দৈনিকশিক্ষাডটকম, চট্টগ্রাম: এইচএসসির ফল কেলেঙ্কারির ঘটনা প্রমাণিত হওয়ার পরও কর্মচারীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো পদোন্নতি দিয়েছে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে। তাকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পদ থেকে পদোন্নতি দিয়ে করা হয়েছে বোর্ডের সচিব। পদোন্নতি পাওয়া কর্মচারীর নাম নারায়ণ চন্দ্র নাথ। নিয়ম অনুযায়ী, শিক্ষা বোর্ডে ডেপুটেশনে যাওয়া কর্মকর্তারা তিন বছরের বেশি সময় থাকতে না পারলেও তিনি দায়িত্ব পালন করছেন প্রায় ছয় বছর। তার বিরুদ্ধে ভুয়া বিলে বোর্ডের ৭ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। নানা অভিযোগ থাকলেও আমলে নিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন: শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তার ছেলের খাতা পুনঃনিরীক্ষার আবেদনের রহস্য
চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক কলেজে ভর্তির যোগ্যতা না থাকা ছেলের এইচএসসির ফলে জিপিএ-৫ পাওয়া নিয়ে নতুন বিতর্কে জড়িয়েছেন শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তা নারায়ণ চন্দ্র নাথ। ‘অজ্ঞাত’ এক ব্যক্তি ছেলের ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করায় বিষয়টি সামনে আসে। এ নিয়ে নারায়ণ চন্দ্র নাথের স্ত্রী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
সূত্র জানায়, ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের এইচএসসির প্রকাশিত ফলে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে অসঙ্গতি ধরা পড়ে। কয়েকজন শিক্ষার্থী ২০০ নম্বরের পরীক্ষায় নির্ধারিত নম্বরের চেয়েও বেশি নম্বর পায়। এ ছাড়া দুপুরে ফল প্রকাশের পরপর ওয়েবসাইটেু দেওয়া নম্বর ফর্দ সন্ধ্যা গড়াতেই পালটে যায়। ওই বছর চট্টগ্রাম কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি উত্তীর্ণ হওয়া এক শিক্ষার্থীর নম্বর ফর্দে দেখা যায়, পদার্থ বিজ্ঞানে মোট ২০০ নম্বরের মধ্যে প্রাপ্ত নম্বর লেখা রয়েছে ২১৮! একই ঘটনা ঘটেছে ওই শিক্ষার্থীর উচ্চতর গণিতের বিষয়েও। আরও একাধিক শিক্ষার্থীর নম্বর ফর্দে এমন অস্বাভাবিক বেশি নম্বর দেখা যায়। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশের ক্ষেত্রে এমন নম্বর পালটে যাওয়ার ঘটনা ঘটলে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন অভিভাবকরা। এ নিয়ে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ১ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের উপসচিব আলমগীর হুছাইন স্বাক্ষরিত চিঠিতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে দায়ী করা হয়।
আরও পড়ুন: শিক্ষা বোর্ড কর্মকর্তার ছেলের অদ্ভূতুড়ে আবেদন
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘২০২২ খ্রিষ্টাব্দের ১১ ফেব্রুয়ারি ৫টা থেকে রাত ১০টা ১০ মিনিট পর্যন্ত ফলাফল প্রসেসিং রুমের কম্পিউটারের টেবুলেশন অনিরাপদ রাখায় ফলাফল তৈরিতে সন্দেহ সৃষ্টি করে, যা অনাকাঙ্ক্ষিত ফলাফল সংশোধনের বিষয়টি বোর্ডের নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটিয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এবং আইটি টিমের সদস্যরা নিজেরাই সংশোধনের কাজ করতে গিয়ে দু’ধরনের নম্বর ফর্দ প্রাপ্ত হওয়ায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করে। যেহেতু পরীক্ষার ফল তৈরি সংক্রান্ত সব দায়দায়িত্ব পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের, সেহেতু এর সম্পূর্ণ দায় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের ওপর বর্তায়।’ এ ঘটনায় বোর্ডের সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট কিবরিয়া মাসুদ খানের বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালনে অবহেলা প্রমাণিত হওয়ায় বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ক্যাডার কর্মকর্তা হওয়ায় বিষয়টি মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারভুক্ত বলে এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। ওই বছরের ২৫ জুলাই চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুস্তফা কামরুল আখতার স্বাক্ষরিত চিঠিতে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে পাঠানো হয়। তবে গত বছরের ১৯ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ সরকারি কলেজ-২ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব রেবেকা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে সচিব হিসাবে পদায়ন করা হয়েছে। এর আগে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৫ নভেম্বর চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের উপপরিচালক (হিসাব ও নিরীক্ষা) থেকে নারায়ণ চন্দ্র নাথ পদোন্নতি পেয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হন।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে অনিয়মে বেপরোয়া নারায়ণ
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব অধ্যাপক আবদুল আলীম বলেন, ‘ফল কেলেঙ্কারির ঘটনার সময় আমি বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ছিলাম। ফলের অসঙ্গতি পাওয়ায় মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বোর্ডের একজন স্থায়ী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের বিষয়ে মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছিল। তখন নতুন চেয়ারম্যান যোগ দিয়ে তা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিলেন। এরপর কেন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি তা মন্ত্রণালয়ের বিষয়। তাছাড়া ডেপুটেশনে সাধারণত তিন বছরের বেশি কাউকে শিক্ষা বোর্ডে রাখা হয় না। অনেক দক্ষ ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তাকে তিন বছরের বেশি হওয়ায় বদলি করা হয়েছে।’
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সচিব নারায়ণ চন্দ্র নাথ বলেন, ‘পদোন্নতির বিষয় মন্ত্রণালয় জানে। এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই। তাছাড়া ছেলের পুনঃনিরীক্ষণ বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করছে। কে বা কারা আবেদন করেছে সেটা তদন্তের পর জানা যাবে।’