাশের কাজ দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন হয় বলে জানা যায়।
বইটির ভূমিকায় ফ্রান্সের ভূতপূর্ব পররাষ্ট্র মন্ত্রী হুবার্ট ভেদ্রিন লিখেছেন, ‘ভাগ্য ফ্রান্স ও বাংলাদেশকে ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে একে অপরের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে ব্রিটিশ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির বিপক্ষে ফরাসিরা বাঙালির সঙ্গে ছিল। একজন ফরাসি সেনা অফিসার গোলন্দাজ বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন। যুদ্ধে পরাজয়ে বাংলা হারায় স্বাধীনতা। প্রায় ২১৪ বছর পর শেখ মুজিবুর রহমানের হাত দিয়ে বাংলা তার স্বাধীনতা ফিরে পায়।’
ফ্রান্সের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪৫তম বার্ষিকীতে তার এ মূল্যায়ন বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে অভিজ্ঞমহল মনে করছেন।
হুবার্ট ভেদ্রিন ১৯৮৯ সালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেরার বাংলাদেশ সফরে তার সফরসঙ্গী ছিলেন।
বঙ্গবন্ধু ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত কারাগারে বন্দী অবস্থায় এই অমূল্য দলিল রচনা করেন। তার লিখিত এ স্মৃতিকথা ২০১২ সালের ১৮ জুন বাংলায় অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও ইংরেজি অনুবাদে ‘আন ফিনিশড ‘মেমোরিজ’ শিরোনামে প্রকাশিত হয়।