দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক: সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিলো। পরীক্ষার সময়ই প্রশ্নফাঁস নিয়ে অভিযোগ পাওয়া যায়। ইতিমধ্যে পরীক্ষার ফলও প্রকাশ হয়েছে। এতে ৪৬ হাজার ১৯৯ জন প্রার্থীকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য নির্বাচিত করা হয়। আর এই ফাঁস হওয়া প্রশ্নে অনেকে পরীক্ষা দিয়েছে। এ কারণে প্রকাশিত ফল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ফাঁস হওয়া প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়ে কি কেউ উত্তীর্ণ হয়েছে?
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান শীর্ষ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, কোনো প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি। পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরীক্ষার পর এমন অভিযোগ গ্রহণযোগ্য হতে পারে না বলেও জানান তিনি। কিন্তু ‘প্রশ্নফাঁস চক্র’ পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর প্রাইমারির তৃতীয় ধাপে প্রশ্নফাঁস হয়েছে বলে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে আসামিরা।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশিদ এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলছেন, তৃতীয় ধাপের প্রশ্নপত্র ফাঁসচক্রের কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ বিষয়ে রমনা থানায়ও মামলা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত পরীক্ষার্থী হলেন মনীষ গাইন, পংকজ গাইন ও লাভলি মন্ডল। এই তিন জনকে আদালতে গত ২৫ এপ্রিল প্রশ্নপত্র ফাঁসে নিজেদের সম্পৃক্ততা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। অন্যদিকে প্রশ্নপত্র সমাধানকারী ছিলেন দুই জন। একজন জ্যোতির্ময় গাইন ও অন্যজন সুজন চন্দ্র রায় ।
ডিবি পুলিশ বলছে, মাদারীপুর, রাজবাড়ি, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর অঞ্চলের প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের হোতা অসীম গাইন। তিনি ১০-১৪ লাখ টাকার বিনিময়ে পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে চুক্তি করেন। যাদের বয়স শেষের দিকে, তাদেরকে বিশেষভাবে টার্গেট করতেন।
ডিবি পুলিশ বলছে, প্রশ্নপত্র পাওয়ার পর তা দ্রুত সমাধানের জন্য সহায়তা করেন অসীমের আপন ভাইয়ের ছেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের মেধাবী ছাত্র জ্যোতির্ময় গাইন। জ্যোতির্ময় গাইন তার সঙ্গে আইন বিভাগের আরো দুই জন সহপাঠী সুজন চন্দ্র রায় এবং বেনু লাল দাস এই তিন জন মিলে প্রশ্নপত্রের দ্রুত সমাধান করে। সমাধানকৃত প্রশ্নের উত্তর অসীম গাইন কর্তৃক চুক্তিবদ্ধ পরীক্ষার্থীদের মোবাইল নম্বরে পাঠিয়ে দেন। পরীক্ষার্থীরা লুকিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে মোবাইল নিয়ে যেত।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রশ্নফাঁসকারী চক্র স্বীকার করার কারণে প্রকাশিত পরীক্ষার ফল নিয়ে বিতর্ক উঠবে এটাই স্বাভাবিক। পরীক্ষার সময়ই যখন প্রশ্নফাঁস নিয়ে অভিযোগ ছিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রণালয়ের উচিত ছিল বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত করা। প্রয়োজনে পরীক্ষা বাতিল করা। কিন্তু তারা তা করেনি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী রুমানা আলী দেশের বাইরে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া যায়নি। আর সচিব ফরিদ আহাম্মদ ফোন রিসিভ করেননি। তবে সচিবের পক্ষে জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, আমরা এখনো বলছি কোনো প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার তৃতীয় ধাপের (তিনটি পার্বত্য জেলা ছাড়া ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের ২১টি জেলা) লিখিত পরীক্ষার সংশোধিত ফল গত সোমবার প্রকাশ করা হয়। আর এই পরীক্ষা ২৯ মার্চ শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত জেলা পর্যায়ে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।