ব্রিটিশ ভারতের বর্তমান বাংলাদেশ ভূখণ্ডের যে ১৭টি জেলা ছিল, তার অন্যতম ফরিদপুর। ১৮৫৭ সালে ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠার আগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির শাসনামলে ১৮১৫ সালে এবং ফরিদপুর জেলা প্রতিষ্ঠার পরপরই এখানকার জনসাধারণের শিক্ষার জন্য ১৮২০ সালে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়; যেটি বর্তমানে ফরিদপুর জিলা স্কুল হিসেবে খ্যাত। এরই শত বছর পরে ১৯২০ সালে অম্বিকা চরণ মজুমদারের প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয় ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজ। অর্থাৎ এ এলাকার মানুষগুলো বহু আগে থেকেই শিক্ষা-সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ফরিদপুরে শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে এলাকার তরুণ যুব সমাজকে আধুনিক ও উন্নত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে একটি অত্যাধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা অত্যাবশ্যক। শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।
পাকিস্তান আমলের ১৭টি জেলার পরবর্তী সময়ে ১৯টি জেলার প্রতিটি জেলা শহরে একমাত্র ফরিদপুর শহর ব্যতীত বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এমনকি ওই সময়ের অনেক মহকুমা শহরে, বর্তমানে যেগুলো জেলা শহর হিসেবে পরিচিত, সেখানেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। টাঙ্গাইল, পটুয়াখালী, জামালপুর, নেত্রকোনা, গোপালগঞ্জ, ত্রিশাল, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সরকার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতিবিজড়িত ত্রিশালে তার নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। নারী শিক্ষার অগ্রদূত বেগম রোকেয়ার জন্মভূমিতে তারই নামে রংপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। কিন্তু পল্লী কবি জসীম উদ্দীনের নামে তো দূরের কথা, তাঁর জন্মস্থান, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপর্ব ও কাব্যচর্চার চরণভূমি ফরিদপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় নেই। এমন পরিস্থিতিতে ফরিদপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সময়ের দাবি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক অনেক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছেন ফরিদপুর শহরে বসে। এমনকি ফরিদপুর জেলখানায় বঙ্গবন্ধু তাঁর জীবনের অনেকটা সময় অতিবাহিত করেছেন। আমরা জানি, বৃহত্তর ফরিদপুরের গোপালগঞ্জে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গোপালগঞ্জ একসময় অত্যন্ত পশ্চাৎপদ একটি জনপদ ছিল এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল অত্যন্ত খারাপ। সেখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা খুবই জরুরি ছিল। কিন্তু গোপালগঞ্জে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, ফরিদপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিকল্প হতে পারে না। এ বিষয়ে কিছুটা ব্যাখ্যা দেওয়া যেতে পারে। যাতায়াত বা যোগাযোগের দূরত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার নেপথ্যে একটি বড় কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। ফরিদপুর থেকে গোপালগঞ্জের দূরত্ব প্রায় ৮০ কিলোমিটার। আমরা জানি, কুষ্টিয়ায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, যা রাজবাড়ী থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি সদরপুর, নগরকান্দা, সালথা, বোয়ালমারী, মধুখালী, কামারখালী, গোয়ালন্দ, চরভদ্রাসন, ভাঙ্গা, বালিয়াকান্দা, পাংশা, রাজবাড়ী ইত্যাদি এলাকাসহ মাগুরার পূর্ব অংশের বিরাট এলাকার অগণিত শিক্ষার্থী, যারা উচ্চশিক্ষায় আগ্রহী, তাদের অনেকেই নিকটবর্তী একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অধিক দূরত্বের ফলে তাদের অনেকেই উচ্চশিক্ষার স্বাদ গ্রহণ করতে পারছে না।
ফরিদপুর জিলা স্কুল প্রতিষ্ঠার ১০০ বছর পরে রাজেন্দ্র কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজেন্দ্র কলেজ প্রতিষ্ঠার ১০০ বছর পরেও কি এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না? এ প্রশ্ন পুরো ফরিদপুরবাসীর। বঙ্গবন্ধুতনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফরিদপুর ও তার সংলগ্ন এলাকাবাসীর জন্য দ্রুত ফরিদপুরে একটি আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন- এ প্রত্যাশা ফরিদপুরবাসীর। একসময় সাহিত্য-সংস্কৃতি, রাজনীতি ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চার ক্ষেত্র এবং একদা অগ্রবর্তী ফরিদপুর তার হূতগৌরব আবার ফিরে পেতে পারে নতুন একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে। সরকার ফরিদপুরবাসীর আবেদনে সাড়া দেবে। আমরা আশা করি, ফরিদপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন অধরা নয়, অচিরেই বাস্তবে রূপলাভ করবে।
লেখক: ড. মো. ফরহাদ হোসেন, অধ্যাপক, পরিসংখ্যান বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়