চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডফল জালিয়াতি: তদন্তের আলামত নষ্টের অভিযোগ সচিবের বিরুদ্ধে

দৈনিক শিক্ষাডটকম, চট্টগ্রাম |

দৈনিক শিক্ষাডটকম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সচিব প্রফেসর নারায়ণচন্দ্র নাথ এবার নিজের বিরুদ্ধে চলা তদন্তের আলামত নষ্ট করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু তাই নয়, নিজের বিরুদ্ধে চলা তদন্ত দীর্ঘায়িত করতে তদবির চালাচ্ছেন। এ জন্য বারবার রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করছেন তিনি।  গত ১ ফেব্রুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে তার বিরুদ্ধে ওঠা ফলাফল কেলেঙ্কারি, ছেলের ফলাফল জালিয়াতির অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে বোর্ডের সাবেক এই পরীক্ষা নিয়ন্ত্রককে স্বপদে বহাল রেখে অভিযোগের তদন্ত চালাতে বলায় বোর্ডজুড়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ বিষয়টিকে রহস্যজনক বলেও মন্তব্য করেছে। 

তাদের দাবি, তাকে বরখাস্ত না করে তদন্ত করা না করা সমান কথা। এতে তদন্তে প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ রয়েছে তার। যেহেতু বোর্ডের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও হচ্ছেন তিনি।

সেই আশঙ্কাকে মজবুত করছে আরও একটি অভিযোগ। সেই অভিযোগ হলো, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সচিব নারায়ণচন্দ্র নাথ তার বিরুদ্ধে চলা তদন্তের মূল্যবান আলামত নষ্ট করছেন। ইতোমধ্যে বেশ কিছু ফাইল তিনি ডিলিট করেছেন। এ কাজের সুবিধার্থে তিনি এর আগে ফলাফল জালিয়াতিতে অভিযুক্ত ও শাস্তিপ্রাপ্ত বোর্ডের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট কিবরিয়া মাসুদ খানকে দৈনিক ২ হাজার টাকা বেতনে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি তাকে নিয়ে ফলাফল তৈরির গোপন কক্ষে যাচ্ছেন এবং আলামত নষ্টের চেষ্টা করছেন।

এর আগে ২০২১ চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ফলাফলে জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। সে সময় সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট কিবরিয়া মাসুদ খানের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। তার ওই কর্মকাণ্ডে বোর্ডের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয় এবং তিনি সরকারি কর্মচারী চাকরি বিধিমালা অনুসারে অসদাচরণ ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের মতো অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন বলে জানানো হয়। ২০২২ জুলাইয়ে শাস্তিস্বরূপ কিবরিয়া মাসুদ খানের বেতন এক বছরের জন্য বিদ্যমান গ্রেডের নিম্নতর গ্রেডে অবনমিত করা হয়। ইতোপূর্বে জালিয়াতিতে শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে আবারও গোপনীয় কাজে সমালোচনার মুখে নিয়োগ দেওয়াকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও তদন্ত প্রভাবিত করতেই করা হয়েছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা বলেন, সচিব নারায়ণচন্দ্র নাথ আলামত নষ্ট করতেই তৎপরতা শুরু করেছেন। এ জন্য ফলাফলের কাজে নিয়োজিত মালেক নামে এক ব্যক্তির ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী হওয়ায় অন্যজনকে নিয়োগ দিতে হচ্ছিল। কিন্তু তিনি উপযুক্ত ব্যক্তি বাছাই না করে নিজের পছন্দের লোক কিবরিয়া মাসুদ খানকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেন। তিনি আরও বলেন, মূলত তার বিরুদ্ধে চলা তদন্তের আলামত নষ্ট করা হচ্ছে। ওএমআর নষ্ট করার চেষ্টায় আছেন এবং বিতর্কিত খাতাগুলোতে কিছু একটা করতে চাইছেন তিনি। 

এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা বোর্ডের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সচিব প্রফেসর নারায়ণচন্দ্র নাথ বলেন, 'আমরা নতুন কাউকে নিয়োগ দিতে পারিনি। তাই তাকেই নিয়োগ দিয়েছি। শাস্তি পাওয়ার পরেও তাকে এর আগের দুই বোর্ড চেয়ারম্যানও এই কাজে নিয়োগ দিয়েছেন। তা ছাড়া তাকে নিয়োগ তো মন্ত্রণালয়ের মতামত নিয়েই দেওয়া হয়েছে। আর তার বিরুদ্ধে এর আগে সরাসরি জালিয়াতিতে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আমার বিরুদ্ধে চলা তদন্তে প্রভাবিত করব কেন? আলামত নষ্ট করার অভিযোগও মিথ্যা।' তিনি দাবি করেন, শিক্ষা বোর্ডে একটি চক্র তার বিরুদ্ধে বদনাম রটাচ্ছে।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও বর্তমানে সচিব এবং চেয়ারম্যানের চলতি দায়িত্বে থাকা প্রফেসর নারায়ণচন্দ্র নাথের ছেলে নক্ষত্র দেবনাথ ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ- পেট্রো উত্তীর্ণ হন। শুধু বাংলা বিষয় ছাড়া সব বিষয়ে তিনি জিপিএ-৫ পান। কিন্তু চতুর্থ বিষয়ে জিপিএ-৫ পাওয়ায় সামগ্রিক ফলাফলে তিনি জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। কিন্তু বাংলায় জিপিএ-৫ না পাওয়ায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে বোর্ডের নিয়মানুযায়ী পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করতে গেলে দেখেন কে বা কারা আগে থেকে সব বিষয়ের জন্য আবেদন করে রেখেছেন। পরে ছেলের পক্ষে তার মা বনশ্রী নাথ পাঁচলাইশ থানায় গত ৪ ডিসেম্বর জিডি করেন। সেই জিডিতে কে পুনর্নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেছেন তা বের করার আবেদন জানানো হয়। পাঁচলাইশ থানা- পুলিশ তদন্ত করে দেখতে পায় পুনর্নিরীক্ষণের আবেদনে রেফারেন্স মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে, সেটা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান প্রফেসর মোহাম্মদ আবদুল আলীমের। এ ঘটনায় প্রফেসর আবদুল আলীমকে পুলিশ ডেকেছিল। তিনি তখন বলেছিলেন, 'কে বা কারা আমার মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে আবেদন করেছেন, আমি সেটা জানি না।'

বরং তিনি প্রফেসর নারায়ণচন্দ্র নাথকে দায়ী করে পাল্টা আরেকটি জিডি করেছিলেন কোতোয়ালি থানায়। পরে পুলিশ জিডির রিপোর্ট সাবমিট করার পর সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটে মামলা করেন বনশ্রী নাথ। এতে আবদুল আলীম ও ইদ্রিস আলীকে আসামি করা হয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়মমাফিকভাবে জানানোর আহ্বান মাহফুজ আলমের - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়মমাফিকভাবে জানানোর আহ্বান মাহফুজ আলমের জামি’আ মাদরাসা দখলমুক্ত চেয়ে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা - dainik shiksha জামি’আ মাদরাসা দখলমুক্ত চেয়ে প্রধান উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা ৭ কলেজ নিয়ে পরিকল্পনা জানালেন শিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha ৭ কলেজ নিয়ে পরিকল্পনা জানালেন শিক্ষা উপদেষ্টা ই-রিকুইজিশনের সংশোধন অপশন চালু - dainik shiksha ই-রিকুইজিশনের সংশোধন অপশন চালু পদোন্নতি নিয়ে যে ব্যাখ্যা দিলো ইউজিসি - dainik shiksha পদোন্নতি নিয়ে যে ব্যাখ্যা দিলো ইউজিসি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কমিটি সংক্রান্ত শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা ছাত্রাবাস খোলার দাবিতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ - dainik shiksha ছাত্রাবাস খোলার দাবিতে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ ট্রাম্প প্রশাসনে শিক্ষামন্ত্রী হচ্ছেন লিন্ডা ম্যাকমোহন - dainik shiksha ট্রাম্প প্রশাসনে শিক্ষামন্ত্রী হচ্ছেন লিন্ডা ম্যাকমোহন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0056929588317871